Print Date & Time : 16 November 2025 Sunday 2:41 am

চাঁদাবাজি নির্মূলে রাজনৈতিক অঙ্গীকার প্রয়োজন

পবিত্র রমজান মাসে চাঁদাবাজির মহোৎসব হয় প্রতি বছর। এ বছরও শুরু হয়েছে। ট্রাক থেকে পণ্য নামাতে চাঁদা দিতে হয়। আবার ট্রাকে পণ্য ওঠাতে চাঁদা দিতে হয়। পথে পথে বিভিন্ন চৌকিতে বিভিন্ন পরিচয়ে চাঁদাবাজি হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদেরও চাঁদাবাজদের সঙ্গে ‘সংশ্লেষ’ রয়েছে। এটিই বাস্তবতা!

এবারও রমজান উপলক্ষে চাঁদাবাজদের তৎপরতা বেড়েছে। আসন্ন রমজানে নিত্যপণ্যের উৎপাদন, আমদানি, মজুত, সরবরাহ এবং মূল্য পরিস্থিতি পর্যালোচনার জন্য মতবিনিময় সভা করেছে এফবিসিসিআই। বুধবার রাজধানীর মতিঝিলে ফেডারেশন ভবনের মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সভায় ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি বা এফবিসিসিআইয়ের নেতারা বিভিন্ন দাবি তুলেছেন। এর উল্লেখযোগ্য হলো পবিত্র রমজান মাসে নিত্যপণ্যের দাম সহনীয় রাখতে করপোরেট কোম্পানিগুলোকে ঠিকমতো পণ্য সরবরাহ করতে হবে। পাশাপাশি এসব প্রতিষ্ঠানের ওপর সরকারের নজরদারিও রাখতে হবে। এ ছাড়া চিনি, খেজুর ও ফলমূলের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে হলে আমদানি শুল্ক যৌক্তিক করা জরুরি। একই সঙ্গে চাঁদাবাজি বন্ধেও সরকারকে কার্যকর ভূমিকা নিতে হবে।

মতবিনিময় সভায় একজন ব্যবসায়ী নেতা বলেন, ‘করপোরেট ব্যবসায়ীরা সাধারণ মানুষদের শকুনের মতো শোষণ করছেন। তিন টাকার মোড়ক দিয়ে পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে ৪০ টাকা। অন্তর্বর্তী সরকার এ ক্ষেত্রে কোনো ভূমিকা রাখতে পারেনি।

এর আগে গত মাসে অর্থ উপদেষ্টা বলেছেন, দেশে চাঁদাবাজির কারণে পণ্যমূল্য বাড়ছে। অন্তর্বর্তী সরকার কাউকে ধরে শাস্তি দেয়ার নীতিতেও নেই। রাজনৈতিক সরকার ছাড়া চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। তিনি বলেছেন, গত বছরের ৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর নানা পক্ষ চাঁদাবাজিতে জড়িয়েছে। আগে যেখানে এক টাকা চাঁদা নেয়া হতো, এখন সেখানে নেয়া হয় দেড় থেকে দুই টাকা। আগে যারা ছিল, তারাও চাঁদাবাজির পেছনে আছে। যারা চাঁদাবাজি করে, তারাই আবার ব্যবসায়ী সংগঠনের সদস্য।

আমরা দুঃখের সঙ্গে লক্ষ করেছি, নিজদলের চাঁদাবাজদের কমবেশি সব দলই প্রশ্রয় দেয়। নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির অন্যতম কারণ চাঁদাবাজি। কোথায় নেই চাঁদাবাজি! উৎপাদনস্থল থেকে শুরু করে বাজারে পৌঁছানো পর্যন্ত পথে দফায় দফায় চাঁদা দিতে হয়। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে চাঁদাবাজির উৎপাত কিছুটা কমলেও তা চালুর ক্ষেত্র তৈরিতে সুযোগসন্ধানীরা বসে নেই।

কাউকে দীর্ঘ মেয়াদে চাঁদাবাজি করতে হলে তাকে কোনো একটি রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় থাকতে হয়। চাঁদাবাজি বৈধ পেশা নয়। এটি ওপেন সিক্রেট যে, সব চাঁদাবাজই কোনো প্রভাবশালী ব্যক্তি বা বড় দলের লোক। সংশ্লিষ্ট ওই দলের নেতাই এ অবৈধ চাঁদার টাকাটা পান; আর যারা চাঁদা তোলেন, তারা মূলত দৈনিক বা মাসিক ভিত্তিতে নিয়োজিত শ্রমিক। চাঁদাবাজি নির্মূলে রাজনৈতিক দলগুলোর ভূমিকাই মুখ্য হলেও রাজনৈতিক সরকার এলে চাঁদাবাজি নির্মূল হবে, এটিও বলা যায় না। তাই সুস্পষ্ট রাজনৈতিক অঙ্গীকারের মাধ্যমে চাঁদাবাজি নির্মূলের কথা ভাবতে হবে।