নিজস্ব প্রতিবেদক : পতনের ধাক্কা সামলে ঘুরে দাঁড়িয়েছে দেশের পুঁজিবাজার। সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে গতকাল রোববার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সূচকের উত্থানের মধ্য দিয়ে লেনদেন শেষ হয়েছে। গতকাল আগের কার্যদিবসের তুলনায় ডিএসইতে লেনদেনও অনেকটাই বেড়েছে। এদিকে ডিএসইতে লেনদেন হওয়া বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার এবং মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিটের দরও বেড়েছে।
ডিএসইর সূত্রে জানা গেছে, গতকাল ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের চেয়ে ৯২ দশমিক ৭২ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ৫ হাজার ৫৩৬ পয়েন্টে। ডিএসই শরিয়াহ সূচক ২২ দশমিক ৯৪ পয়েন্ট বেড়ে এক হাজার ১৯৩ পয়েন্টে এবং ডিএস৩০ সূচক ৩৬ দশমিক ১০ পয়েন্ট বেড়ে দুই হাজার ১৫০ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। লেনদেনেও ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে। ডিএসইতে গতকাল লেনদেন আগের কার্যদিবসের তুলনায় অনেকটাই বেড়েছে।
ডিএসইর তথ্যমতে, গতকাল লেনদেন হওয়া বেশিরভাগ কোম্পানি এবং ফান্ডের শেয়ার ও ইউনিটের দর বেড়েছে। ডিএসইতে গতকাল মোট ৩৯৮টি কোম্পানি এবং মিউচুয়াল ফান্ডের শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে ২১৮টি ফান্ড ও কোম্পানির দর বেড়েছে। এর বিপরীতে ১২২টি ফান্ড ও কোম্পানির দর কমেছে। দিনশেষে ৫৮টি ফান্ড ও কোম্পানির দর অপরিবর্তিত ছিল।
এদিকে বিভিন্ন ক্যাটেগরির মধ্যে ‘এ’ ক্যাটেগরির ২১৯টি কোম্পানি ও ফান্ডের মধ্যে লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ১৪২ কোম্পানি ও ফান্ডের দর বেড়েছে। এর বিপরীতে ৫৪টি ফান্ড ও কোম্পানির দর কমেছে। দিনশেষে অপরিবর্তিত ছিল ২৩টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট দর।
একইভাবে ‘বি’ ক্যাটেগরির ৮৩টি কোম্পানি ও ফান্ডের মধ্যে লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে ৪২টি ফান্ড ও কোম্পানির দর দাম বেড়েছে। এর বিপরীতে ৩৩টি ফান্ড ও কোম্পানির দর কমেছে। দিনশেষে অপরিবর্তিত ছিল ৮টি ফান্ড ও কোম্পানির দর।
জেড ক্যাটেগরির ৯৬টি কোম্পানি ও ফান্ডের মধ্যে লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে ৩৪টি ফান্ড ও কোম্পানির দর বেড়েছে। এর বিপরীতে ৩৫টি ফান্ড ও কোম্পানির দর কমেছে। দিনশেষে অপরিবর্তিত ছিল ২৭টি ফান্ড ও কোম্পানির দর।
একইসঙ্গে মিউচুয়াল ফান্ড খাতেও বেশিরভাগ ফান্ডের ইউনিটের দরও বেড়েছে। লেনদেন হওয়া ৩৬টি ফান্ডের মধ্যে মাত্র ১৮টি ফান্ডের ইউনিট দর বেড়েছে, বিপরীতে ৮টি ফান্ডের ইউনিট দর কমেছে। দিনশেষে অপরিবর্তিত ছিল ১০টি ফান্ডের ইউনিট দর।
ডিএসইতে গতকাল মোট ৪৪ কোটি ৩৬ লাখ ৬০ হাজার ৬৭৬টি শেয়ার ও ইউনিট দুই লাখ ৬৪ হাজার ৫০২ বার হাতবদল হয়েছে। এর জের ধরে দিনশেষে ডিএসইতে মোট লেনদেন দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ১৩৭ কোটি ৪০ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছিল ১ হাজার ৬৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। এর মাধ্যমে গত বছরের ১৪ আগস্টের পর ডিএসইতে সব চেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে।
এই লেনদেনে সব থেকে বড় ভূমিকা রেখেছে উত্তরা ব্যাংক। কোম্পানিটির ৪৪ কোটি ৫০ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৩৮ কোটি ৯৯ লাখ টাকার। ৩৬ কোটি ৩৫ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে সিটি ব্যাংক।
এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় ছিল, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস, মালেক স্পিনিং, যমুনা ব্যাংক, অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ, এমজেএল বাংলাদেশ, বেক্সিমকো ফার্মা এবং বাংলাদেশ সবমেরিন কেব্লস।
ডিএসইর দায়িত্বশীলরা বলছেন, দিন যত যাচ্ছে নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা কেটে যাচ্ছে। কারণ সরকারের দায়িত্বশীলরা বারবার বলছেন নির্বাচনের জন্য যে সময়ের কথা বলা হয়েছে, সেই সময়ের মধ্যেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আবার আলোচনার মাধ্যমে সরকার যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক কমাতেও সক্ষম হয়েছে। এর ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে পুঁজিবাজারে। তাছাড়া ট্রেজারি বন্ডের সুদের হার বেড়ে যাওয়ায় পুঁজিবাজার টাকার একটি অংশ সেখানে চলে যায়। এখন সুদের হার কমায় সেই টাকা পুঁজিবাজারে ফিরতে শুরু করেছে। এ কারণে বাজারে টানা ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতার সঙ্গে লেনদেনের গতিও বাড়ছে।
এদিকে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) গতকাল মোট ২৩৬টি কোম্পানি এবং ফান্ডের শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে ১৫৬টি কোম্পানি ও ফান্ডের শেয়ারদর বেড়েছে। এর বিপরীতে ৫৮টি কোম্পানি ও ফান্ডের শেয়ার দর কমেছে। দিনশেষে ২২টি কোম্পানি ও ফান্ডের দর অপরিবর্তিত ছিল। সিএসইতে গতকাল মোট ২০ কোটি ৬ লাখ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে, যা আগের কার্যদিবসে ছিল ১১ কোটি ৭৮ লাখ টাকা।
পুঁজিবাজার বিশ্লেষকদের মতে, বাংলাদেশি পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্র পাল্টা শুল্ক ৩৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ করার খবরে দেশের পুঁজিবাজারে বড় উত্থান হয়েছে। বর্তমান প্রবণতা বজায় থাকলে বাজার আরও চাঙ্গা হতে পারে। গতকাল পুঁজিবাজারের এই তেজিভাব বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আশার সঞ্চার করেছে। আগামী দিনগুলোয় বাজারের এই ইতিবাচক ধারা বজায় থাকে কিনা, সেটাই এখন দেখার বিষয়। সূচক বাড়ার পাশাপাশি পুঁজিবাজারে লেনদেনেরও পরিমাণ বেড়েছে। এটি বাজারে বিনিয়োগকারীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ বৃদ্ধি এবংইতিবাচক মনোভাবের ইঙ্গিত দেয়। বিনিয়োগকারীরা আশা করছেন, আগামী দিনগুলোয়ও এই ঊর্ধ্বমুখী ধারা বজায় থাকবে।

Discussion about this post