শেয়ার বিজ ডেস্ক : চীনের তিয়ানজিনে অনুষ্ঠিত সাংহাই কোঅপারেশন অরগানাইজেশন (এসসিও) সম্মেলন শেষে দিল্লি ফিরেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এই সফরে তিনি শুধু সম্মেলনে অংশই নেননি, চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের সঙ্গে আলাদা বৈঠকেও বসেছেন। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্যিক টানাপোড়েনের পরিপ্রেক্ষিতে মোদির এই চীন সফর আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে একটি তাৎপর্যপূর্ণ বার্তা বহন করেছে বলেই মনে করছে কূটনৈতিক মহল। খবর: বিবিসি।
মোদির এই সফরের মধ্য দিয়ে স্পষ্ট হয়েছে, ভারত শুধু পশ্চিমা মিত্রদের ওপর নির্ভরশীল নয়, বরং বহুমুখী কূটনীতির পথে এগোচ্ছে। বিশেষ করে, চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়িয়ে আন্তর্জাতিক ভারসাম্য রক্ষা করতেই মোদি সক্রিয় হয়েছেন বলে বিশ্লেষকদের মত।
দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা সরাসরি বিমান পরিষেবা আবার চালু হওয়ার বিষয়েও ওই বৈঠকে আলোচনা হয়। মোদি জানান, ভারত ও চীনের মধ্যে ফ্লাইট শিগগিরই চালু হতে চলেছে। এরপর এসসিও সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের সঙ্গে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে অংশ নেন মোদি। তবে এর আগে এক বিরল আন্তরিকতায় দেখা যায় মোদি, শি ও পুতিনÑএ তিন বিশ্বনেতা একসঙ্গে হাস্যরস, আলিঙ্গন ও করমর্দনের মাধ্যমে সৌহার্দ্যরে বার্তা দিচ্ছেন।
সম্মেলনের পরে প্রধানমন্ত্রী মোদি এক্স হ্যান্ডেলে লেখেন, তিয়ানজিনে কথোপকথন অব্যাহত রয়েছে। প্রেসিডেন্ট শি ও প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে মতবিনিময় খুবই ফলপ্রসূ হয়েছে। আরেকটি পোস্টে তিনি লেখেন, প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে দেখা হওয়া সবসময়ই আনন্দের।
সম্মেলনের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হওয়ার পর পুতিনের সঙ্গে এক গাড়িতে চড়ে রিটজ কার্লটন হোটেলের উদ্দেশে রওনা দেন মোদি। প্রায় এক ঘণ্টার এই যাত্রায় দুই নেতার মধ্যে হয় একান্ত আলোচনা। রুশ সংবাদমাধ্যম জানায়, এই আলোচনা ছিল সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত এবং অত্যন্ত সংবেদনশীল।
পরে দু’দেশের মধ্যে কৌশলগত অংশীদারত্ব জোরদার করা, আঞ্চলিক নিরাপত্তা এবং ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে বিস্তৃত আলোচনা হয়। মোদি বলেন, যুদ্ধ কোনো সমাধান নয়। সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে গঠনমূলক পথে এগোতে হবে। একইসঙ্গে তিনি প্রেসিডেন্ট পুতিনকে ডিসেম্বর মাসে ভারতে অনুষ্ঠিতব্য ২৩তম ভারত-রাশিয়া শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নেয়ার আমন্ত্রণ জানান।
পুতিনের সফরের বিষয়টি রাশিয়ার পক্ষ থেকে আগেই নিশ্চিত করা হয়েছিল। মোদি বলেন, ১৪০ কোটির ভারত আপনার অপেক্ষায় রয়েছে।
তবে সম্মেলনের আরেকটি দিক ছিল, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের উপস্থিতি, যাকে একরকম কৌশলে উপেক্ষা করেই চলেছেন মোদি। একপর্যায়ে দেখা যায়, মোদি ও পুতিন করমর্দন ও হাস্যরসে মেতে রয়েছেন। সেখানে শরিফ পাশে দাঁড়িয়ে থাকলেও কেউ তার দিকে ফিরেও তাকাননি।
চীনের সঙ্গে ইতিবাচক সম্পর্ক বজায় রাখার পাশাপাশি মোদি পরোক্ষভাবে ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ’ (ইজও) নিয়েও আপত্তির সুর তোলেন। এই প্রকল্পটি পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীরের ভেতর দিয়ে যাওয়ায় ভারত শুরু থেকেই এর বিরোধিতা করে আসছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কিছুটা টানাপোড়েন চললেও চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়িয়ে ভারত দেখাতে চাইছে তারা একক কোনো বলয়ের অংশ নয়, বরং আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে নিজেদের অবস্থানকে স্বাধীন, শক্তিশালী ও বহুমুখী করে তুলতেই আগ্রহী।

Discussion about this post