শেয়ার বিজ ডেস্ক : থাইল্যান্ডে বেড়ে ওঠা পংসাকর্ন পংসাকের প্রিয় পানীয় ছিল কচি নারকেলের পানি। দেশজুড়ে রাস্তার দোকানে সহজলভ্য এ পানীয় আসে সেখানকার উর্বর মাটিতে ফলানো সবুজ কচি নারকেল থেকে।
কিন্তু বিদেশে গিয়ে তিনি এ স্বাদ খুঁজে পাননি। সেই শূন্যতার বোধ থেকে তার মধ্যে এক ব্যবসায়িক ধারণা তৈরি হয়। সেটা হলো থাই নারকেলের পানি বোতলজাত করে বিদেশের বাজারে পৌঁছে দেয়া। খবর: বিবিসি।
চীনের মূল ভূখণ্ডে এখন আইএফ সর্বাধিক বিক্রীত নারকেলের পানির ব্র্যান্ড। সাংহাইভিত্তিক চায়না ইনসাইটস ইন্ডাস্ট্রি কনসালট্যান্সির তথ্য অনুযায়ী, বাজারে তাদের অংশীদারত্ব এক-তৃতীয়াংশের বেশি আইএফ একাই ২৮ শতাংশ এবং তাদের আরেক পণ্য ইনোসোকো ছয় শতাংশ।
প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আছে আরও অনেক ব্র্যান্ড, যেমন স্থানীয় ডেলগার্ডেন, যার বাজার হিস্যা পাঁচ শতাংশের কম, দেশীয় চিংশাং ড্রিংক, মার্কিন ভিটা কোকো ও থাইল্যান্ডের মালি গ্রুপের মালি কোকো।
পংসাকর্ন আত্মবিশ্বাসী, এ অবস্থান টেকসই হবে। তিনি বলেন, ‘নারকেলের পানি বললেই আইএফের নাম আসে।’ ২০২৪ সালে কোম্পানির বিক্রি বেড়ে দাঁড়ায় ১৫৮ মিলিয়ন বা ১৫ কোটি ৮০ লাখ ডলার, যা আগের বছরের চেয়ে ৮০ শতাংশ বেশি। নিট মুনাফা প্রায় দ্বিগুণ হয়ে দাঁড়ায় ৩৩ মিলিয়ন বা তিন কোটি ৩০ লাখ ডলার। এই আয়ের ৯৭ শতাংশই আসে চীন থেকে।
চীনের বাজারে এ সাফল্যে উজ্জীবিত হয়ে পংসাকর্ন এবার আরও বিস্তৃত বাজারে চোখ রাখছেন। চলতি বছরের জুন মাসে হংকং শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয় আইএফবিএইচ। এর মাধ্যমে ১৪৫ মিলিয়ন বা ১৪ কোটি ৫০ ডলার তোলা হয়। এই কোম্পানির শেয়ারের প্রতি আকৃষ্ট হয় বড় বিনিয়োগকারীরা, যেমন চারোয়েন পকফান্ড গ্রুপ, ইউবিএস ও চীনের হংশান ভিসি ফার্মের সহযোগী তহবিল এই কোম্পানির শেয়ার কেনে।
শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার পরও পংসাকর্ন পংসাকের হিস্যা ৬০ শতাংশ। বর্তমানে তার শেয়ারমূল্য দাঁড়িয়েছে ৭০০ মিলিয়ন বা ৭০ কোটি ডলার। ফলে তিনি এখন থাইল্যান্ডের অন্যতম ধনী উদ্যোক্তা। এখানেই থেমে থাকতে চান না তিনি; আইপিও থেকে পাওয়া অর্থের একটি অংশ ব্যয় করবেন চীনের বাইরের বাজার সম্প্রসারণে।
বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্যসচেতনতা বৃদ্ধির কারণে নারকেলের পানি ও উদ্ভিদভিত্তিক পানীয় জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। যুক্তরাজ্যের ইউরোমনিটরের হিসাবে, ২০১৮ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বিশ্ববাজারে এ ধরনের পানীয়র বার্ষিক গড় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১০ শতাংশ। সফট ড্রিংকস শিল্পের গড় প্রবৃদ্ধির ছয় দশমিক ছয় শতাংশ চেয়ে যা অনেক বেশি।
পংসাকর্নের লক্ষ্য এখন যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়ার বাজারে অবস্থান শক্তিশালী করা। বর্তমানে এ দুই দেশ থেকে রাজস্ব আসে অতি সামান্যই। অথচ যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের সবচেয়ে বড় নারকেলের পানির বাজার, যেখানে ২০২৪ সালে বিক্রি হয়েছে এক দশমিক ৪ বিলিয়ন বা ১৪০ কোটি ডলারের পানীয়। তবে সেখানে প্রবেশ সহজ নয়। কেননা দীর্ঘদিন ধরে সেখানে ভিটা কোকোর অবস্থান শক্তিশালী।
পংসাকর্ন জানাচ্ছেন, তিনি এখনো থাইল্যান্ডকেই মূল সরবরাহকেন্দ্র হিসেবে ধরে রাখতে চান। এর মধ্য দিয়ে ‘থাই স্বাদকে’ বিশ্বদরবারে তুলে ধরা সম্ভব। তবে প্রয়োজনে অন্যান্য দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশ থেকেও সরবরাহ নেয়ার পরিকল্পনা আছে।
পংসাকর্ন বলেন, নারকেলের পানি আজ হয়তো ছোট একটি খাত, কিন্তু এর সম্ভাবনা কমলার রসের মতো। সেই সঙ্গে ব্যবসা সম্প্রসারণের চিন্তাও করছেন তিনি। নতুন পানীয় বাজারে আনার পাশাপাশি পংসাকর্ন স্বাস্থ্যকর পানীয়, উদ্ভিদভিত্তিক স্ন্যাকস ও বিকল্প প্রোটিনে বিনিয়োগের পরিকল্পনা করছেন তিনি। এশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন কোম্পানি অধিগ্রহণের জন্য ২ কোটি ৬০ লাখ ডলার বরাদ্দ রেখেছেন।

Discussion about this post