Print Date & Time : 17 September 2025 Wednesday 8:41 am

ছাত্রহত্যার আসামি শেখ মনোয়ার সিরাজগঞ্জ ইজেডে বহাল  

মীর আনিস : সিরাজগঞ্জ অর্থনৈতিক অঞ্চলের (ইজেড) পরিচালক শেখ মনোয়ার হোসেনকে ছোট ভাই বলে পরিচয় করিয়ে দিতেন পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই মনোয়ার এখনও সিরাজগঞ্জ ইজেডের মতো একটা গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বহাল তবিয়তে রয়েছেন। তার বিরুদ্ধে রয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত শিক্ষার্থী হত্যা মামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগ।

কোটা সংস্কার আন্দোলনে অংশ নেয়া হাফেজ মো. সিয়াম হোসেন হত্যা মামলার আসামি এই শেখ মনোয়ার হোসেন। এছাড়া শহিদ ইয়াহিয়া ও শহিদ শিহাব হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে আরও দুটি মামলায় আসামি করা হয় তাকে।

শেখ হাসিনার ছোট ভাই পরিচয়ে আওয়ামী লীগ আমলে প্রচণ্ড ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের তালিকায় ছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এই ছাত্রলীগ নেতা।

জানা গেছে, গত বছরের ৪ আগস্ট দুপুরে এনায়েতপুরের খাজা ইউনুছ আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে সরকার পতনের এক দফা দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার মিছিলে গুলিবর্ষণ করে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা। ঘটনাস্থলেই শহিদ হন হাফেজ মো. সিয়াম হোসেন। এ ঘটনায় নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে হত্যা মামলা করা হয়। হত্যায় জড়িতদের মধ্যে সিরাজগঞ্জ-৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্যর (এমপি) পিএস সেলিম সরকারকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব।

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সিরাজগঞ্জ জেলার আলোচিত ঘটনা হাফেজ সিয়াম হোসেন হত্যা মামলা। সিয়াম হত্যায় মো. হযরত আলী বাদী হয়ে গত বছরের ২১ আগস্ট এনায়েতপুর থানায় ১৪৩/১৪৪/১৪৭/১৪৮/১৪৯/৩০২/১১৪/৩৪ ধারায় হত্যা মামলা দায়ের করেন; মামলা নম্বর-০৩।

মামলায় দুই শতাধিক লোককে আসামি করা হয়। প্রধান আসামি করা হয় সিরাজগঞ্জ-৫ আসনের সাবেক এমপি আব্দুল মজিদ মণ্ডলকে। ১৪ নম্বর আসামি করা হয় সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও সিরাজগঞ্জ অর্থনৈতিক অঞ্চলের পরিচালক শেখ মনোয়ার হোসেনকে। রহস্যজনক কারণে তিনি এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন।

পতিত সরকারের আমলে সিরাজগঞ্জ জেলা ছিল জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের প্রথম স্বাধীন জেলা। সেই জেলার অর্থনৈতিক অঞ্চলে সাবেক ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মনোয়ার হোসেন কীভাবে এখনও বহাল তবিয়তে রয়েছেনÑএ প্রশ্ন আন্দোলনে নিহত স্বজনদের।

সিরাজগঞ্জের যমুনা সেতুর পশ্চিম প্রান্তে এক হাজার ৮১ একর জায়গার ওপর গড়ে উঠছে অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত দেশের প্রথম সবুজ অর্থনৈতিক অঞ্চল। এই অর্থনৈতিক অঞ্চলে শেখ মনোয়ার হোসেন ছিলেন সাবেক পতিত সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিনিধি।

একাধিক হত্যা মামলার আসামি হয়েও শেখ মনোয়ার কীভাবে রাষ্ট্রীয় প্রকল্পের পরিচালক পদে আসীন রয়েছেন, তা নিয়ে সিরাজগঞ্জবাসীর প্রশ্ন রয়েছে। শহিদ পরিবারের এক সদস্য ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সিরাজগঞ্জে জুলাই আন্দোলনে হত্যা মামলার আসামি হয়েও কার ছত্রছায়ায় শেখ মনোয়ার এখনও প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।

তার অভিযোগ, শেখ মনোয়ার হোসেনের জেলে থাকার কথা। সিরাজগঞ্জের বিএনপির বড় দুই নেতাকে হাত করে এখনও বহাল তবিয়তে আছেন সিরাজগঞ্জ অর্থনৈতিক অঞ্চলে।

তিনি বলেন, শেখ মনোয়ার হোসেন শেখ পরিবারের এক আত্মীয় এবং বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্যকে অর্থের বিনিময়ে নিজের পক্ষে এনেছেন বলেই তার কোনো অসুবিধা হচ্ছে না, তিনি গ্রেপ্তার এড়িয়ে চলতে পারছেন। অর্থনৈতিক অঞ্চলের পরিচালক পদেও থাকতে কোনো সমস্যা হচ্ছে না।

অভিযোগ আছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বদৌলতে শেখ মনোয়ার হোসেন চেঞ্জ বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং সিরাজগঞ্জ ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের চেয়ারম্যান হন। পাশাপাশি তিনি বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সাবেক পরিচালক। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালে তিনি বিপুল অর্থবিত্তের মালিক হন।

হাফেজ সিয়াম হোসেন হত্যা মামলায় তার সম্পৃক্ততার ব্যাপারে জানতে চাইলে মনোয়ার হোসেন বলেন, ‘যা ইচ্ছা লিখে দিন। আমি আপনার কোনো কথার জবাব দেব না।’

বেলাল নুর নামের স্থানীয় এক বাসিন্দা শেয়ার বিজকে বলেন, কোনো যুক্তি ও অজুহাতেই সন্ত্রাসী বা গণহত্যাকারী মানবতাবিরোধী অপরাধী সমাজের নেতৃত্বে বা রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে থাকতে পারে না। তাদের যেকোনো প্রকারেই হোক না কেন রাজনীতি থেকে নিষিদ্ধ করতে হবে। তা না হলে পরাজিত শক্তি বিপ্লবী ছাত্র-জনতার অস্তিত্বকে চিরতরে নিশ্চিহ্ন করে দেবে। ওরা সন্ত্রাসী, খুনি, ধর্ষক, চাঁদাবাজ, অর্থ আত্মসাৎকারী, ঘুসখোর ও জবরদখলকারী।