নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজধানীর বনানীর কড়াইল বস্তিতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল মঙ্গলবার বিকাল ৫টা ২২ মিনিটে আগুন লাগার খবর পায় ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর। রাত সাড়ে ৯টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ফায়ার সার্ভিসের ২৬টি ইউনিট কাজ করলেও আগুন নিয়ন্ত্রণে আসেনি। প্রাথমিকভাবে আগুন লাগার কারণ বা ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানাতে পারেনি ফায়ার সার্ভিস।
ফায়ার সার্ভিসের মিডিয়া সেলের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহজাহান শিকদার বাংলা বলেন, ‘আগুনের খবর পেয়ে প্রথম ধাপে ৭টি ইউনিট পাঠানো হয়। কিন্তু সড়কে যানজটের কারণে ইউনিটগুলো সময় মতো পৌঁছাতে পারেনি। সন্ধ্যা ৬টা ৬ মিনিটে সেখানে পৌঁছায়। দ্বিতীয় ধাপে পাঠানো হয় আরও ৪টি ইউনিট। এগুলো পৌঁছায় ৬টা ২৫ মিনিটে। তৃতীয় ধাপে ৫টি ইউনিট পাঠানো হয়েছে। এরপর আরও ৫টি ইউনিট পাঠানো হয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘তাৎক্ষণিকভাবে অগ্নিকাণ্ডের কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে জানা সম্ভব হয়নি।’
এদিকে, মহাখালীর কড়াইল বস্তিতে লাগা আগুন যেন শুধু ঘরবাড়িই নয়, সাধারণ মানুষের আজীবনের সঞ্চয় আর স্বপ্নগুলোও গিলে খেয়েছে। ঘনবসতিপূর্ণ এই বস্তিতে আগুন ছড়িয়ে পড়ার পর অনেকে বুঝে ওঠার আগেই নিজেদের ঘর হারান। অনেকের পক্ষেই সম্ভব হয়নি প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিরাপদ স্থানে নেয়ার।
ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, রোজিনা নামে এক নারী রাস্তার পাশে বসেই কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি বলেন, একটাও জিনিস তুলে আনতে পারলাম না। কত কষ্টে যা করেছিলাম, সব আগুনে শেষ হয়ে গেল। আল্লাহ কেন এমন দেখালÑবলতে বলতেই তিনি ভেঙে পড়েন।
অন্যদিকে, কামাল নামের এক ব্যক্তি দৌড়াতে দৌড়াতে মাথায় তুলে আনেন একটি পুরোনো টেলিভিশন, হাতে ধরা গ্যাস সিলিন্ডার। তার মুখে আতঙ্ক আর অসহায়ত্বের ছাপ, কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলছিলেন, ‘এই দুইটা ছাড়া আর কিছুই বাঁচাতে পারলাম না। চোখের সামনে সব পুড়ে ছাই হয়ে গেল।’
পাশেই আরেক হƒদয়বিদারক দৃশ্য- স্কুলপড়ুয়া রাফি আর তার মা রহিমা ছোটাছুটি করছিলেন। রাফির কাঁধে বিশাল বস্তা, আর রহিমার হাতে দুটি ভারী ব্যাগ। পরিবারের পুরুষ সদস্যরা কেউই ঘরে ছিলেন না, তাই আগুনের মুহূর্তে নিজেরাই সামলানোর চেষ্টা করেছেন সবকিছু।
রহিমা বললেন, ‘আমাদের ঘরেই আগুন লেগেছে। ছয় বছরে দুবার আগুন দেখলাম। আগেরবার কিছুটা বাঁচাতে পেরেছিলাম, এবার দামি আসবাবও রক্ষা করলাম না।’
এদিকে, আগুন নেভাতে গিয়ে সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায় তীব্র পানি সংকট। পানিবাহী গাড়িগুলো যানজটে আটকে পড়ায় আগুনের কাছে পৌঁছাতে বিলম্ব হয়। বাধ্য হয়ে ফায়ার সার্ভিস কাছের খাল থেকে পানি তুলে জেনারেটর দিয়ে পাইপে চাপ সৃষ্টি করে আগুনের দিকে ছিটাতে থাকে। তিনটি জেনারেটরের সঙ্গে যুক্ত করা হয় একাধিক পাইপ-তবু আগুন পুরোপুরি শান্ত হচ্ছিল না। কড়াইলের আকাশ যেন ধোঁয়ায় গ্রাস করে ফেলছে। মাটিতে ছড়িয়ে আছে পোড়া টিন, কাঠ আর মানুষের ছিন্ন স্বপ্নের টুকরো। বস্তির সরু গলিতে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের একটাই প্রশ্নÑএখন কোথায় যাব?’ ভয়াবহ এ আগুনে নিজের ঘর আর সহায়সম্বল পুড়তে দেখে হতবাক হয়ে পড়েন সেখানকার বাসিন্দারা।
উল্লেখ্য, রাজধানীর অভিজাত এলাকা গুলশান ও বনানী লাগোয়া প্রায় ৯০ একর জায়গার ওপর ১০ হাজার ঘর রয়েছে এই বস্তিতে। যেখানে প্রায়ই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। চলতি বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি মধ্যরাতে ওই বস্তিতে লাগা আগুনে পুড়ে যায় অন্তত ডজনখানেক ঘর। গত বছরের ২৪ মার্চ ও ১৮ ডিসেম্বরেও আগুনে পুড়ে কড়াইল বস্তি।
প্রায় প্রতিবারই অগ্নিনির্বাপক বাহিনী জানিয়েছে, বস্তিতে ঢোকার রাস্তা সংকীর্ণ হওয়ায় ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ঢুকতে বেগ পেতে হয়। টিন, বাঁশ, কাঠের ঘরগুলো গায়ে গা লাগিয়ে ওঠানো হয়েছে; যার কারণে এখানে আগুন লাগলে দ্রুত ছড়ায়।
