নিজস্ব প্রতিবেদক : পতনের পর ঊর্ধ্বমুখী ছিল দেশের পুঁজিবাজার। সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে গতকাল মঙ্গলবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সূচকের উত্থানের মধ্য দিয়ে লেনদেন শেষ হয়েছে। এ দিন আগের কার্যদিবসের তুলনায় ডিএসইতে লেনদেনও অনেকটাই বেড়েছে। তবে এ দিন ডিএসইতে লেনদেন হওয়া বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ার এবং মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিটের দর কমেছে।
ডিএসইর সূত্রে জানা গেছে, গতকাল ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের চেয়ে ৯১ দশমিক ২১ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ৫ হাজার ৪৪৩ পয়েন্টে। ডিএসই শরিয়াহ সূচক ১৬ দশমিক ২০ পয়েন্ট বেড়ে এক হাজার ১৭০ পয়েন্টে এবং ডিএস৩০ সূচক ৪৮ দশমিক ৯৯ পয়েন্ট বেড়ে ২ হাজার ১১৪ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। লেনদেনেও ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে। ডিএসইতে গতকাল লেনদেন আগের কার্যদিবসের তুলনায় অনেকটাই বেড়েছে।
ডিএসইর তথ্যমতে, গতকাল লেনদেন হওয়া বেশির ভাগ কোম্পানি এবং ফান্ডের শেয়ার ও ইউনিটের দর কমেছে। ডিএসইতে গতকাল মোট ৩৯৪টি কোম্পানি এবং মিউচুয়াল ফান্ডের শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে ১৫০টি ফান্ড ও কোম্পানির দর বেড়েছে। এর বিপরীতে ১৬৭টি ফান্ড ও কোম্পানির দর কমেছে। দিন শেষে ৭৭টি ফান্ড ও কোম্পানির দর অপরিবর্তিত ছিল।
এদিকে বিভিন্ন ক্যাটাগরির মধ্যে ‘এ’ ক্যাটাগরির ২১৭টি কোম্পানি ও ফান্ডের মধ্যে লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ১০১ কোম্পানি ও ফান্ডের দর বেড়েছে। এর বিপরীতে ৮২টি ফান্ড ও কোম্পানির দর কমেছে। দিন শেষে অপরিবর্তিত ছিল ৩৪টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট দর।
একইভাবে ‘বি’ ক্যাটাগরির ৮২টি কোম্পানি ও ফান্ডের মধ্যে লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে ২১টি ফান্ড ও কোম্পানির দর দাম বেড়েছে। এর বিপরীতে ৪৭টি ফান্ড ও কোম্পানির দর কমেছে। দিন শেষে অপরিবর্তিত ছিল ১৪টি ফান্ড ও কোম্পানির দর।
‘জেড’ ক্যাটাগরির ৯৫টি কোম্পানি ও ফান্ডের মধ্যে লেনদেন হয়েছে। এরমধ্যে ২৮টি ফান্ড ও কোম্পানির দর বেড়েছে। এর বিপরীতে ৩৮টি ফান্ড ও কোম্পানির দর কমেছে। দিন শেষে অপরিবর্তিত ছিল ২৯টি ফান্ড ও কোম্পানির দর।
একইসঙ্গে মিউচুয়াল ফান্ড খাতেও বেশির ভাগ ফান্ডের ইউনিটের দরও বেড়েছে। লেনদেন হওয়া ৩৬টি ফান্ডের মধ্যে মাত্র ১১টি ফান্ডের ইউনিট দর বেড়েছে, বিপরীতে ছয়টি ফান্ডের ইউনিট দর কমেছে। দিন শেষে অপরিবর্তিত ছিল ১৯টি ফান্ডের ইউনিট দর।
ডিএসইতে গতকাল মোট ৪০ কোটি ২৪ লাখ ৮৯ হাজার ২৫৬টি শেয়ার ও ইউনিট দুই লাখ ৩৫ হাজার ৩৯৩ বার হাতবদল হয়েছে। এরই জের ধরে দিনশেষে ডিএসইতে মোট লেনদেন দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৬৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছিল ৭৪৩ কোটি ১৬ লাখ টাকা।
অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে প্রথমবারের মতো ডিএসইতে হাজার কোটি টাকার বেশি লেনদেন হয়েছে। এ লেনদেনে সব থেকে বড় ভূমিকা রেখেছে সিটি ব্যাংক। কোম্পানিটির ৫১ কোটি ৩৩ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ব্র্যাক ব্যাংকের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৪০ কোটি ৪৩ লাখ টাকার। ৩৮ কোটি ৩৭ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন।
এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস, যমুনা ব্যাংক, উত্তরা ব্যাংক, ট্রাস্ট ব্যাংক এবং পূবালী ব্যাংক।
পুঁজিবাজার বিশ্লেষকদের মতে, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং বৈশ্বিক অর্থনীতির ধীরে ধীরে উন্নতি বিনিয়োগকারীদের উৎসাহিত করছে। বর্তমান প্রবণতা বজায় থাকলে বাজার আরও চাঙা হতে পারে। গতকাল পুঁজিবাজারের এই তেজিভাব বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আশার সঞ্চার করেছে। আগামী দিনগুলোতে বাজারের এই ইতিবাচক ধারা বজায় থাকে কিনা, সেটাই এখন দেখার বিষয়। সূচক বাড়ার পাশাপাশি পুঁজিবাজারে লেনদেনেরও পরিমাণ বেড়েছে। এটি বাজারে বিনিয়োগকারীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ বৃদ্ধি এবং ইতিবাচক মনোভাবের ইঙ্গিত দেয়। বিনিয়োগকারীরা আশা করছেন, আগামী দিনগুলোতেও এই ঊর্ধ্বমুখী ধারা বজায় থাকবে।

Discussion about this post