শেয়ার বিজ ডেস্ক : মার্কিন নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে তেল কিনে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে রাশিয়াকে মদত দিয়েছে ভারত! এই অভিযোগে চলতি মাসের গোড়াতেই ভারতীয় পণ্যে জরিমানাসহ ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের কথা জানিয়েছিল মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সরকার। তাতে জানানো হয়েছে, গতকাল বুধবার সকাল (ভারতীয় সময়) থেকে আমেরিকায় রপ্তানি করা ভারতীয় পণ্যে ৫০ শতাংশ শুল্ক নেয়া হবে। খবর: হোয়াইট হাউস।
ট্রাম্পের ৫০ শতাংশ শুল্ক ও ভারত-মার্কিন বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে অনিশ্চয়তার আবহে মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি অর্থ ও বাণিজ্যমন্ত্রী, উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা ও অর্থনীতিবিদদের সঙ্গে বৈঠকে করেছেন দিল্লিতে। ভারতের সচিবালয়ের একটি সূত্র জানায়, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার বাজারে টিকে থাকা এবং আর্থিক বৃদ্ধির গতি ধরে রাখার বিষয়ে বিকল্প পথ নিয়ে আলোচনা হয়েছে ওই বৈঠকে।
অন্য দিকে গত মঙ্গলবার জার্মান সংবাদপত্র ফ্রাঙ্কফুর্টার অলগেমেইনে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, ট্রাম্প সম্প্রতি মোদির সঙ্গে ফোনে কথা বলার জন্য অন্তত চারবার চেষ্টা করেছেন, কিন্তু নয়াদিল্লি তাতে সাড়া দেয়নি।
গত মঙ্গলবার প্রকাশিত মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি দপ্তরের প্রস্তুত করা বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গত ২৭ আগস্ট আমেরিকার ইস্টার্ন জোনের (রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসি এই জোনের অন্তর্গত) সময় অনুযায়ী, রাত ১২টা ১ মিনিট থেকে কার্যকর হবে নয়া শুল্ক। ২৫ শতাংশ শুল্কের পাশাপাশি ২৫ শতাংশ ‘বাড়তি শুল্ক’ (আদতে জরিমানা) কার্যকর করার কারণও স্পষ্ট জানিয়েছে ট্রাম্প সরকার; বলেছে, রাশিয়া থেকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে তেল কেনে ভারত, যার জেরেই ২৫ শতাংশ বাড়তি শুল্ক চাপানো হচ্ছে।
পরিসংখ্যান তুলে ধরে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শুধু ২০২৪ সালেই ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং রাশিয়ার মধ্যে ৬৭ হাজার ৫০০ কোটি ইউরোর দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য হয়েছে। ২০২৩ সালে বাণিজ্য হয়েছে ১৭ হাজার ২০০ কোটি ইউরোর, সে হিসাবে দেখতে গেলে যা ভারত-রাশিয়ার মোট বাণিজ্যের চেয়ে অনেক বেশি। শুধু তা-ই নয়, ২০২৪ সালে ইউরোপের প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানির পরিমাণও ১৬৫ লাখ টনে গিয়ে পৌঁছেছে, যা ২০২২ সালের রেকর্ডকেও ছাড়িয়ে গেছে।
কেবল জ্বালানিই নয়, রাশিয়া থেকে সার, খনিজ, রাসায়নিক দ্রব্য, লোহা, ইস্পাত ও নানা যন্ত্রপাতিও আমদানি করে ইউরোপ। পিছিয়ে নেই আমেরিকাও। রাশিয়ার কাছ থেকে তারা পারমাণু শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় ইউরেনিয়াম হেক্সাফ্লোরাইড, প্যালাডিয়াম, বিবিধ সার ও রাসায়নিক দ্রব্য কেনে।
গত সোমবার রাতেই গুজরাতের আহমেদাবাদের এক সভা থেকে নরেন্দ্র মোদি আবার ভারতের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন। তিনি বলেছেন, যতই চাপ আসুক না কেন, আমরা তার মোকাবিলা করার জন্য শক্তিবৃদ্ধি করে যাব। আমরা আত্মনির্ভর ভারতের সংকল্প নিয়েছিলাম। সেই সংকল্পের পথে আমরা অনেক দূর অগ্রসর হয়েছি। দেশ শক্তিশালী হয়েছে।’ সামপ্রতিক একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, ট্রাম্প সরকার ভারতীয় পণ্যে ৫০ শতাংশ শুল্ক চাপালে প্রায় চার হাজার কোটি ডলারের (প্রায় সাড়ে তিন লাখ কোটি টাকা) রপ্তানি ধাক্কা খাবে।

Discussion about this post