Print Date & Time : 2 August 2025 Saturday 10:58 pm

চা শ্রমিকদের ন্যায্য দাবি পূরণে ব্যবস্থা নিন

 

দেশের চাশিল্পে কর্মরত শ্রমিক-কর্মচারীদের জন্য বেতন বৃদ্ধির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে চা বাগান মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশীয় চা সংসদ (বিসিএস) ও বাংলাদেশ টি অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএ) এবং চা শিল্পের কর্মচারীদের সংগঠন বাংলাদেশ টি এস্টেট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের মধ্যে একটি চুক্তি হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী আগামী দুই বছরের জন্য চাশিল্পে নিয়োজিত কর্মীদের মূল বেতন ৫ শতাংশ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

মঙ্গলবার রাজধানীর বিটিএ অফিসে এ চুক্তি সই হয়। চুক্তির আওতায় ২০২৪ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০২৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ের জন্য মূল বেতনের ওপর বাড়তি সুবিধা (বেতন ৫ শতাংশ বৃদ্ধি) কার্যকর হবে। শুধু তা-ই নয়, অন্যান্য ভাতা এবং সুযোগ-সুবিধাও ধাপে ধাপে সমন্বয়ের আওতায় আনা হবে বলে চুক্তিতে উল্লেখ করা হয়। তাছাড়া নতুন চুক্তি অনুযায়ী স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যদের মূল বেতন প্রতি বছর ৫ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাবে। চা শ্রমিকরা বরাবরই বঞ্চিত। শ্রমিকেদের ধারণা, প্রতিবারই কিছু নেতাকে বশে এনে বেতন বাড়ানোর মুলা ঝুলানো হয়। আদতে শ্রমিকদের আন্দোলন বা কর্মবিরতি থামানোর কৌশল নেয়া হয়। এবার তেমন ঘটবে না বলে আমরাও আশাবাদী।

বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন এবং বাংলাদেশীয় চা সংসদের আইন অনুযায়ী, শ্রমিকদের বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা, রেশন, পানীয় জলের ব্যবস্থা, বোনাসসহ ন্যায্য মজুরি নিশ্চিত করবে বাগান মালিক। মজুরি বাড়ানোর জন্য দুই বছর অন্তর চা শ্রমিক ইউনিয়ন ও বাংলাদেশীয় চা সংসদের মধ্যে সমঝোতা বৈঠক হবে। সেই বৈঠকে উভয়ের আলোচনায় ঐকমত্যের পর চুক্তি সই হবে। এই চুক্তি অনুযায়ী, পরে দুই বছর শ্রমিকরা বেতন-ভাতাসহ অন্য সুযোগ-সুবিধা পেয়ে যাবেন। সেসব সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে, প্রতি বছরই বলা হয় এগুলো বাস্তবায়ন করা হবে। এতেই বোঝা যায়, সুযোগ-সুবিধা আদৌ নিশ্চিত হয় না। আমরা মনে করি, এমন দৃষ্টান্ত ও দৃষ্টিভঙ্গি এক ধরনের প্রতারণা। শ্রমিকরাও বুঝে গেছেন তাদের সঙ্গে প্রতারণা করা হচ্ছে। চা শ্রমিকরা মানবেতর জীবনযাপন করছেন, এটি কমবেশি সবাই জানেন। এও আমরা জানি, চা বাগান মালিকরা শ্রমিকদের জীবন মান উন্নয়নে কত ব্যবস্থাই নেন! কিন্তু আমরা বুঝতে পারি তারা শ্রমিকদের প্রতি দায়িত্বশীল মানবিক নন, তাদের ন্যূনতম মজুরি দেন না; এটি প্রহসনই বটে। মূলধারার জনগোষ্ঠী এমনকি অন্য শ্রমিকদের তুলনায় চা শ্রমিকদের জীবনমান অনেক পিছিয়ে। পুষ্টিহীনতা, শিক্ষার হার, মাতৃত্বকালীন মৃত্যু, নারীর ওপর সহিংসতা ও বাল্যবিবাহে জাতীয় গড়ের চেয়েও অনেক পিছিয়ে রয়েছেন তারা। মূলধারার বাইরে থাকার কারণে চা শ্রমিকরা চোখের সামনে থাকেন না। সে কারণে নীতি পর্যালোচনায় এই শ্রমিকরা যথাযথ মনোযোগ পাচ্ছেন না। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বাস্তবায়নে বৈশ্বিক চেতনা হচ্ছে, কাউকে পেছনে রাখা যাবে না। বাংলাদেশে যেসব চিহ্নিত গোষ্ঠী পিছিয়ে রয়েছে, তাদের মধ্যে চা শ্রমিকরা প্রথম দিকে থাকবেন। তাই চাশিল্পের আধুনিকায়ন, চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা এবং শিল্পমালিক ও শ্রমিকদের সম্পর্ক উন্নয়নে কার্যকর নিতে হবে।