শেয়ার বিজ ডেস্ক : জাপানে কৃষির মেরুদণ্ড হিসেবে পরিচিত হোক্কাইডো দ্বীপ। দেশের অর্ধেকেরও বেশি দুগ্ধপণ্য আসে এখান থেকে। শীতকালে এটি পরিণত হয় বরফের রাজ্য, স্কি রিসোর্ট আর তুষার ভাস্কর্যের লীলাভূমিতে। আর গ্রীষ্মে পাহাড়চূড়া সেজে ওঠে ল্যাভেন্ডার, পপি আর সূর্যমুখীর রঙে।
একসময় কৃষি ও পর্যটন ছাড়া দ্বীপটিতে ভারী শিল্প তেমন ছিল না। স্থানীয়দের মাঝে এমন কথাও প্রচলিত ‘হোক্কাইডোতে যারা জন্মায় যারা, তারা বাসা বাঁধতে নয়, চলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে আসে।’ সেই ধারণা বদলে দিতে চলেছে জাপান সরকারের ‘সিলিকন ভ্যালি’ তৈরির উচ্চাভিলাষ। পৃথিবীর ৬০০ বিলিয়ন ডলারের চিপ বাজারে জাপান আবারও বড় খেলোয়াড় হিসেবে ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছে তারা। আর পরিকল্পনা বাস্তবায়নে হোক্কাইডোতে হচ্ছে সবচেয়ে বড় শিল্প বিনিয়োগ। গড়ে উঠছে চিপ-কারখানা, গবেষণা কেন্দ্র ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।
পুরো পরিকল্পনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে র্যাপিডাস নামের প্রতিষ্ঠান। আর তাকে শক্তি যোগাচ্ছে জাপান সরকার, টয়োটা, সনি, সফটব্যাংকসহ দেশটির সবচেয়ে ক্ষমতাধর করপোরেশনগুলো। আইবিএমের সঙ্গে অংশীদারিত্বে জন্ম নেয়া র্যাপিডাস জাপানের প্রথম আধুনিক ‘চিপ ফাউন্ড্রি’ বা সেমিকন্ডাক্টর কারখানা গড়ে তোলার লক্ষ্যে কয়েক বিলিয়ন ডলার সংগ্রহ করেছে। উত্তরাঞ্চলের ছোট শহর চিতোসেতে একটি বিশাল চিপ-কারখানা নির্মাণে সরকারের কাছ থেকে ১২ বিলিয়ন ডলার পেয়েছে র্যাপিডাস।
এই প্রকল্পে অগ্রগতি আসে যখন র্যাপিডাস ডাচ কোম্পানি এএসএমএলের কাছ থেকে বিশ্বের সবচেয়ে দামি ও জটিল যন্ত্র ইইউভি লিথোগ্রাফি সিস্টেম পায়। এ যন্ত্র দিয়েই তৈরি হচ্ছে জাপানের প্রথম ২ ন্যানোমিটারের ট্রানজিস্টর প্রোটোটাইপ। যা বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত চিপ প্রযুক্তিগুলোর একটি। এতদিন পর্যন্ত এ কৃতিত্ব ছিল শুধু তাইওয়ানের টিএসএমসি ও দক্ষিণ কোরিয়ার স্যামসাংয়ের। উন্নত প্রযুক্তির এ তালিকায় নাম লেখালো জাপানের র্যাপিডাস।
আগামী ২০২৭ সালের মধ্যে ২ ন্যানোমিটার চিপের মাস প্রোডাকশন শুরুর প্রত্যাশা করছে প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু বিশ্লেষকরা বলছেন, শুধু তৈরি করা নয়, উচ্চমান বজায় রেখে বিপুল পরিমাণ উৎপাদন করাই আসল চ্যালেঞ্জ।
২০২৪ সালের একটি প্রতিবেদনে আসিয়ান+৩ মাইক্রোইকোনোমিক রিসার্চ অফিস জানিয়েছে, প্রতিযোগিতায় তহবিল সংকটে পড়তে পারে র্যাপিডাস। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির তহবিল ৫ ট্রিলিয়ন ইয়েন যা প্রয়োজনের তুলনায় যথেষ্ট নয়।
অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক থিংকট্যাংক সিএসআইএস বলছে, র্যাপিডাসের উন্নত চিপ উৎপাদনের অভিজ্ঞতা নেই। আর টিএসএমসি বা স্যামসাংয়ের মতো প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় জ্ঞান পাওয়ার সম্ভাবনাও নেই। আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ গ্রাহক। এ দুই প্রতিষ্ঠান বহু বছর ধরে বড় টেক কোম্পানিগুলোর প্রধান চিপ সরবরাহকারী। র্যাপিডাস তাদের বাজারে ঢুকতে গেলে বড় প্রতিযোগিতায় পড়বে।
৪০ বছর আগেও বিশ্বের অর্ধেক সেমিকন্ডাক্টর তৈরি করত জাপান। আজ তা ১০ শতাংশে নেমে এসেছে। ৮০’র দশকে মার্কিন-জাপান বাণিজ্য উত্তেজনা ও পরবর্তী সময় তাইওয়ান-দক্ষিণ কোরিয়ার উত্থান জাপানের চিপ শিল্পকে পেছনে ফেলে দেয়।
তবে হারানো জায়গা ফিরে পেতে চায় টোকিও। ২০২০ থেকে ২০২৪ এর মধ্যে সরকার চিপ শিল্পে ২৭ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে। ২০২৪ সালের শেষ দিকে এআই ও সেমিকন্ডাক্টর শিল্পের জন্য আরো ৬৫ বিলিয়ন ডলারের প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়। তবে বড় চ্যালেঞ্জ জনসংখ্যা। দেশটি দ্রুত বার্ধক্যের দিকে ঝুঁকছে। সেমিকন্ডাক্টর খাতে দেশটিতে ৪০ হাজার ইঞ্জিনিয়ারের ঘাটতি রয়েছে। সংকট সমাধানে নতুন প্রশিক্ষণ দিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে কাজ করছে র্যাপিডাস। কিন্তু বিদেশি কর্মী ছাড়া পথ নেই, যদিও জাপানে বিদেশি কর্মী নিয়োগের পক্ষে জনসমর্থন কম।
প্রিন্ট করুন






Discussion about this post