শেয়ার বিজ ডেস্ক : চীনের অর্থনীতিতে নতুন করে দুর্বলতার লক্ষণ দেখা দিয়েছে। সরকারি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, আগস্ট মাসে কারখানা উৎপাদন ও খুচরা বিক্রয় প্রায় এক বছরের মধ্যে সবচেয়ে ধীরগতিতে বেড়েছে। এতে বিশ্বে দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিকে মন্দার হাত থেকে বাঁচাতে বেইজিংয়ের ওপর নতুন প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণার চাপ আরও বেড়েছে। খবর-আল জাজিরা।
জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরোর (এনবিএস) তথ্য অনুযায়ী, আগস্টে শিল্প উৎপাদন গত বছরের তুলনায় ৫ দশমিক ২ শতাংশ বেড়েছে, যা জুলাইয়ের ৫ দশমিক ৭ শতাংশ থেকে কম এবং আগস্ট ২০২৪ সালের পর সর্বনিম্ন। অন্যদিকে খুচরা বিক্রয় মাত্র ৩ দশমিক ৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা গত বছরের নভেম্বরের পর সবচেয়ে ধীর। জুলাইয়ে এ হার ছিল ৩ দশমিক ৭ শতাংশ।
ক্যাপিটাল ইকোনমিকসের চীনবিষয়ক অর্থনীতিবিদ জিচুন হুয়াং মন্তব্য করেন, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে গতি কমে যাওয়ার ইঙ্গিত স্পষ্ট। যদিও আবহাওয়াজনিত কিছু অস্থায়ী প্রভাব ছিল, মূল অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ক্রমশ দুর্বল হচ্ছে।
প্রচণ্ড গরম (১৯৬১ সালের পর সবচেয়ে উষ্ণ) এবং দীর্ঘ বর্ষা মৌসুমও কারখানা কার্যক্রমকে ব্যাহত করেছে। এর মধ্যে রিয়েল এস্টেট সংকট ভোক্তাদের আস্থা নষ্ট করছে এবং কর্মসংস্থানের বাজারকে দুর্বল করে তুলছে। আগস্টে বেকারত্বের হার ছয় মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ ৫ দশমিক ৩ শতাংশ এ পৌঁছায়। একই সময়ে নতুন ফ্ল্যাটের দাম জুলাইয়ের তুলনায় শূন্য দশমিক ৩ শতাংশ এবং বার্ষিক হিসেবে ২ দশমিক ৫ শতাংশ কমেছে। রিয়েল এস্টেট বাজারে ধস নামায় অনেক পরিবার খরচ কমিয়ে দিচ্ছে, যা সামগ্রিক ভোক্তা ব্যয়কে সীমিত করছে।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের অনিশ্চিত বাণিজ্য নীতি এবং মার্কিন শুল্ক চাপের কারণে চীন রপ্তানিতে চাপে পড়েছে। তবে সাম্প্রতিক তথ্য বলছে, কিছু কারখানা যুক্তরাষ্ট্রমুখী পণ্য দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকায় ঘুরিয়ে দিতে পেরেছে।
আইএনজি’র গ্রেটার চায়না প্রধান অর্থনীতিবিদ লিন সং মনে করেন, ‘বছরের শেষভাগে প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে আরও প্রণোদনা প্রয়োজন হতে পারে।’ তিনি ইঙ্গিত দেন, শিগগিরই সুদের হার আরও কমানো হতে পারে।
অন্যদিকে এএনজেড ব্যাংকের জাওপেং জিং বলেন, ‘অর্থনীতিতে গতি কমলেও তা এখনো নতুন প্রণোদনার মতো বড় পদক্ষেপ নেয়ার মতো খারাপ অবস্থায় যায়নি।’
সামগ্রিকভাবে, ভোক্তা ব্যয় ও শিল্প উৎপাদনের দুর্বলতা, রিয়েল এস্টেট সংকট এবং ট্রাম্পের বাণিজ্য যুদ্ধের প্রভাব মিলিয়ে চীনের অর্থনীতি বড় চাপে রয়েছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে বেইজিং কি আরও শক্তিশালী প্রণোদনা দেবে, নাকি বিদ্যমান নীতিতেই সামাল দেয়ার চেষ্টা করবে।

Discussion about this post