রামিসা রহমান : গত সপ্তাহের তুলনায় সবজির দাম কমেছে ১০ থেকে ১৫ টাকা। সরবরাহ ভালো থাকায় কমেছে সবজি, মাছ ও ডিমের দাম। তবে এখনও নিম্নআয়ের মানুষরা চাহিদা অনুযায়ী পণ্য কিনতে পারছেন না বেশি দামের কারণে।
রাজধানীর কারওয়ান বাজার, মালিবাগ, খিলগাঁও রেলগেট বাজার ঘুরে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে গতকাল শুক্রবার এ তথ্য জানা গেছে।
গত সপ্তাহে কাঁচামরিচ বিক্রি হয়েছে ২৪০ টাকা দরে। বর্তমানে কাঁচামরিচ এর দাম কেজি দরে ২০০ টাকা, তাহলে মরিচের কেজি ৪০ টাকা কমছে।
বর্তমানে বাজারে শীতকালীন সবজি আসতে শুরু করায় দাম কমতে শুরু করছে। এখন বাজারে প্রতি কেজি দেশি শসা ৬০ টাকা, বেগুন ৮০ থেকে ১০০ টাকা, করলা ৮০ টাকা, দেশি গাজর ১০০ থেকে ১২০ টাকা, চিচিঙ্গা ৭০ টাকা, বরবটি ৯০ থেকে ১০০ টাকা, ঢ্যাঁড়শ ৬০ টাকা, মিষ্টিকুমড়া ৪০ টাকা, কাঁচা পেঁপে ৩০ টাকা, পটোল ৭০ টাকা, কাঁকরোল ৭০ টাকা, কচুরমুখী ৬০ টাকা, মুলা ৮০ টাকা, টমেটো ১৫০ টাকা, সিম ১৮০ থেকে ২০০ টাকা এবং প্রতি পিস জালি কুমড়া ও লাউ ৬০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বর্তমানে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭৫ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে। আলু বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ টাকায়। রসুন ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা এবং দেশি আদা ১৮০ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মুদি বাজারে চালসহ অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম স্থিতিশীল।
গত সপ্তাহের তুলনায় এ সপ্তাহে কিছু মাছের দাম কিছুটা কম। বাজারে এখন মাঝারি সাইজের চাষ করা রুই মাছ বিক্রি হচ্ছে ৩৮০ থেকে ৪৫০ টাকায়। প্রতি কেজি চাষ করা পাঙাস ২০০ টাকা, তেলাপিয়া ২২০ টাকা, মাঝারি আকারের কৈ ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা, দেশি শিং ৭০০ টাকা, বড় আকারের পাবদা ৫০০ টাকা, চিংড়ি ৮০০ টাকা, দেশি পাঁচমিশালি ছোট মাছ ৬০০ টাকা এবং এক কেজি বেশি ওজনের ইলিশ মাছ বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ২০০ থেকে ২ হাজার ৪০০ টাকায়।
বর্তমানে বাজারে এখন প্রতি ডজন ফার্মের মুরগির ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকায়, যা গত সপ্তাহে ছিল ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকা। সে হিসাবে প্রতি ডজন ডিমের দাম কমেছে ১৫ থেকে ২০ টাকা।
এ সপ্তাহে বাজারে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা, সোনালি মুরগি ২৮০ থেকে ৩৩০ টাকা, গরুর মাংস ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা এবং খাসির মাংস ১ হাজার ১৫০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
রাজধানীর মালিবাগ কাঁচাবাজারে কেনাকাটা করতে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী জহির ইলিয়াস শেয়ার বিজকে বলেছেন, এখন বাজারে যা অবস্থা, সঞ্চয় যা ছিল তা এখন ভেঙে খেতে হচ্ছে। আমাদের মতো মধ্যবিত্ত মানুষের জন্য চাহিদা অনুযায়ী এখন বাজার করা কষ্টকর। মুদিবাজার করার পর মাছ মাংস, ডিম ও সবজি কেনার জন্য তেমন টাকা থাকে না। সরকারের উচিত বর্তমান বাজারের কথা মাথায় রেখে নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষের জন্য কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়া।
রাজধানীর খিলগাঁও রেলগেট কাঁচাবাজারের সবজি বিক্রেতা মো. সোহাগ শেয়ার বিজকে বলেন, বাজারে শীতকালীন সবজি আসতে শুরু করছে। আগামী কয়েক সপ্তাহে সবজির দাম কমবে বলে মনে হচ্ছে। গত সপ্তাহের তুলনায় এ সপ্তাহে সবজির অনেকটাই কমেছে। সরবরাহ ভালো থাকলে দাম আরও কমবে। বর্তমানে আমাদের এই বাজারে ৬৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। অন্যান্য সব জিনিস অন্য বাজারের তুলনায় বেশ কিছুটা কমে পাওয়া যাচ্ছে।
এক বছরে সবজির দরে পার্থক্য: গতকাল রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতিকেজি বেগুন ৮০ থেকে ৯০ টাকা, ঢ্যাঁড়শ ৭০ থেকে ৮০ টাকা, পটোল ৮০ থেকে ১০০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০ থেকে ৮০ টাকা, ধুন্দল ৮০ থেকে ১০০ টাকা, বরবটি ১০০ টাকা, কচুরছড়া ৬০ থেকে ৭০ টাকা, লতি ৮০ থেকে ১০০ টাকা, মিষ্টিকুমড়া ৫০ থেকে ৬০ টাকা, কাঁচামরিচ ২০০ থেকে ২৪০ টাকা, টমেটোর দাম ছিল ১৬০ থেকে ২০০ টাকা, দেশি গাজর ৮০ টাকা, চায়না গাজর ১০০ থেকে ১২০ টাকা, শসা ৭০ টাকা, দেশি শসা ১০০ টাকা, করলা ৯০ থেকে ১০০ টাকা, কাঁকরোল ৮০ টাকা, পেঁপে ৩০ টাকা, প্রতি পিস লাউ ৮০ থেকে ১০০ টাকা, চালকুমড়া ৭০ থেকে ৮০ টাকা, লেবু হালিপ্রতি ১০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে।
গত বছরের একই সময়ে এসব সবজির দাম ছিল- প্রতি কেজি পটোল ৬০ থেকে ৮০ টাকা, কাঁচামরিচ ২৮০ থেকে ৩২০ টাকা, ভারতীয় টমেটো ১৩০ থেকে ১৫০ টাকা, দেশি গাজর ১০০ টাকা, চায়না গাজর ১৫০ টাকা, বেগুন ৮০ থেকে ১২০ টাকা, শসা ৬০ থেকে ৭০ টাকা, করলা ৭০ থেকে ৮০ টাকা, কাঁকরোল ৮০ টাকা, পেঁপে ৪০ টাকা, ঢ্যাঁড়শ ৬০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০ থেকে ৭০ টাকা, ধুন্দল ৬০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকা, কচুরলতি ৮০ টাকা, কচুরছড়া ৮০ টাকা, মিষ্টিকুমড়া ৫০ টাকা, ধনেপাতা ২০০ টাকা করে। এছাড়া মানভেদে প্রতিপিস লাউ ৮০ থেকে ১০০ টাকা, চালকুমড়াও ৮০ টাকা করে বিক্রি হয়। প্রতি হালি লেবু বিক্রি হয়েছে ২৫ থেকে ৩০ টাকা।
গত বছরের সঙ্গে চলতি বছরের তুলনামূলক পার্থক্য করলে দেখা যায়, অধিকাংশ সবজির দামে বড় পরিবর্তন হয়নি। তবে কিছু কিছু পণ্যে দাম ওঠানামা করেছে।
ভোক্তাদের দাবি, গত বছরের এই সময় দাম কাছাকাছি হলেও মাসখানেক আগেও সবজির দাম অনেক কম ছিল। এখন আবহাওয়াসহ নানা অজুহাতে আবার দাম বাড়িয়েছে।
সবজি বিক্রেতা নূরুল ইসলাম বলেন, চলতি বছর কিছু কিছু দাম বেশি। এ বছর টানা বৃষ্টির অনেক সবজি নষ্ট হয়েছে। তাই দাম কিছুটা এখন চড়া। তবে বছরব্যাপী চিন্তা করলে দেখবেন, চলতি বছরের শুরুতে সবজিসহ নিত্যপণ্যর দাম পানির মতো ছিল। সে সময় ভোক্তারা চাহিদামতো সবজি খেতে পেরেছে।
যাত্রাবাড়ীর সবজি বিক্রেতা রাজন পাটোয়ারী জানান, বর্তমানে যে সবজির দাম বেশি দেখছেন তার কারণ এ বছর টানা বৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টিতে গাছ মারা গেলে, ফলন কমে গেলে এমনিতেই সবজির দাম বেড়ে যাবে। চাহিদা থাকল কিন্তু ফলন হলো না, তাহলে তো অটোমেটিক দাম বেড়ে যায়।
মধ্য ও নিম্নআয়ের মানুষজন বলছেন, প্রতিদিনের আয়ের অর্ধেকেরও বেশি এখন শুধু বাজারে খরচ হচ্ছে। শ্রমজীবী পরিবারগুলো ডিম ও শাকসবজির মতো সাধারণ খাদ্যও কিনতে হিমশিম খাচ্ছে। অনেক ক্রেতা অভিযোগ করেছেনÑ সিন্ডিকেটের কারণে বাজার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে, অথচ কার্যকর তদারকি নেই।
মুদি পণ্যের বাজারদর: চালের বাজার কয়ক মাস ধরেই অস্থিরতা বিরাজ করছে। প্রতি কেজি চালের দাম ৮ থেকে ১০ টাকা বেড়েছে। চালের বাজার ঘুরে দেখা যায়, বাজারে মিনিকেট ৭২ টাকা, আটাশ চাল ৫৮ থেকে ৬০ টাকা, মোটা চাল ৫২ টাকায়, লাল বোরো ধানের চাল ৯০ টাকা, সুগন্ধি চিনিগুঁড়া পোলার চাল ১৪০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। প্যাকেট পোলাওয়ের চাল ১৫৫ টাকা, খোলা পোলাওয়ের চাল মান ভেদে ৯০ থেকে ১৩০ টাকা, ছোট মসুরের ডাল ১৫৫ টাকা, মোটা মসুরের ডাল ১১০ টাকা, বড় মুগডাল ১৪০ টাকা, ছোট মুগডাল ১৭০ টাকা, খেসারি ডাল ১২০ টাকা, বুটের ডাল ১২০ টাকা, ডাবলি ৬৫ টাকা, ছোলা ১১০ টাকা এবং মাষকালাইয়ের ডাল ১৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৯৮ টাকা, খোলা সয়াবিন তেল ১৭২ টাকা, খোলা চিনি ১০৫ টাকা, দুই কেজি প্যাকেট ময়দা ১৩০ টাকা, আটা দুই কেজির প্যাকেট ১২০ টাকা, খোলা সরিষার তেল প্রতিলিটার ২২০ টাকায় বিক্রি হয়।
এ ক্ষেত্রে দেখা যায়, গত বছরের থেকে এই বছর প্রতি কেজিতে ছোট মসুরের ডালের দাম বেড়েছে ২০ টাকা, খেসারি ডালের দাম বেড়েছে ২০ টাকা, কৌটাজাত ঘিয়ের দাম বেড়েছে ১০০ থেকে ২০০ টাকা, এলাচির দাম বেড়েছে ৬০০ টাকা, কালো গোল মরিচের দাম বেড়েছে ১০০ টাকা। আর প্রতি লিটারে বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে ৩১ টাকা, খোলা সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে ২৫ টাকা, খোলা সরিষার তেলের দাম বেড়েছে ৩০ টাকা।
এছাড়া প্রতি কেজিতে খোলা পোলাওয়ের চালের দাম কমেছে ১০ থেকে ২০ টাকা, ছোট মুগ ডালের দাম কমেছে ১০ টাকা, বুটের ডালের দাম কমেছে ১০ টাকা, ডাবলির দাম কমেছে ১৫ টাকা, ছোলার দাম কমেছে ৫ টাকা, মাশকালাইয়ের ডালের দাম কমেছে ২০ টাকা, প্যাকেটজাত চিনির দাম কমেছে ২৫ টাকা, খোলা চিনির দাম কমেছে ২৫ টাকা, দুই কেজি প্যাকেট ময়দার দাম কমেছে ২০ টাকা, দারুচিনির দাম কমেছে ৫০ টাকা, লবঙ্গের দাম কমেছে ২৫০ টাকা।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ আলীম আখতার খান বাজারদর নিয়ে বলেন, বাজারদর বেড়ে যাওয়া নিয়ন্ত্রণে আমরা নিয়মিত কাজ করছি, এটা নতুন কিছু নয়। আপনারা জানেন, আমাদের লোকবল সংকট। এছাড়া হঠাৎ যেসব পণ্যের দাম বেড়ে যায় সে ক্ষেত্রে আমরা চিঠি দিয়ে অভিযান পরিচালনার তাগিদ করি।
পেঁয়াজের দামের বিষয় তিনি বলেন, পেঁয়াজের দাম বেড়েছিল তা ঠিক। তবে গত বছরের তুলনা কম রয়েছে। হঠাৎ কেন বেড়ে গিয়েছিল এ ব্যাপারে খোঁজখবর নিয়েছি। ইতোমধ্যে দাম কিছুটা নিয়ন্ত্রণ এসেছে। আশা করি, আরও কমে যাবে।
ভোক্তা দিয়ে কাজ করা সংগঠন কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহ-সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, ‘আসলে ভোক্তারা নানাভাবে ঠকছেন। নিয়ন্ত্রণ সংস্থাগুলো তাদের দায়িত্ব পালনের ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে। মূলত সিন্ডিকেট বলতে কিছু নেই। বেপারী ফড়িয়াদের খপ্পরে পড়ে কিছু কিছু পণ্যের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যায়। নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাগুলোকে আরও কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার অনুরোধ রইল।

Discussion about this post