নিজস্ব প্রতিবেদক : আগামী জাতীয় নির্বাচনে কোনো বিশেষ দলের হয়ে কাজ না করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র ও কৃষি উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
রাজধানীর রাজারবাগে নির্বাচনের দায়িত্ব পেশাদারত্বের সঙ্গে সম্পাদনের লক্ষ্যে পুলিশের দক্ষতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধি-সংক্রান্ত নির্বাচনী প্রশিক্ষণ কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে গতকাল রোববার তিনি এ কথা বলেন।
তিনি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমুলক ও উৎসবমুখর নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে জনগণের আশা-আকাক্সক্ষা পূরণে সবার সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ১৪, ১৮ ও ২৪-এর নির্বাচন মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে একটি সুন্দর, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন জাতিকে উপহার দিতে পুলিশ সদস্যদের নির্দেশ দেন।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা রাজনৈতিক দলের কাছ থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উদ্দেশে বলেন, ‘ধৈর্যের সঙ্গে মাথা ঠাণ্ডা রেখে আইনি প্রক্রিয়ায় সব বিষয় মোকাবিলা করতে হবে। আমরা কাজকর্মে যত স্বচ্ছ থাকব সাধারণ জনগণের কাছে তত আস্থা অর্জন করতে পারব। নিজেদের রাজনৈতিক কর্মী ভাববেন না। দেশ ও জনগণের জন্য কাজ করবেন। বাংলাদেশ পুলিশ সততা ও নিরপেক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনবে বলে আমি প্রত্যাশা করছি।’
তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, নির্বাচন শান্তি ও উৎসবমুখর হবে। নির্বাচন শুধু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর নির্ভর করে না। একদিকে জনগণ, নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় একটি ভালো নির্বাচন হওয়া সম্ভব।
তিনি বলেন, সমাজ থেকে দুর্নীতি ও মাদক কমাতে হবে। আমাদের সময় খুব একটা নেই। গণমাধ্যমের প্রতি অভিযোগ করে তিনি বলেন, সরকারের ব্যর্থতা জোরেশোরে তুলে ধরা হয়, কিন্তু সফলতা তুলে ধরা হয় না। অপারেশন ডেভিলহান্ট না থাকলেও কর্মযজ্ঞ এখনও চলমান রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘ফ্যাসিস্টদের তালিকা প্রত্যেক থানায় রয়েছে। তারা দেশকে অস্থিতিশীল করতে তৎপর। অনেক অপরাধী জামিনে ছাড়া পেয়ে অপরাধ করছে জানিয়ে তাদের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানান উপদেষ্টা।’
তিনি জানান, নির্বাচনের আগে লটারির মাধ্যমে পুলিশে বদলি ও পোস্টিং দেয়া হবে। অন্তর্বর্তী সরকার চায় বাংলাদেশ পুলিশ এমন একটি সুশৃঙ্খল ও নিরাপদ নির্বাচন উপহার দিক, যা বিশ্বে নজির হয়ে থাকবে।’
তিনি বলেন, সামনে দুর্গাপূজায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পাঁয়তারা চলছে। ফ্যাসিস্টরা সরাসরি সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে, অনেকে জামিনে বেরিয়ে আবারও এই কাজে জড়াচ্ছেÑএ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।
পুলিশের সাম্প্রতিক নিয়োগ স্বচ্ছ হওয়ায় পুলিশের প্রশংসা করেন তিনি। প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার পুলিশ নির্বাচনী প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে অংশ নেবে। এতে পুলিশের মধ্যে মনোবল, জ্ঞান ও দায়িত্ব বাড়বে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রাজবাড়ীর ঘটনা তদন্ত করা হচ্ছে, পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। সবাইকে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানান তিনি। তিনি আরও বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আরও উন্নত করার চেষ্টা চলছে। জনগণ নির্বাচনমুখী হলে অনেক সমস্যার সমাধান হবে।
পুলিশের আইজিপি বাহারুল আলমের সভাপতিত্বে এতে বক্তব্য রাখেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মো. খোদা বক্স চৌধুরী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গণি প্রমুখ।
এ সময় প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মো. খোদা বক্স চৌধুরী বলেন, জুলাই আগস্টের পর নতুনভাবে যে পুলিশ তৈরি হয়েছে তার চূড়ান্ত পরীক্ষা হবে জাতীয় নির্বাচন। সামনের চ্যালেঞ্জ যথাযথভাবে মোকাবিলা করতে হবে। পুলিশকে পেশাদারত্ব বজায় রেখে কাজ করতে হবে। দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে কর্মকাণ্ড পরিবর্তন করতে হবে।
আইজিপি বাহারুল আলম বলেন, এবারের নির্বাচন পুলিশের জন্য অগ্নিপরীক্ষা। নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করতে পুলিশ সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

Discussion about this post