Print Date & Time : 21 November 2025 Friday 5:52 am

চাকরির সন্ধানে যশোরে হাজারো যুবকের ঢল

প্রতিনিধি, যশোর : হাতে রঙিন খাম, চোখে একরাশ স্বপ্ন। সকাল না হতেই যশোর কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের মাঠে ভিড়ে ঠাঁসা হয়ে যায় হাজারো চাকরিপ্রত্যাশীর পদচারণায়। যেন এক নবজাগরণের মেলা-যেখানে কাজ খুঁজতে নয়, ভবিষ্যৎ গড়তে ছুটে এসেছে তরুণ প্রজš§। গতকাল আয়োজিত দিনব্যাপী এই চাকরি মেলা আয়োজন করেছে যশোর কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও রাইটস যশোর। সহযোগিতায় ছিল উইনরক ইন্টারন্যাশনালের ‘আশ্বাস প্রকল্প’। মানবপাচারের শিকার সারভাইভারদের পুনর্বাসনকে কেন্দ্র করে হলেও মেলা পরিণত হয়েছে সব বেকার যুবকের জন্য এক বড় সুযোগের জায়গায়।

মাঠে দেখা যায়, কারও হাতে বাদামি-সাদা-হলুদ খাম, কারও হাতে সদ্য লেখা বায়োডাটা। কেউ স্টলের সামনে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে, কেউ আবার ঘাসের ওপর বসে শেষ মুহূর্তে সিভি ঠিকঠাক করছেন।

যশোরের সাতমাইলের কৃষক পরিবারের ছেলে পল্লব প্রথমবারের মতো চাকরির মেলায় এসে জমা দেন ছয়টি সিভি। কৃষিকাজে বাবাকে সাহায্য করা ছাড়া পেশাগত অভিজ্ঞতা নেই। তবু আশাবাদী পল্লব বলেন, ‘এত চাকরির সুযোগ একসঙ্গে পাওয়া যায় না। বাড়ির পাশে মেলায় কোম্পানি এসেছে-দৌঁড়ানোর ঝামেলাও নেই। চেষ্টা করে দেখলাম।’

মেলায় অংশ নেয় দেশের বিভিন্ন খাতের ২০টি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। স্টলগুলোতে ঝুলছে চাকরির তালিকা, যোগ্যতা, বেতন কাঠামো-সবই চোখে পড়ার মতো।

আরএফএল গ্রুপ দুপুর ১২টার মধ্যে পেয়েছে প্রায় ২০০ সিভি; সেখান থেকে বেছে ৫০ জনকে সঙ্গে সঙ্গেই নিয়োগ দেয়া হয়। দায়িত্বে থাকা সহকারী  ম্যানেজার দেবাশীষ সরদার জানান, ‘সেলস, সার্ভিস টেকনিশিয়ান ও ড্রাইভিং-এই তিন বিভাগে সবচেয়ে বেশি নিয়োগ দেয়া হয়েছে।’

আয়েশা আবেদ ফাউন্ডেশনও দিয়েছে একাধিক নারী কর্মীকে নিয়োগ। প্রতিষ্ঠানটির অ্যাডমিন অফিসার মাসুদুজ্জামান বলেন, ‘নারীদের অংশগ্রহণ বেশি। তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন মানবপাচারের শিকারÑতাদের পুনর্বাসনই আমাদের প্রধান লক্ষ্য।’

রাইটস যশোরের নির্বাহী পরিচালক বিনয় কৃষ্ণ মল্লিক জানান, ‘দারিদ্র্য মানবপাচারের সবচেয়ে বড় কারণ। তাই সারভাইভারদের কর্মসংস্থানে অগ্রাধিকার দিতেই এই মেলার আয়োজন। পাশাপাশি সাধারণ যুবকরাও উপকৃত হচ্ছেন।’

প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তারা বলছেন, মেলা তাদের জন্যও সুবিধাজনক। কোনো বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই একসঙ্গে বহু আবেদনকারী পর্যবেক্ষণের সুযোগ পাচ্ছেন। এতে তাৎক্ষণিক প্রাথমিক বাছাই সম্ভব হচ্ছে।

বারান্দিপাড়া থেকে আসা মাস্টার্স ছাত্র তানজিনা আফরিন বলেন, ‘একসঙ্গে এত প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ-এটাই এক বড় অভিজ্ঞতা। চাকরি না পেলেও শেখার মতো অনেক কিছু মিলেছে।’

সকালে মেলার উদ্বোধন করেন যশোরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) খান মাসুম বিল্লা। সভাপতিত্ব করেন কেন্দে র অধ্যক্ষ প্রকৌশলী গাজী ইকফাত মাহমুদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন রাইটস যশোরের নির্বাহী পরিচালক বিনয় কৃষ্ণ মল্লিক ও উইনরক ইন্টারন্যাশনালের সিনিয়র ম্যানেজার জিএফ রব্বানী প্রমুখ।