সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম : ডলার সংকট, রাজনৈতিক অস্থিরতা, চাহিদা কমে যাওয়া ইত্যাদির প্রভাবে সিমেন্টের উৎপাদন ও বিক্রয় কমেছে। গত অর্থবছরে সিমেন্টের কাঁচামাল ক্লিংকার আমদানি কমেছে ১৫ লাখ টন। এ ধারা চলতি অর্থবছরে থাকার শঙ্কা থাকবে বলে মনে করছেন সিমেন্ট খাতের উদ্যোক্তারা।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সূত্রে জানা যায়, গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ক্লিংকার আমদানি হয়েছিল ২ কোটি ৫ লাখ টন। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে তা কমে ১ কোটি ৯০ লাখ টনে নেমেছে। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে আমদানি কমেছে ১৫ লাখ টন। যদি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে দেশে মোট ৬ হাজার ১০০ কোটি মার্কিন ডলারের পণ্য আমদানি হয়েছে, যা এর আগের ২০২৩-২৪ অর্থবছরের চেয়ে সাত শতাংশ কম। আগের অর্থবছরে আমদানি হয়েছিল ৬ হাজার ৫১৪ কোটি ডলারের পণ্য। তবে পরিমাণের দিক থেকে ২০২৪-২৫ র্অবছরে আমদানি বেড়েছে। সব মিলিয়ে সোয়া ১৪ কোটি টন পণ্য আমদানি হয়েছে, যা এর আগের ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ১৩ কোটি ৭৬ লাখ টনের চেয়ে ৪ শতাংশ বেশি।
সংক্লিস্টরা বলেন, ডলার-সংকট নিয়ে গত ২০২৪-২৫ অর্থবছর শুরু হয়েছিল। অর্থবছরের ৩৬ দিনের মাথায় গত বছরের ৫ আগস্ট সরকারের পরিবর্তন হয়। দায়িত্ব নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। দেশে ডলার নিয়ে আগে থেকে যে কড়াকড়ি ছিল, তা তখনো আমদানির ক্ষেত্রে বহাল ছিল। সে জন্য নতুন সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়। এছাড়া সরকারি ও বেসরকারি উন্নয়ন প্রকল্প বš থাকায় সিমেন্টের চাহিদাও কম। ফলে আমদানি এখনো পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি। এখনো অনেক পণ্য আমদানিতে ঋণপত্র (এলসি) খুলতে মার্জিন দিতে হয় বেশি। ফলে সিমেন্টের কাঁচামাল ক্লিংকার কমেছে। একই সাথে সয়াবিন তেল ও প্রাণিখাদ্য তৈরির কাঁচামাল সয়াবিন বীজ, পুরোনো জাহাজ, বিভিন্ন মূলধনি যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশ, ডিজেল, অপরিশোধিত জ্বালানি তেল ইত্যাদি আমদানি কমেছে।
অর্থনীতিবিদ বলেন, সাধারণত দেশে পণ্য আমদানি বাড়লে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাড়ে। কাঁচামাল আমদানি বাড়লে শিল্প খাতে উৎপাদন বাড়ে। কিন্তু বর্তমানে যন্ত্রপাতি আমদানি ও কাঁচামাল আমদানি কমেছে মানে শিল্প খাতে মন্দা বিরাজ করছে।
চট্টগ্রামের সিমেন্ট খাতের ব্যবসায়ীরা বলেন, গত দুই বছর ধরে সিমেন্ট খাতে নেতিবাচক গ্রোথ, যা আমাদের জন্য চিন্তা কারণ। এমন পরিস্থিতি আমরা গত ১৫ বছর দেখিনি। সরকারি ও বেসরকারি উন্নয়ন কাজ চালু না হলে বহু কোম্পানি বš হয়ে যাবে। খেলাপি হবে। অনেক প্রতিষ্ঠান উৎপাদন সক্ষমতার ৪০ শতাংশও ব্যবহার করতে পারছে না। খুব কঠিন সময় পার করছি।
এ বিষয়ে সিমেন্ট মিল মালিকদের সংগঠনের বিসিএমএ সভাপতি ও প্রিমিয়ার সিমেন্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আমিরুল হক বলেন, নিত্যপণ্যের আমদানি ও ভোগ ঠিক থাকলেও শিল্পপণ্যের উৎপাদন ও ভোগ কমেছে। ফলে আমদানিও কমেছে। তনে সিমেন্টের উৎপাদন সক্ষমতা বেশি এটা সঠিক না। আমারে মাথাপিছু ব্যবহার অনেক কম। এছাড়া দেশের উন্নয়ন প্রকল্পে বরাদ্দ কম হওয়ায় চাহিদা কমেছে। পাশাপাশি তিন মাস ঋণের কিস্তি পরিশোধ না করলে খেলাপি হওয়া দুশ্চিন্তার। তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক আমানত ও বিনিয়োগের সুরে ব্যবধান তিন শতাংশের মধ্যে রেখে উদ্যোক্তারে নীতিসহায়তা দিতে হবে।

Discussion about this post