শেয়ার বিজ ডেস্ক : গাজা যুদ্ধের অবসান এবং অবশিষ্ট বন্দিদের মুক্তির জন্য প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে চুক্তিতে রাজি করাতে ইসরাইয়েলে ১৫ হাজারেরও বেশি মানুষ রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেছেন। যোদ্ধাগোষ্ঠী হামাসের হাতে এখনও যেসব বন্দি আটক আছেন, তাদের পরিবারের সদস্য ও সমর্থকরা জেরুজালেমের প্যারিস স্কোয়ার দখল করে সমাবেশ করেছেন। অন্যদিকে তেল আবিবেও বিক্ষোভ হয়েছে। খবর: বিবিসি।
হামাসের হাতে আটক ৪৮ জিম্মির মধ্যে প্রায় ২০ জন জীবিত আছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। ইসরাইয়েল এখনও প্রস্তাবিত বন্দিবিনিময় চুক্তিতে আনুষ্ঠানিকভাবে সাড়া দেয়নি। তবে দেশটি সব জিম্মিকে ফেরত আনার দাবি জানিয়েছে। নেতানিয়াহু দাবি করেছেন, হামাসের বিরুদ্ধে সম্পূর্ণ বিজয়ই বন্দিদের মুক্তির পথ খুলে দেবে। উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর দক্ষিণ ইসরাইয়েলে হামাসের হামলায় প্রায় ১ হাজার ২০০ মানুষ নিহত হয় এবং ২৫১ জনকে গাজায় নিয়ে জিম্মি করে হামাস। এরপর ইসরাইল পাল্টা ব্যাপক সামরিক অভিযান চালায়। তাতে কমপক্ষে ৬৪ হাজার ৩৬৮ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। জাতিসংঘ এই পরিসংখ্যানকে নির্ভরযোগ্য বলে মনে করে। তবে ইসরাইল তা অস্বীকার করছে।
এদিকে ইসরাইয়েলের ভেতরে প্রতিবাদ এবং আন্তর্জাতিক মহলের যুদ্ধবিরতির দাবি ক্রমেই জোরালো হচ্ছে। তবুও ইসরাইয়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) গাজায় আরও আক্রমণ বাড়ানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। নেতানিয়াহুর সরকার ঘোষণা দিয়েছে, গাজা উপত্যকার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিতে এবং হামাসকে সম্পূর্ণরূপে পরাজিত করতে তারা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। শনিবার রাতে তেল আবিব ও জেরুজালেমে সাম্প্রতিক মাসগুলোর মধ্যে অন্যতম বৃহৎ বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। নেতানিয়াহুর জেরুজালেমের বাসভবনের কাছেই বক্তারা একের পর এক আহ্বান জানান, অবিলম্বে হামাসের সঙ্গে চুক্তি করে প্রিয়জনদের ফেরত আনতে। মাতান আংগ্রেস্ট নামে গাজায় আটক এক আইডিএফ সেনার মা আনাত আংগ্রেস্ট ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এটি হুমকি নয়, প্রধানমন্ত্রী। আমার সন্তানের কিছু হলে আপনাকে এর জবাব দিতে হবে, এটি এক মায়ের কথা। বিক্ষোভকারীরা বলছেন, যুদ্ধ সম্প্রসারণ বন্দিদের জীবন আরও বিপন্ন করছে। কিন্তু নেতানিয়াহু তা উপেক্ষা করে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন। অনেক সাবেক সামরিক নেতা প্রকাশ্যে বলছেন, গাজায় সামরিকভাবে এর বেশি কিছু অর্জন সম্ভব নয়। প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরাইল কাটজ সম্প্রতি গাজা সিটির বহুতল ভবন ধ্বংসের ভিডিও শেয়ার করেছেন। তিনি বার্তা দিয়েছেন, এটি কেবল শুরু। এদিকে রোববারও আইডিএফ একটি বহুতল ভবন ধ্বংস করে দিয়েছে। তারা দাবি করে, সেখানে হামাসের গোয়েন্দা সরঞ্জাম ছিল। অন্যদিকে বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিরা বলছেন, এসব ভবনে সাধারণ মানুষ আশ্রয় নিয়েছিল। আন্তর্জাতিক মহল বারবার ইসরাইলকে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানাচ্ছে, কিন্তু কোনো কথায় কর্ণপাত করছে না নেতানিয়াহু।
ডেনমার্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লার্স রাসমুসেন জেরুজালেমে গিয়ে বলেন, আমরা গাজার মানবিক বিপর্যয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। তাই ইসরায়েলকে সামরিক অভিযান বন্ধ করার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করছি। তবে ইসরাইয়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিদেওন সা’আর সতর্ক করে বলেন, ইউরোপের কিছু দেশ যদি ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেয়, তবে তা গুরুতর পরিণতি ডেকে আনবে। তিনি আরও ইঙ্গিত দেন, পশ্চিম তীর সংযুক্ত করার প্রশ্নে শিগগিরই সিদ্ধান্ত হতে পারে। এদিকে ২৪ ঘণ্টায় ইসরাইলি বিমান হামলায় কমপক্ষে ৮৭ জন নিহত হয়েছেন বলে গাজার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। একই সময়ে দুর্ভিক্ষ ও অপুষ্টিতে আরও পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে তিনটি শিশুও রয়েছে।

Discussion about this post