নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের সার্বিক মূল্যস্ফীতি গত জুনে কিছুটা কমে ৮ দশমিক ৪৮ শতাংশ হয়েছে, যা বিগত ৩৫ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। এর আগে ২০২২ সালের জুলাইয়ে ৭ দশমিক ৪৮ শতাংশ মূল্যস্ফীতি হয়েছিল। এরপর গত জুনের মতো এত কম মূল্যস্ফীতি আর দেখা যায়নি। এ ছাড়া চার মাস ধরে মূল্যস্ফীতি কমল।
গতকাল সোমবার বিকাল বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) জুনের মূল্যস্ফীতির চিত্র প্রকাশ করেছে। বিবিএস বলছে, গত জুনে খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৭ দশমিক ৩৯ শতাংশ। আর খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি হয় ৯ দশমিক ৩৭ শতাংশ।
গত কয়েক বছর ধরে দেশের মূল্যস্ফীতি ঊর্ধ্বমুখী। দুই অঙ্কের মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরতে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের অনেক প্রচেষ্টাও চোখে পড়ে। তবে জুলাই আন্দোলনে সেই সরকারের পতন ঘটে। ২০২৪ সালের ওই আন্দোলনের পেছনেও উচ্চ মূল্যস্ফীতির প্রভাব কাজ করেছে বলে ধারণ বিশ্লেষকদের।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগের সরকারের পতনের পর দেশের হাল ধরে অন্তর্বর্তী সরকার। প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব নেয়ার পরপরই ড. মুহাম্মদ ইউনূস মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ নেয়ার কথা বলেন।
নতুন অর্থবছরের বাজেটে আগামী অর্থবছর শেষে মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৬ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য নিয়েছে সরকার।
গতকাল দুপুরে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে জুনের মূল্যস্ফীতির তথ্য জানান। ফেসবুক স্ট্যাটাসে শফিকুল আলম লিখেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের সুচিন্তিত নীতিকৌশলের ফলে মূল্যস্ফীতি দ্রুত কমছে। জুন মাসের (২০২৫ সাল) উপাত্ত অনুযায়ী পয়েন্ট-টুু-পয়েন্ট মূল্যস্ফীতি ৮ দশমিক ৪৮ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যা গত ২০২৪ সালের আগস্ট মাসের তুলনায় ২ শতাংশ কম।’
শফিকুল আলম আরও বলেন, ‘খাদ্য মূল্যস্ফীতি উল্লেখযোগ্য পরিমাণে হ্রাস পেয়ে ৭ দশমিক ৩৯ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যা গত দুই বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতিও হ্রাস পেতে শুরু করেছে এবং আগামী দিনে তা খুব দ্রুত কমে আসবে।’
বিবিএসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, জুন মাসে শহর ও গ্রামে খাদ্য কেনায় খরচ বেশ কমেছে। এ খাতে শহরে জুন মাসে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৭ দশমিক ৯৯ শতাংশ; যা মে মাসে ছিল ৯ দশমিক ২৯ শতাংশ।
অন্যদিকে গ্রামে খাদ্য মূল্যস্ফীতি জুনে দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক ১৪ শতাংশে, যা মে মাসে ছিল ৮ দশমিক ৩০ শতাংশ। গ্রামে খাদ্য বহির্ভূত খাতে মূল্যস্ফীতি মে মাসের ৯ দশমিক ৭৫ শতাংশ থেকে সামান্য কমে জুনে ৯ দশমিক ৭২ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। শহরে খাদ্যবহির্ভূত খাতে মূল্যস্ফীতি মে মাসের ৯ দশমিক ৬৩ শতাংশ থেকে কমে জুনে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৫৩ শতাংশে।
এর ফলে টানা চার মাস ধরে সার্বিক মূল্যস্ফীতি কমল। বিবিএস সূত্রে জানা গেছে, গত মার্চে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৩৫ শতাংশ। এরপর থেকে প্রতি মাসেই মূল্যস্ফীতি কমেছে। গত মে মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ। আর এপ্রিলে এই হার ছিল ৯ দশমিক ১৭ শতাংশ।
অন্তর্বর্তী সরকার যখন গত বছরের আগস্ট মাসে দায়িত্ব গ্রহণ করে তখন মূল্যস্ফীতি ছিল দুই অঙ্কের ঘরে। সরকারের চেষ্টায় তা এক অঙ্কের ঘরে আসে। আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে মূল্যস্ফীতি ৭ শতাংশে নেমে আসবে বলে সম্প্রতি আশা প্রকাশ করছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর।

Discussion about this post