মুক্তা বেগম, গাজীপুর : গাজীপুর সিটি করপোরেশনের অন্তর্গত বিআইডিসি রোডের বটতলা থেকে সালনা পর্যন্ত প্রায় সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার সড়ক বর্তমানে বেহাল অবস্থার চূড়ান্ত রূপ ধারণ করেছে। দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় সড়কের বিভিন্ন অংশে ছোট-বড় গর্ত ও খানাখন্দে পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে গর্তে পানি জমে সৃষ্টি হয়েছে চলাচলের চরম দুর্ভোগ। গতকাল রোববার সরেজমিনে এমন দৃশ্য দেখা গেছে।
দেখা গেছে, এই সড়কের পাশে গড়ে উঠেছে ছোট-বড় বহু কলকারখানা। গুরুত্বপূর্ণ এই সড়ক দিয়ে প্রতিদিন হাজারো মানুষ যাতায়াত করে। এর মধ্যে রয়েছে স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থী, কর্মজীবী মানুষ, পণ্যবাহী যানবাহন ও রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্স। ফলে দ্রুত সংস্কার না হলে জনভোগান্তি আরও বাড়বে এবং দুর্ঘটনার ঝুঁকিও তীব্রতর হবে। স্থানীয়দের দাবি, পরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা নিশ্চিত করে দ্রুত সড়ক সংস্কার ও উন্নয়ন কাজ শুরু করতে হবে।
স্থানীয়রা জানান, সামান্য বৃষ্টি হলেই রাস্তার গর্তগুলোতে পানি জমে যায়, ফলে প্রতিনিয়ত ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। যানবাহন গর্তে আটকে সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। অটোরিকশা উল্টে যাওয়া, পথচারী পা হড়কে পড়া কিংবা কাদা-পানিতে নোংরা হওয়া এখন নিয়মিত ঘটনা।
এলাকার এক শিক্ষার্থী জানায়, প্রতিদিন স্কুলে যাই এই রাস্তায় ঝাঁকি খেতে খেতে। কখনও রিকশা উল্টে যায়, কখনও জামাকাপড় ভিজে যায়। এতে আমাদের খুব কষ্ট হয়।
রোগীর স্বজনরা অভিযোগ করেন, জরুরি অবস্থায় রোগী নিয়ে হাসপাতালে যেতে বিপাকে পড়তে হচ্ছে। ঝাঁকুনিতে রোগীর শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হয়।
স্থানীয়দের অভিযোগ, বারবার গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানোর পরও তারা কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। তাদের মতে, সড়কের পাশে পরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় বৃষ্টির পানি সঠিকভাবে নিষ্কাশিত না হয়ে রাস্তার ওপর জমে থাকায় সড়ক ভেঙে যাচ্ছে। এক বাসিন্দা বলেন, ড্রেন নেই, পানি জমে থাকে। এই পানির জন্যই রাস্তা ধসে গেছে। সঠিক পরিকল্পনা ছাড়া রাস্তা বানালে এমনই হয়।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী শামসুর রহমান শেয়ার বিজকে বলেন, বটতলা থেকে সালনা পর্যন্ত রাস্তা সংস্কারের জন্য টেন্ডারের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ফাইলটি বর্তমানে ডিপিপিতে আছে। প্রক্রিয়া শেষ হলে দ্রুত সংস্কারকাজ শুরু হবে। তবে কবে নাগাদ এই কাজ শুরু হবে, সে বিষয়ে নির্দিষ্ট কোনো সময়সীমা জানাননি তিনি। তবে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনার শরফ উদ্দিন আহমদ চৌধুরী অসুস্থ থাকায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
নগর পরিকল্পনাবিদরা মনে করেন, গাজীপুরের মতো দ্রুত উন্নয়নশীল একটি শহরে পরিকল্পনাহীন অবকাঠামোগত উন্নয়ন নাগরিক দুর্ভোগের অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, সময়মতো সংস্কার না হলে এই সড়কের বেহাল দশা শুধু দুর্ঘটনাই নয়, শহরের উৎপাদন ও অর্থনীতিতেও প্রভাব ফেলবে।