রামিসা রহমান : পূজার বাজারে নারীদের শাড়ি ও সালোয়ার-কামিজের চাহিদা বেশি। কাতান, জর্জেট, অরগাঞ্জা, মসলিন, সিল্ক ও সুতি দিয়ে কাজ করা শাড়ির প্রতি আগ্রহ বেশি ক্রেতাদের। কদর রয়েছে টাঙ্গাইলের তাঁত ও জামদানি শাড়ির ওপর।
সামনেই আসন্ন হিন্দু ধর্মের প্রধান উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে জমে উঠেছে পোশাকের বাজার। বিক্রেতারা জানিয়েছেন, গতবারের চেয়ে এবার বিক্রি ভালো হচ্ছে। এদিকে পূজা উপলক্ষে কেনাকাটায় বিশেষ ছাড় দিচ্ছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। এছাড়া বিশেষ কালেকশন নিয়ে এসেছে ফ্যাশন হাউসগুলো।
ইনফিনিটি, লা রিভ, আড়ং, শরবিন্দু, ইয়োলো, রিদম, জেন্টাল পার্ক, দেশি দশসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নিয়ে এসেছে নতুন কালেকশন।
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা শুরু হচ্ছে আগামী ২ অক্টোবর। বর্তমানে উৎসবের প্রস্তুতি চলছে দেশজুড়ে। প্রতিমা সাজানোর পাশাপাশি এ উৎসবকে কেন্দ্র করে নগরীর মার্কেটগুলোয় জমে উঠেছে কেনাকাটা।
পূজা উপলক্ষে কাপড়ের মার্কেট ও শোরুমগুলোয় নারীদের জন্য সাজিয়ে রাখা হয়েছে বিভিন্ন রংয়ের থ্রি-পিস, জামদানি শাড়ি, কাতান শাড়ি, লেহেঙ্গা ও তাঁতের শাড়ি। ছেলেদের জন্য রয়েছে বাহারি ডিজাইনের ধুতি, শর্ট পাঞ্জাবি, শার্ট, টি-শার্ট ও প্যান্ট। তাছাড়া জুতার দোকাগুলোয় রয়েছে বিভিন্ন রকমের জুতা। রয়েছে বাচ্চাদের বাহারি পোশাক।
রাজধানীর বসুন্ধরা সিটি, নিউমার্কেট, খিলগাঁও তালতলা মার্কেট, মৌচাক মার্কেট-সহ আর অনেক মার্কেটে গতকাল শুক্রবার ক্রেতাদের ভিড় দেখা গেছে।
গতকাল শুক্রবার বিকালে বসুন্ধরা শপিং মলে গিয়ে দেখা যায়, শিশুদের দোকানগুলোয় চলছে কেনাবেচা। মার্কেট ঘুরে দেখা যায় কেউ শাড়ি কিনছে, কেউ পাঞ্চাবি, আবার কেউ আবার কিনছে জুতা। প্রায় সবার হাতেই ছিল শপিং ব্যাগ। প্রতিটি দোকানেই ছিল ক্রেতা।
প্রথমা মণ্ডল পুরান ঢাকা থেকে এসেছেন বসুন্ধরা শপিং মলে পরিবারের জন্য কেনাকাটা করতে। তিনি বলেন, মায়ের জন্য পাঁচ হাজার টাকায় একটা শাড়ি আর আমার জন্য টপস আর থ্রি-পিস কিনেছি আট হাজার টাকায়।
আরেক ক্রেতা সুস্মিতা সাহা থাকেন রাজধানীর মালিবাগে। এবার পূজায় গ্রামের বাড়ি ফরিদপুর যাবেন, তাই বাড়ির সবার জন্য পোশাক কিনেছেন। তিনি বলেন, মায়ের জন্য শাড়ি, বাবার জন্য ধুতি-পাঞ্জাবি কেনা হয়েছে। এ ছাড়া ছোটদের জন্য জুতা কিনেছি। তবে গতবারের চেয়ে ২০ শতাংশ দাম বেশি মনে হয়েছে এবার।
প্লাস পয়েন্টের স্টাফ শেয়ার বিজকে বলেন, গতবারের চেয়ে এবার একটু ভালো বিক্রি হচ্ছে।
বসুন্ধরা শপিং মলের দেশি দশ শোরুমের অ্যাডমিন ম্যানেজার বলেন, আমাদের বিক্রি ভালো হচ্ছে। আজকে যে ক্রেতা এসেছেন, তার ৮০ শতাংশ পূজা উপলক্ষে কিনতে এসেছেন। তবে আগে যেমন ছুটির দিন ছাড়াও অন্য দিন বিক্রি হতো, এখন তেমন হয় না। শুক্রবার ও শনিবার ভালো বিক্রি হয়।
এমব্রেলা ফ্যাশন হাউসের স্টাফের সঙ্গে কথা বললে তিনি শেয়ার বিজকে বলেন, আমরা পূজা উপলক্ষে অনেক ধরনের নতুন পণ্য আমাদের স্টকে এসেছে। আবার বিশেষ কিছু পণ্যে আমাদের ছাড় চলছে। আমাদের বিক্রি ভালো হচ্ছে।
বসুন্ধরা মার্কেটের অন্য অনেক ব্যবসায়ী শেয়ার বিজকে বলেন, এখন আর আগের মতো বিক্রি হয় না। জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে গেছে, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যে দাম বেশি হওয়ার ফলে মানুষ পোশাক কম কিনছে। তবে বিক্রি মন্দের ভালো বলা যায়। গত দুই উৎসবের চেয়ে এবার ভালো বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে ধানমন্ডি হকার্স, চাঁদনী চক ও গাউছিয়ার বেশিরভাগ শাড়ি দোকানদার ক্রেতাদের সময় দিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবারের পূজার বাজারে নারীদের শাড়ি ও সালোয়ার-কামিজের চাহিদা বেশি। কাতান, জর্জেট, সিল্ক ও সুতি দিয়ে কাজ করা শাড়ির প্রতি আগ্রহ বেশি ক্রেতাদের। কদর রয়েছে টাঙ্গাইলের তাঁত ও জামদানি শাড়িরও।
নিউমার্কেটের গোল্ড প্লেটেড গয়নার দোকানগুলোয়ও চলছে ধুম বিক্রি। নারীরা পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে কিনছেন চুড়ি, গলার হার, আংটিসহ নানা রকম অলংকার। পোশাকের পাশাপাশি মেয়েদের জুয়েলারি, সিঁদুর, চুড়িসহ অন্যান্য অনুষঙ্গ বেশ ভালোই বিক্রি হচ্ছে বলে জানালেন দোকানিরা।
পূজা সামনে রেখে অনলাইন মার্কেটও সরব হয়েছে। অনলাইনে চলছে নানা পোশাকের প্রচারণা, একই সঙ্গে বিক্রিও বেশ ভালো বলে জানান ব্যবসায়ীরা। অনেকে অনলাইনে ও অফলাইন দুভাবেই বিক্রি করছে। কোনো কোনো পেজ দিচ্ছে কাস্টমাইজড সুবিধা।
শরবিন্দুর রাজধানীতে নিজস্ব শোরুম আছে; সেইসঙ্গে অনলাইনেও বিক্রি করেন তারা। পূজা উপলক্ষে পূজা স্পেশাল ওয়ান পিস, থ্রিপিস, টপস ও ইউনিক ডিজাইনের শাড়ি এনেছে তারা।
এই ফ্যাশন হাউসের স্টাফরা শেয়ার বিজকে বলেন, ‘এবার আমরা অনেককিছুর আয়োজন করেছি। আমরা স্কিন প্রিন্টের শাড়ি করেছি, হাতের কাজ করা শাড়ি, ডিজিটাল প্রিন্টের শাড়ি, হাফ সিল্কের শাড়ি ও খাদির ওপর শাড়ি আছে। এবার পূজায় আমরা ভালো সাড়া পাচ্ছি।’
তবে পূজা যত ঘনিয়ে আসছে, ততই দেশের বিভিন্ন শপিং মলে ক্রেতা সমাগম বাড়ছে। গতবার এর তুলনায় এ বছর বেচাকেনা বাড়বে বলে আশা করছেন ব্যবসায়ীরা।

Discussion about this post