নুরুন্নাহার চৌধুরী কলি : ঘুরে দাঁড়িয়েছে পুঁজিবাজার। দেশের পুঁজিবাজারে ধারাবাহিকভাবে লেনদেনের গতিও বাড়ছে। সপ্তাহের চতুর্থ কার্যদিবসে গতকাল ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সূচকের উত্থানের মধ্য দিয়ে লেনদেন শেষ হয়েছে। গতকাল আগের কার্যদিবসের তুলনায় ডিএসইতে লেনদেনও অনেকটাই বেড়েছে। ডিএসইতে লেনদেন হওয়া বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার এবং মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিটের দরও বেড়েছে।
ডিএসইর সূত্রে জানা গেছে, গতকাল ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের চেয়ে ৯৩ দশমিক ৩৭ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ৫ হাজার ৩৬৩ পয়েন্টে। ডিএসই শরিয়াহ সূচক ১৬ দশমিক ৮০ পয়েন্ট বেড়ে এক হাজার ১৭৮ পয়েন্টে এবং ডিএস৩০ সূচক ৫৬ দশমিক ৩১ পয়েন্ট বেড়ে ২ হাজার ৮৬ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। লেনদেনও ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে। ডিএসইতে গতকাল লেনদেন আগের কার্যদিবসের তুলনায় অনেকটাই বেড়েছে।
ডিএসইর তথ্যমতে, গতকাল লেনদেন হওয়া বেশিরভাগ কোম্পানি এবং ফান্ডের শেয়ার ও ইউনিটের দর বেড়েছে। ডিএসইতে গতকাল মোট ৩৯৯টি কোম্পানি এবং মিউচুয়াল ফান্ডের শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে ২১৮টি ফান্ড ও কোম্পানির দর বেড়েছে। এর বিপরীতে ১০২টি ফান্ড ও কোম্পানির দর কমেছে। দিনশেষে ৭৯টি ফান্ড ও কোম্পানির দর অপরিবর্তিত ছিল।
এদিকে বিভিন্ন ক্যাটেগরির মধ্যে ‘এ’ ক্যাটেগরির ২২০টি কোম্পানি ও ফান্ডের মধ্যে লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ১৪৩টি কোম্পানি ও ফান্ডের দর বেড়েছে। এর বিপরীতে ৪৩টি ফান্ড ও কোম্পানির দর কমেছে। দিনশেষে অপরিবর্তিত ছিল ৩৪টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট দর।
একইভাবে ‘বি’ ক্যাটেগরির ৮৩টি কোম্পানি ও ফান্ডের মধ্যে লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে ৩৭টি ফান্ড ও কোম্পানির দর দাম বেড়েছে। এর বিপরীতে ৩৩টি ফান্ড ও কোম্পানির দর কমেছে। দিনশেষে অপরিবর্তিত ছিল ১৩টি ফান্ড ও কোম্পানির দর।
‘জেড’ ক্যাটেগরির ৯৬টি কোম্পানি ও ফান্ডের মধ্যে লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে ৩৮টি ফান্ড ও কোম্পানির দর বেড়েছে। এর বিপরীতে ২৬টি ফান্ড ও কোম্পানির দর কমেছে। দিনশেষে অপরিবর্তিত ছিল ৩২টি ফান্ড ও কোম্পানির দর।
মিউচুয়াল ফান্ড খাতেও বেশির ভাগ ফান্ডের ইউনিটের দর বেড়েছে। লেনদেন হওয়া ৩৬টি ফান্ডের মধ্যে মাত্র ১৩টি ফান্ডের ইউনিট দর বেড়েছে, বিপরীতে ৯টি ফান্ডের ইউনিট দর কমেছে। দিনশেষে অপরিবর্তিত ছিল ১৪টি ফান্ডের ইউনিট দর।
ডিএসইতে গতকাল মোট ৩৬ কোটি ৭৯ লাখ ৮ হাজার ৬৪৪টি শেয়ার ও ইউনিট দুই লাখ ৪৪ হাজার ৩৫০ বার হাতবদল হয়েছে। এরই জের ধরে দিনশেষে ডিএসইতে মোট লেনদেন দাঁড়িয়েছে ৯৮৬ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছিল ৭২২ কোটি ২৯ লাখ টাকা।
গতকাল ডিএসইতে হাজার কোটি টাকার কাছাকাছি লেনদেন হয়েছে, যা প্রায় ১০ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর আগে গত বছরের ২ সেপ্টেম্বর ডিএসইতে লেনদেন হয়েছিল ১ হাজার ৬৫ কোটি টাকা।
এদিকে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) গতকাল মোট ২৫৩টি কোম্পানি এবং ফান্ডের শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে ১৪৮টি কোম্পানি ও ফান্ডের শেয়ার দর বেড়েছে। এর বিপরীতে ৮০টি কোম্পানি ও ফান্ডের শেয়ার দর কমেছে। দিনশেষে ২৫টি কোম্পানি ও ফান্ডের দর অপরিবর্তিত ছিল। সিএসইতে গতকাল মোট ৬ কোটি ৬৭ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে; যা আগের কার্যদিবসে ছিল ৬ কোটি ৬২ লাখ টাকা।
পুঁজিবাজার বিশ্লেষকদের মতে, ডলারের বিপরীতে টাকার শক্তিশালী অবস্থান, সঞ্চয়পত্রের সুরে হার কমা এবং বাজেটে কিছু ইতিবাচক পক্ষেপের কারণে পুঁজিবাজারে এই ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। গতকাল পুঁজিবাজারের এই তেজিভাব বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আশার সঞ্চার করেছে। আগামী দিনগুলোয় বাজারের এই ইতিবাচক ধারা বজায় থাকে কিনা, সেটাই এখন খোর বিষয়। সূচক বাড়ার পাশাপাশি পুঁজিবাজারে লেনদেনেরও পরিমাণ বেড়েছে। এটি বাজারে বিনিয়োগকারীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ বৃদ্ধি এবং ইতিবাচক মনোভাবের ইঙ্গিত দেয়। বিনিয়োগকারীরা আশা করছেন, আগামী দিনগুলোতেও এ ঊর্ধ্বমুখী ধারা বজায় থাকবে।

Discussion about this post