Print Date & Time : 2 September 2025 Tuesday 12:38 pm

‘জেড’ থেকে ‘এ’ ক্যাটাগরিতে সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স

নিজস্ব প্রতিবেদক : পুঁজিবাজারে বিমা খাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানি সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের ক্যাটাগরি পরিবর্তন করা হয়েছে। কোম্পানিকে ‘জেড’ ক্যাটাগরি থেকে ‘এ’ ক্যাটাগরিতে উন্নীত করা হয়েছে।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) সূত্রে গতকাল সোমবার এ তথ্য জানা গেছে।

কোম্পানিটি ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত আর্থিক বছরের ঘোষিত ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে পাঠিয়েছে। এ কারণে ‘এ’ ক্যাটাগরিতে উন্নীত হয়েছে কোম্পানিটি।

১ সেপ্টেম্বর থেকে কোম্পানিটি ‘এ’ ক্যাটাগরিতে লেনদেন করবে। তবে ক্যাটাগরি পরিবর্তনের কারণে আগামী ৭ কার্যদিবসের মধ্যে কোম্পানিকে ঋণ সুবিধা দিতে ব্রোকার হাউজ এবং মার্চেন্ট ব্যাংককে নিষেধ করেছে ডিএসই।

এর আগে,  ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত আর্থিক বছরের ঘোষিত লভ্যাংশ বিনিয়োগকারীদের কাছে পাঠায় কোম্পানিটি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির এক কর্মকর্তা শেয়ার বিজকে বলেন,  গত ৩১ আগস্ট কোম্পানিটি ১১তম বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) সফলভাবে সম্পন্ন করে। এ সভায় আমরা বিনিয়োগকারীদের ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত আর্থিক বছরের জন্য ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ অনুমোদন করি। এরপরই পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ‘এ’ ক্যাটাগরিতে উন্নীত করে।

এদিকে এক বছরের ব্যবধানে ৭৭ কোটি টাকার জীবন বিমা তহবিল কমেছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের। কমেছে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা সক্ষমতাও। গত ২৭ আগস্ট ডিএসই মাধ্যমে প্রকাশিত সর্বশেষ আর্থিক প্রতিবেদনের সার সংক্ষেপে এ তথ্য ওঠে এসেছে।

প্রতিবেদন বলা হয়, ২০২৪ হিসাববছরের ৩০ সেপ্টেম্বর শেষে কোম্পানির জীবন বিমা তহবিলের আকার দাঁড়িয়েছে ৭৯১ কোটি ৫১ লাখ ৫০ হাজার টাকা। আগের বছরের একই সময়ে যেখানে তহবিলের আকার ছিল ৮৬৮ কোটি ৫১ লাখ ৪০ হাজার টাকা। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে কোম্পানির জীবন বিমা তহবিলের আকার কমেছে ৭৬ কোটি ৯৯ লাখ ৯০ হাজার টাকা।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে একই দিনে কোম্পানিটির ২০২৪ সালের প্রথম (জানুয়ারি-মার্চ), দ্বিতীয় (এপ্রিল-জুন) এবং তৃতীয় (জুলাই-সেপ্টেম্বর) প্রান্তিকের আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। যদিও বিএসইসির কোম্পানি আইন অনুযায়ী, প্রান্তিক শেষ হওয়ার পরবর্তী ৬০ কার্যদিবসের মধ্যে কোম্পানিকে ওই প্রান্তিকের আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে কোম্পানিটি বিএসইসির আইন লঙ্ঘন করেছে। এরআগে গত জুন মাসে সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির তহবিল থেকে ১৮৭ কোটি ৮৪ লাখ ১৫ হাজার ৯৬৬ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটির প্রয়াত সাবেক চেয়ারম্যান মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস ও তার স্ত্রী ফজলুতুননেসাসহ ৮ জনের ১৪১ ব্যাংক হিসাব ও ১১টি বিও নম্বরের শেয়ার অবরুদ্ধের আদেশ দেন আদালত।

ঢাকার মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ জাকির হোসেন গালিবের আদালত দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ আদেশ দিয়েছিলেন। অন্য পরিচালকরা, গোলাম কুদ্দুসের মেয়ে ফৌজিয়া কামরুন তানিয়া, তাসনিয়া কামরুন অনিকা, ছেলে মোস্তফা কামরুল সোবহান, কামরুলের স্ত্রী শাফিয়া সোবহান চৌধুরী, নুর ই হাফজা, সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির সাবেক সিএফও ও মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা মীর রাশেদ বিন আমান। দুদকের সহকারী পরিচালক রাকিবুল হায়াত অবরুদ্ধের আবেদন করেন। দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

আবেদনে বলা হয়েছে, সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির বোর্ড পরিচালক এবং প্রধান অর্থ কর্মকর্তা ও ভারপ্রাপ্ত মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তাসহ একই পরিবার সাতটি পদ গ্রহণ করে। পরে একে অপরের সহায়তায় প্রতারণা ও জাল জালিয়াতির মাধ্যমে জাল চুক্তিনামা, বিশ্বাসভঙ্গের মাধ্যমে বিভিন্ন সময়ে অবৈধভাবে সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির তহবিল থেকে ১৮৭ কোটি ৮৪ লাখ ১৫ হাজার ৯৬৬ টাকা উত্তোলন করে। এর মাধ্যমে ওই অর্থ তাদের নামের বিভিন্ন কোম্পানি ও ব্যাংক হিসাবে স্থানান্তর ও রূপান্তরের মাধ্যমে আত্মসাৎ করেছে, যা মানিলন্ডারিং আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

তদন্তকালে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, আসামিরা মালিকানাধীন এবং তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামের অস্থাবর সম্পদগুলো অন্যত্র হস্তান্তর, স্থানান্তর বা বেহাত করার প্রচেষ্টা করছেন। আসামিরা মালিকানাধীন এবং তাদের অর্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামীয় ব্যাংক হিসাব ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের হিসাব বা শেয়ার অবরুদ্ধ করা না হলে বিচারকালে তা রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করা সম্ভব হবে না। এতে রাষ্ট্রের অপূরণীয় ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে আসামিদের মালিকানাধীন এবং তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামীয় ব্যাংক হিসাব ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের হিসাব বা শেয়ার (বিও আইডি) অবরুদ্ধ করা একান্ত প্রয়োজন।

সোনালী লাইফ ২০১৩ সালে নিবন্ধন পাওয়া একটি নতুন প্রজšে§র জীবন বিমা কোম্পানি, যার ২০৫টি শাখা আছে। এর ৭ লাখের বেশি বিমা গ্রাহক রয়েছেন। এজেন্ট আছে ৩০ হাজারের মতো। কোম্পানিটির কর্মকর্তা-কর্মচারী সংখ্যা প্রায় ৮০০।