শামসুল আলম, ঠাকুরগাঁও : ঠাকুরগাঁও জেলা দেশের উত্তরের কৃষিনির্ভর একটি জেলা। আমন রোপণ নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন জেলার কৃষকরা। সদর উপজেলা ও জেলার বিভিন্ন স্থানে গিয়ে দেখা যায়, কিছু স্থানে চারা তুলছেন আর রোপণ শুরু করেছেন কৃষকরা। কিন্তু বৃষ্টির অভাবে কৃষকরা চারা রোপণ করতে পারছেন না। আর আগে থেকেই যারা চারা রোপণ করেছেন। পানির অভাবে ধানক্ষেত ফেটে চৌচির হয়ে আছে। এতে করে মারাত্মক সমস্যায় পড়েছেন কৃষকরা। কয়েকদিন আগের হালকা বৃষ্টির সঙ্গে বেশ কিছু কৃষককে শ্যালোমেশিন ও বরেন্দ গভীর নলকূপের সাহায্যে পানি দিতে দেখা যায়।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ভেলাজান, রুহিয়া, দানারহাট, বরুনাগাঁও ও রাণীশংকৈল, শীবগঞ্জ, নারগুন, বেগুনবাড়ী, খোঁচাবাড়ী, পীরগঞ্জ, হরিপুর উপজেলাসহ রুহিয়া থানার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, আমনের চারা উঠানো ও রোপণের দৃশ্য। এতে দলবেঁধে শ্রমিকরা কোথাও আমনের চারা তুলছেন, আবার কোথায় চারা রোপণ করছেন। এদের মধ্যে নারী শ্রমিকদের চারা রোপণের দৃশ্য চোখে পড়ে বেশ কয়েক জায়গায়।
জনপ্রিয় বেশ কয়েকটি জাতের ধান আবাদ করা হবে বলে জানান কৃষকরা। তবে বৃষ্টির পানির অভাবে উঁচু জমিতে লাগানো ধানক্ষেত শুকিয়ে গেছে। এতে করে বৃষ্টির পানির অপেক্ষায় রয়েছেন তারা।
সদর উপজেলার ভেলজান গ্রামের কৃষক আলম হোসেন জানান, তিনি এ বছর আড়াই একর জমিতে আমন ধান লাগানোর পরিকল্পনা করেছি। কিন্তু কয়েক দিন ধরে হালকা বৃষ্টির মধ্যে গভীর নলকূপের সাহায্যে কিছু জমিতে আমনের চারা লাগিয়েছি। কিছু জমিতে বৃষ্টির অভাবে এখনও লাগাতে পারিনি।
সদর উপজেলার আখানগর এলাকার কৃষক রফিকুল ইসলাম জানান, প্রত্যেক বছরের মতো এ বছর তিনি তিন একর জমিতে আমন লাগাবেন। জমি প্রস্তুতও করেছেন, কিন্তু বৃষ্টির পানির অভাবে এখনও রোপণ করতে পারেননি। এ অবস্থায় আমন লাগানোর সময় পেরিয়ে যাওয়ার চিন্তায় রয়েছেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অফিস জানায়, চলতি বছর জেলায় এ বছর আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে এক লাখ ৩৭ হাজার ৩৫০ হেক্টর। এর মধ্যে আবাদ হয়েছে ৬০ হাজার ৪০ হেক্টর। যাতে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় চার লাখ ২৯ হাজার ৭১৬ মেট্রিক টন। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় তিন লাখ ৯৭ হাজার ৪৫০ মেট্রিক টন।
ঠাকুরগাঁও বিএমডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শফিকুল ইসলাম জানান, ঠাকুরগাঁও জেলায় মোট বিএমডি’র নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শফিকুল ইসলাম জানান, ঠাকুরগাঁও জেলায় প্রায় এক হাজার ৫০০ গভীর নলকূপ ও এলএলপি পাম্প চালু রয়েছে।
ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্র্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মাজেদুল ইসলাম জানান, ঠাকুরগাঁও জেলা অন্যান্য ফসলের মতো ধানের জন্যও বিখ্যাত। এ জেলায় প্রচুর পরিমাণে ধান উৎপাদন হয়। প্রত্যেক বছর আমন মৌসুমে কৃষকদের যাবতীয় পরামর্শ ও সেবা কৃষি সম্প্র্রসারণ অধিদপ্তর থেকে প্রদান করা হয়। এ বছরও দেয়া হয়েছে। তবে বৃষ্টির অভাবে একটু সমস্যা হচ্ছে। বিশেষ করে উঁচু জমিগুলোতে পানি থাকছে না। তবে বৃষ্টির পানি না হওয়া পর্যন্ত সম্পূরক সেচ ব্যবস্থা চালু রাখা হয়েছে। গভীর নলকূপগুলো সচল রয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে লক্ষ্যমাত্রার অতিরিক্ত উৎপাদন হবে এবং কৃষকরা এ বছরও ধানের ন্যায্যমূল্য পাবেন।

Discussion about this post