Print Date & Time : 5 August 2025 Tuesday 12:08 am

জুলাই বিপ্লবের চেতনা ও ভারতীয় আধিপত্যবাদ

 

মো. জিল্লুর রহমান : ভারত বাংলা‌দে‌শের তিন দিকে ঘেরা সবচেয়ে নিকটতম প্রতিবেশী রাষ্ট্র। কিন্তু তার আগ্রাসী, আধিপত‌্য ও প্রভূত্বমূলক নোভা‌বের জন‌্য ধী‌রে ধী‌রে বাংলা‌দে‌শের শক্ররা‌ষ্ট্রে প‌রিণত হ‌চ্ছে। বিশেষ করে ২০২৪ সা‌লের‌ ৫ আগ‌স্টের রাজ‌নৈ‌তিক পটপরিবর্ত‌নের পর এই স‌ম্প‌র্কের আরও ভয়াবহ অবন‌তি ঘ‌টে। ভারত কিছু‌তেই আমা‌দের এই প‌রিবর্তন‌কে মে‌নে নি‌তে পারছে না। তারা একটি দেশের পরিবর্তে একটি দলকে অন্ধভাবে সমর্থন করছে। দলটিকে নিয়ে বরং তারা বাংলা‌দে‌শের বিরু‌দ্ধে বি‌ভিন্ন ধর‌নের ষড়য‌ন্ত্রে লিপ্ত হ‌চ্ছে। মূলত আধিপত‌্যবাদী ও অবন্ধুত্বসুলভ আগ্রাসী আচরণের কার‌ণে তথাক‌থিত ধর্ম‌নির‌পেক্ষ এবং গণতা‌ন্ত্রিক রাষ্ট্র ভার‌তের স‌ঙ্গে কো‌নো প্রতিবেশীরই সম্পর্ক কখ‌নও ভা‌লো ছিল না, এখ‌নও নয়।

বাংলা‌দে‌শের রাজনী‌তি‌তে ভারতীয় মোড়‌লিপনা ও আধিপত‌্যবাদের সূচনা ঘ‌টে ১৯৭১ সা‌লের অ‌ক্টোব‌রে মুজিবনগর সরকা‌র ও ভারত সরকা‌রের ম‌ধ্যে এক‌টি সাত দফা গোপন চু‌ক্তির মাধ‌্যমে। মু‌ক্তিযু‌দ্ধের সেক্টর কমান্ডারদের স‌ঙ্গে কো‌নো ধরনের পরামর্শ না ক‌রে মুজিবনগর সরকার এই চু‌ক্তি ক‌রে। এই চু‌ক্তি‌তে ভ‌বিষ‌্যতের স্বাধীন বাংলা‌দেশ ভার‌তের অনুগত দাসত্ব রা‌ষ্ট্রে প‌রিণত হওয়ার মূল বীজ রো‌পিত হয়। এই চু‌ক্তি‌তে স্বাক্ষর ক‌রেছি‌ল মু‌জিবনগর সরকা‌রের প‌ক্ষে অস্থায়ী রাষ্ট্রপ‌তি সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও ভারত সরকা‌রের প‌ক্ষে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। কথিত আছে এ গোপন চুক্তি সাক্ষরের পর তাজউদ্দীন আহমদ অজ্ঞান হয়ে পড়ে গিয়েছিলেন।

 

চুক্তিতে বলা হয়েছিল—১. ভারতীয় সমর‌বিদ‌দের তত্ত্বাবধা‌নে বাংলাদেশে আধা সামরিক বা‌হিনী গঠন করা হ‌বে। ত‌বে কো‌নো সাম‌রিক বা‌হিনী গঠন করা যা‌বে না। গুরুত্বের দিক হ‌তে এবং অস্ত্রশ‌স্ত্রে ও সংখ‌্যায় এই বা‌হিনী বাংলা‌দে‌শের মূল বা‌হিনী হ‌তে বড় ও তাৎপর্যপূর্ণ হ‌বে। ২. ভারত থে‌কে সামরিক অস্ত্রশস্ত্র ক্রয় কর‌তে হ‌বে এবং ভারতীয় সমর‌বিদ‌দের পরাম‌র্শানুযায়ী তা কর‌তে হ‌বে। বাংলা‌দে‌শের স্বাধীনতা যু‌দ্ধে অংশ না নেয়া সরকা‌রি কর্মকর্তা‌দের চাক‌রিচ্যুত ক‌রে তা‌দের স্থ‌লে ভারতীয় কর্মকর্তা‌দের নি‌য়োগ করা হ‌বে। ৩. ভারতীয় পরাম‌র্শেই বাংলা‌দে‌শের ব‌হিঃবা‌ণিজ‌্য কর্মসূচি নির্ধারণ করতে হ‌বে। ৪. বাংলা‌দে‌শের বাৎস‌রিক ও পঞ্চবা‌র্ষিকী প‌রিকল্পনা ভারতীয় প‌রিকল্পনার স‌ঙ্গে সামঞ্জস‌্যপূর্ণ হ‌তে হ‌বে। ৫. বাংলা‌দে‌শের পররাষ্ট্রনী‌তি ভারতীয় পররাষ্ট্রনীতির অনুরূপ হ‌তে হ‌বে। ৬. ভারত-ব‌াংলা‌দে‌শের চুক্তিগু‌লো ভারতীয় সম্মতি ব‌্যতীত বা‌তিল করা যা‌বে না। ৭. বাংলা‌দে‌শের স্বাধীনতা যু‌দ্ধের নেতৃত্বের দা‌য়িত্ব শুধু ভারতীয় সেনাবা‌হিনীর প্রধা‌নের হা‌তে ন‌্যস্ত থাক‌বে। এই চুক্তি অনুযায়ী ভারত যে‌কো‌নো সময় যে‌কো‌নো সংখ‌্যায় বাংলা‌দে‌শের অভ‌্যন্ত‌রে প্রবেশ কর‌তে পার‌বে এবং বাধাদানকারী শ‌ক্তি‌কে চুরমার ক‌রে অগ্রসর হ‌তে পার‌বে।

এই চু‌ক্তির পর পরই ৬ ডি‌সেম্বর ভারত বাংলা‌দেশ‌কে স্বীকৃ‌তি প্রদান ক‌রে। শুরু হয় পাকবা‌হিনীর বিরু‌দ্ধে মু‌ক্তিবা‌হিনী ও ভারতীয় বা‌হিনীর যৌথ আক্রমন। যৌথ বাহিনীর তীব্র আক্রম‌ণের ফ‌লে পাকবা‌হিনী দি‌শেহারা হ‌য়ে প‌রে। অতঃপর ১৬ ডিসেম্বর বিকাল‌ দি‌কে ঢাকার রেস‌কোর্স ময়দা‌নে ৯৩ হাজার সৈন‌্য, অস্ত্রশস্ত্র, গোলাবারুদ, রসদসহ নিঃশ‌র্তে পাকবা‌হিনীর পূর্বাঞ্চ‌লের প্রধান লে. জে. আমির আব্দুল্লাহ খান নিয়াজী যৌথবা‌হিনীর প্রধান লে. জে. জগ‌জিৎ সিং অ‌রোরার নিকট আত্মসমপর্ণ ক‌রে এবং পৃ‌থিবীর মান‌চি‌ত্রে স্বাধীন-সার্ব‌ভৌম রাষ্ট্র হি‌সে‌বে বাংলা‌দেশের অভ্যুদয় ঘ‌টে।

বিস্ময়কর বিষয় হ‌লো, দা‌লি‌লিকভা‌বে মু‌ক্তিযুদ্ধের ইতিহা‌সে ভারত তা‌দের একক কৃতিত্ব ও নিপুণতা অটুট রাখার জন‌্য মু‌ক্তিযু‌দ্ধের সর্বা‌ধিনায়ক ক‌র্নেল আতাউল গ‌নি ওসমানী‌কে আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠা‌নে সেদিন আস‌তে দেয়‌নি, তা‌কে হত‌্যার হুম‌কি পর্যন্ত দেয়া হ‌য়েছিল! আরও অবাক হওয়ার বিষয় হ‌লো, এই আত্মসমর্পণ চু‌ক্তি স্বাক্ষ‌রের পরপরই স্বাধীন বাংলা‌দেশের প‌রিচালনার দা‌য়িত্ব লেফটেন্যান্ট জেনারেল জগজিৎ সিং অ‌রোরার নিকট চ‌লে যায়। এমন‌কি আত্মসমর্পণকারী সকল পা‌কিস্তান সাম‌রিক ও আধাসাম‌রিক বা‌হিনীর নিরাপত্তা ও কল‌্যা‌ণ নি‌শ্চিতকর‌ণের দা‌য়িত্বও চ‌লে যায় ভারতীয় বা‌হিনীর হা‌তে! আন্তর্জা‌তিক রীতি অনুযায়ী এটার ন‌্যস্ত হ‌তো বিজয়বা‌হিনী মু‌ক্তি‌যোদ্ধা‌দের হা‌তে। এটা হ‌লে ম‌ু‌ক্তিবা‌হিনী যুদ্ধাপরাধী হি‌সে‌বে পা‌কিস্তান সাম‌রিক বা‌হিনীর বিচার কর‌তে পার‌ত এবং তা‌দের জমাকৃত অস্ত্র, গোলাবারুদ ও রসদ সামগ্রী দখ‌লে নি‌তে পার‌ত।

সম্প্রতি ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময় পাকিস্তান ১৯৭২ সালের ঐতিহাসিক শিমলা চুক্তি বাতিল করেছে। অনেকেই বুঝে না বুঝে এটি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা করছে, কিন্তু শিমলা চুক্তিতে আসলে কী ছিল? ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করে। তখন পাকিস্তানি বাহিনী ভারতীয় সেনা ও বাংলাদেশি মুক্তিবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে। বাংলাদেশ থেকে আত্মসমর্পণ করা ৯৩ হাজার পাকিস্তানি সৈন্য ভারত বন্দি করে রাখে। এই বিপুলসংখ্যক বন্দির বিনিময়ে ভারত ১৯৭২ সালে পাকিস্তানের সঙ্গে ‘শিমলা চুক্তি’ করে। এতে ভারত পাকিস্তানকে দয়া করে ক্ষমা করে দেয় এবং বন্দিদের ফেরত পাঠায়। বিনিময়ে পাকিস্তান কাশ্মীর ইস্যু আন্তর্জাতিক ফোরামে না তুলার অঙ্গীকার করে এবং ভারত তা ব্যবহার করে কাশ্মীরকে কার্যত স্থায়ীভাবে দখল করে নেয়। মানে বাংলাদেশের কাঁধের ওপর বন্দুক রেখে কাশ্মীর দখল করে নেয়া হয় পাকিস্তানের কাছ থেকে। কিন্তু আন্তর্জা‌তিক নিয়‌মের ব‌্যত‌্যয় ঘ‌টি‌য়ে নি‌জে‌দের প্রভূত্ব ও দা‌ম্ভিকতা বজায় রাখার স্বা‌র্থে ভারতীয় বা‌হিনী এমন জঘন‌্য কাজ‌টি কর‌ল, যা বাংলা‌দে‌শের স্বাধীনতা ও সার্ব‌ভৌম‌ত্বের আঘাত স্বরূপ। আরও অপমানজনক বিষয় হ‌লো, দা‌লি‌লিকভা‌বে বাংলা‌দে‌শের মহান মু‌ক্তিযুদ্ধ‌কে ভারত সরকার ইতিহাসে সবসময় মুক্তিযুদ্ধ হি‌সে‌বে স্বীকৃ‌তি না দি‌য়ে ‘পাক-ভারত যুদ্ধ’ হি‌সে‌বে অ‌ভি‌হিত ক‌রে আস‌ছে। আজও ভারত সরকার ১৯৭১ সা‌লের মহান মু‌ক্তিযুদ্ধ‌কে ‘মু‌ক্তিযুদ্ধ’ হি‌সে‌বে স্বীকৃ‌তি দেয়নি! এটা অবশ‌্য ভার‌তের আগ্রাসী ম‌নোভা‌বেরই বহিঃপ্রকাশ মাত্র।

১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সত্যিকারভাবে স্বাধীন হয়নি। পাকিস্তানিদের কাছ থেকে বাংলাদেশ ভারতীয় আধিপত্যবাদে চলে গিয়েছিল। তখন দেশের ১৯টি মহকুমায় ভারতের কেবিনেট থেকে প্রশাসক (ডিসি) নিয়োগ করা হয়েছিল। বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী মহান মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছিল। অথচ দেশের সব থানায় ওসি হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছিল ভারতীয় সেনারা। সামরিক-বেসামরিক মানুষ মিলে দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে দেশ স্বাধীন করেছিল। অথচ বিজয় ছিনতাই করেছিল ভারত।

সবচেয়ে দুঃখজনক বিষয় হ‌লো, এটা নি‌য়ে কো‌নো সরকারই আনুষ্ঠা‌নিকভা‌বে ভারত সরকা‌রের নিকট কো‌নো প্রতিবাদ জানায়‌নি! অথচ মুক্তিযুদ্ধের ইস‌্যু নিয়ে অ‌নেক সরকারই ক্ষমতায় এসে‌ছে। এটা সর্বজন স্বীকৃত, ১৯৭১ সা‌লের মু‌ক্তিযুদ্ধের বিজয় কা‌রও সহানুভূ‌তির দান নয়, এটা হাজারো মানুষের র‌ক্তে কেনা। আজ এটা স্পষ্ট  যে, আন্তর্জা‌তিক শক্তি‌তে প‌রিণত হওয়ার প্রবল আকাঙ্ক্ষা ও জাতীয় স্বার্থ চ‌রিতার্থ করার জন‌্য জন‌্যই ভারত সে‌দিন বাংলা‌দে‌শের প‌ক্ষে অস্ত্র ধ‌রে‌ছিল। মূলত বাংলা‌দেশকে চির অনুগত রাষ্ট্র বানা‌নোর জন‌্যই ভার‌ত ১৯৭১ সা‌লের মু‌ক্তিযু‌দ্ধে সাহায‌্য-সহ‌যো‌গিতা করে‌‌ছিল, এখা‌নে মান‌বিক কে‌ানো বিষয় ছিল না।

আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল এম.এ.জি ওসমানীকে পরিকল্পিতভাবে ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানের আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে থাকতে দেয়া হয়নি। ১৯৭২ সালের ৩০ মার্চ শেখ মুজিবুর রহমানের অনুরোধে ইন্দিরা গান্ধী সেদিন বাংলাদেশ থেকে সব ভারতীয় সৈন্য প্রত্যাহার করে নিয়েছিল। ১৯ মার্চ এক কুচকাওয়াজের মাধ্যমে ভারতীয় সেনাদের আনুষ্ঠানিক বিদায় জানানো হয়েছিল। ভারতীয় সেনারা যাওয়ার সময় পাকিস্তানের জমা দেয়া অস্ত্র, গোলাবারুদ আর বাংলাদেশের সব পাটকল, চিনিকল ও শিল্প কলকারখানার যন্ত্রপাতি খুলে নিয়ে যায়। স্বাধীন দেশের সব সম্পদ লুট করে নিয়ে যায়। নবম সেক্টরের অধিনায়ক মেজর জলিল তখন খুলনায় ভারতীয় বাহিনীর লুটপাটের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় বন্দি হন। কিন্তু কোর্ট মার্শালের বিচারে তিনি নির্দোষ প্রমাণিত হন। তখন মেজর জলিল নিজে থেকেই এই অন্যায় আচরণের প্রতিবাদে সেনাবাহিনী থেকে পদত্যাগ করেন।

আসলে আওয়ামী লীগ ১৯৭১ থেকেই ভারতের এজেন্ট হিসেবে কাজ করেছে এবং এখনও ভারতে পালিয়ে গিয়ে একই কাজ করছে। মুক্তিযুদ্ধ ছিল ভারতের আধিপত্যবাদ প্রতিষ্ঠার একটি পরিকল্পিত পাতানো ফাঁদ। আওয়ামী লীগ ১৯৭১ সালের পর যতবার ক্ষমতায় এসেছে ততবার তারা ভারতের এজেন্ট হিসেবে দেশ শাসন করেছে। দেশকে ভারতের একটা কলোনি বানিয়েছিল। ভোটসহ দেশের মানুষের সব নাগরিক অধিকার হরণ করেছিল। তাই নতুন করে ভারতীয় আধিপত্যের অবসান ঘটাতে আবার চব্বিশের জুলাই বিপ্লবের জন্ম হয়েছে। আমাদের ১৯৪৭, ১৯৫২, ১৯৭১ আর ২০২৪ একই সূত্রে গাঁথা। যে কারণে ১৯৪৭ থেকে ১৯৫২ হয়ে ১৯৭১-এর জন্ম হয়েছে, ঠিক একই কারণে ২০২৪-এর সৃষ্টি হয়েছে। সময় এবং পরিবেশ ভিন্ন হলেও প্রতিটি সংগ্রাম ছিল আমাদের অধিকার আদায়ের লড়াই। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি দেশে এখনও চাঁদাবাজি, দখলবাজি, লুটপাট থামছে না। শুধু দলীয় ব্যানার-সাইনবোর্ড বদল হয়েছে। কিন্তু সমস্যার সমাধান হয়নি। আগে একদল অপকর্ম করত, এখন আরেক দল করছে। জনগণ এসব অপরাজনীতির অবসান চায়। রাজনীতিতে আজ একটা রেনেসাঁ বিপ্লব দরকার। রাজনীতি হবে ভারতীয় আধিপত্যমুক্ত জুলাই বিপ্লবের চেতনা সমৃদ্ধ। হানাহানি স্বার্থের দ্বন্দ্ব নয়, জনগণের কল্যাণই হোক মুখ্য।

 

ব্যাংকার ও কলাম লেখক

zrbbbp@gmail.com