নিজস্ব প্রতিবেদক : পতন থেকে বেরিয়ে ঊর্ধ্বমুখী ধারায় ফিরতে শুরু করেছে দেশের পুঁজিবাজার। প্রতিনিয়ত মূল্যসূচক বাড়ার পাশাপাশি লেনদেনের গতিও বাড়ছে। সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে গতকাল রোববার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সূচকের উত্থানের মধ্য দিয়ে লেনদেন শেষ হয়েছে। গতকাল আগের কার্যদিবসের তুলনায় ডিএসইতে লেনদেন অনেকটাই বেড়েছে। এদিন ডিএসইতে লেনদেন হওয়া বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ার এবং মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিটের দরও বেড়েছে।
ডিএসইর সূত্রে জানা গেছে, গতকাল ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের চেয়ে ৭৭৫ দশমিক ৪৪ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ৫ হাজার ৫৯৪ পয়েন্টে। ডিএসই শরিয়াহ সূচক ২০ দশমিক ৫০ পয়েন্ট বেড়ে এক হাজার ২২৭ পয়েন্টে এবং ডিএস ৩০ সূচক ৩৬ দশমিক ৭৩ পয়েন্ট বেড়ে ২ হাজার ১৯৩ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। লেনদেনেও ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে। ডিএসইতে গতকাল লেনদেন আগের কার্যদিবসের তুলনায় অনেকটাই বেড়েছে।
ডিএসইর তথ্যমতে, গতকাল লেনদেন হওয়া বেশির ভাগ কোম্পানি এবং ফান্ডের শেয়ার ও ইউনিটের দর কমেছে। ডিএসইতে গতকাল মোট ৩৯৮টি কোম্পানি এবং মিউচুয়াল ফান্ডের শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে ২০১টি ফান্ড ও কোম্পানির দর বেড়েছে। এর বিপরীতে ১৪১টি ফান্ড ও কোম্পানির দর কমেছে। দিনশেষে ৫৬টি ফান্ড ও কোম্পানির দর অপরিবর্তিত ছিল।
এদিকে বিভিন্ন ক্যাটেগরির মধ্যে ‘এ’ ক্যাটেগরির ২১৯টি কোম্পানি ও ফান্ডের মধ্যে লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ১০৫টি কোম্পানি ও ফান্ডের দর বেড়েছে। এর বিপরীতে ৮৩টি ফান্ড ও কোম্পানির দর কমেছে। দিনশেষে অপরিবর্তিত ছিল ৩১টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট দর।
একইভাবে ‘বি’ ক্যাটেগরির ৮৩টি কোম্পানি ও ফান্ডের মধ্যে লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে ৩৮টি ফান্ড ও কোম্পানির দরদাম বেড়েছে। এর বিপরীতে ৩৩টি ফান্ড ও কোম্পানির দর কমেছে। দিনশেষে অপরিবর্তিত ছিল ১২টি ফান্ড ও কোম্পানির দর।
‘জেড’ ক্যাটেগরির ৯৬টি কোম্পানি ও ফান্ডের মধ্যে লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে ৫৮টি ফান্ড ও কোম্পানির দর বেড়েছে। এর বিপরীতে ২৫টি ফান্ড ও কোম্পানির দর কমেছে। দিনশেষে অপরিবর্তিত ছিল ১৩টি ফান্ড ও কোম্পানির দর।
তবে মিউচুয়াল ফান্ড খাতের বেশির ভাগ ফান্ডের ইউনিটের দর কমেছে। লেনদেন হওয়া ৩৬টি ফান্ডের মধ্যে মাত্র ৭টি ফান্ডের ইউনিট দর বেড়েছে, বিপরীতে ১৭টি ফান্ডের ইউনিট দর কমেছে। দিনশেষে অপরিবর্তিত ছিল ১২টি ফান্ডের ইউনিট দর।
ডিএসইতে গতকাল মোট ৪০ কোটি ৪২ লাখ ১৬ হাজার ২১৩টি শেয়ার ও ইউনিট ৩ লাখ ২৫ হাজার ৯৩২ বার হাতবদল হয়েছে। এর জেরে দিনশেষে ডিএসইতে মোট লেনদেন দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২৯৬ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছিল ১ হাজার ১৩২ কোটি ৩১ লাখ টাকা।
এর মাধ্যমে ২০২৪ সালের ১১ আগস্টের পর ডিএসইতে একদিনে সর্বোচ্চ লেনদেন হলো। ২০২৪ সালের ১১ আগস্ট ডিএসইতে ২ হাজার ১০ কোটি ৮ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছিল। এরপর আর একদিনে দুই হাজার কোটি টাকার লেনদেনের দেখা মেলেনি।
এ লেনদেনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে লাভেলো আইসক্রিমের শেয়ার। কোম্পানিটির ৩৬ কোটি টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা রবির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৩২ কোটি ৭০ লাখ টাকার। ২৭ কোটি ৮৪ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ব্র্যাক ব্যাংক।
এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছেÑসিটি ব্যাংক, ওরিয়ন ইনফিউশন, সিনোবাংলা ইন্ডাস্ট্রিজ, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন, অগ্নি সিস্টেম, সোনালী পেপার এবং খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ।
পুঁজিবাজার বিশ্লেষকদের মতে, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং বৈশ্বিক অর্থনীতির ধীরে ধীরে উন্নতি বিনিয়োগকারীদের উৎসাহিত করছে। বর্তমান প্রবণতা বজায় থাকলে বাজার আরও চাঙ্গা হতে পারে। গতকাল পুঁজিবাজারের এই তেজিভাব বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আশার সঞ্চার করেছে। আগামী দিনগুলোয় বাজারের এই ইতিবাচক ধারা বজায় থাকে কি না, সেটাই এখন দেখার বিষয়। সূচক বাড়ার পাশাপাশি পুঁজিবাজারে লেনদেনেরও পরিমাণ বেড়েছে। এটি বাজারে বিনিয়োগকারীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ বৃদ্ধি এবং ইতিবাচক মনোভাবের ইঙ্গিত দেয়। বিনিয়োগকারীরা আশা করছেন, আগামী দিনগুলোতেও এই ঊর্ধ্বমুখী ধারা বজায় থাকবে।