প্রযুক্তিপ্রেমীদের কাছে নিজের হাতে একটি ভালো মানের ডেস্কটপ পিসি বিল্ড করা স্বপ্নের মতো। নিজের প্রয়োজন অনুযায়ী প্রতিটি পার্টস বেছে নিয়ে একটি শক্তিশালী কম্পিউটার তৈরি করার আনন্দই আলাদা। যদিও প্রথমবার পিসি বিল্ড করা কিছুটা জটিল মনে হতে পারে। তবে সঠিক পরিকল্পনা এবং জ্ঞান থাকলে কাজটি অনেক সহজ হয়ে যায়। আর এই কাজটি করার আগে বিডিস্টলের পিসি বিল্ডার টুলস ব্যবহার করে ধারণা নেওয়ার পাশাপাশি সরাসরি শো রুমের গিয়ে ডেস্কটপ পিসি কেনা যাবে। চলুন, ডেস্কটপ পিসি বিল্ড করার কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস জেনে নেওয়া যাক।
বাজেট ও প্রয়োজন নির্ধারণ
পিসি বিল্ড করার প্রথম এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হলো আপনার বাজেট কত টাকা এবং কী কাজে পিসি বিল্ড করবেন তা নির্ধারণ করা। আপনি কি সাধারণ ইন্টারনেট ব্রাউজিং, মুভি দেখা বা অফিসিয়াল কাজের জন্য পিসি বিল্ড করছেন? নাকি আপনার লক্ষ্য গেমিং, ভিডিও এডিটিং বা গ্রাফিক্স ডিজাইনের মতো ভারি কাজ করা? সাধারণ কাজের জন্য পিসি বিল্ড করলে খরচ কম হবে, অপরদিকে গেমিং/ভিডিও এডিটিং/গ্রাফিক্স ডিজাইনের কাজ করতে চাইলে বেশি খরচ হবে।
আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী পিসি কম্পোনেন্ট বাছাই করতে হবে এবং সে অনুযায়ী বাজেট নির্ধারণ করতে হবে। এজন্য, আপনি কত টাকা বাজেটের মাঝে পিসি বিল্ড করতে চান তা নির্ধারণ করুন।
প্রসেসর
প্রসেসরকে কম্পিউটারের মস্তিষ্ক বলা হয়। আপনার পিসির পারফরম্যান্স অনেকাংশে এর ওপর নির্ভর করে। বাজারে মূলত দুটি জনপ্রিয় ব্র্যান্ডের প্রসেসর পাওয়া যায়—ইন্টেল (Intel) এবং এএমডি (AMD)। সাধারণ কাজের জন্য Intel Core i3 বা AMD Ryzen 3 সিরিজই যথেষ্ট। তবে গেমিং বা ভিডিও এডিটিংয়ের মতো ভারি কাজের জন্য Core-i5/Core-i7 বা Ryzen-5/Ryzen-7 সিরিজের প্রসেসর বেছে নেওয়া উচিত।
মাদারবোর্ড
মাদারবোর্ড হলো একটি সার্কিট বোর্ড যেখানে কম্পিউটারের সব যন্ত্রাংশ, যেমন—প্রসেসর, র্যাম, গ্রাফিক্স কার্ড ইত্যাদি যুক্ত থাকে। প্রসেসরের সকেটের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ মাদারবোর্ড কিনতে হবে। যেমন, ইন্টেলের জন্য LGA সকেট এবং এএমডি-র জন্য AM সকেটের মাদারবোর্ড প্রয়োজন। এছাড়াও, আপনার ভবিষ্যতে পিসি আপগ্রেড করার পরিকল্পনা আছে কিনা, তার ওপর নির্ভর করে র্যাম স্লট ও অন্যান্য পোর্টের সংখ্যা দেখে মাদারবোর্ড কেনা উচিত।
র্যাম
র্যাম হলো কম্পিউটারের অস্থায়ী মেমরি, যা ডেটা দ্রুত প্রসেস করতে সাহায্য করে। বর্তমানে সাধারণ কাজের জন্য অন্তত ৮ জিবি র্যাম প্রয়োজন। তবে গেমিং এবং ভারী কাজের জন্য ১৬ জিবি বা তার চেয়ে বেশি র্যাম নেওয়া ভালো। র্যাম কেনার সময় এর বাস স্পিড (MHz) দেখে নেওয়া জরুরি। বেশি বাস স্পিডের র্যাম ব্যবহার করলে পিসি ফাস্ট হয়।
স্টোরেজ
স্টোরেজের জন্য এখন দুটি জনপ্রিয় অপশন রয়েছে—হার্ড ডিস্ক ড্রাইভ (HDD) এবং সলিড-স্টেট ড্রাইভ (SSD)। হার্ড ডিস্কের দাম কম এবং এতে বেশি ডেটা সংরক্ষণ করা যায়। অন্যদিকে, SSD অনেক বেশি ফাস্ট হওয়ার কারণে কম্পিউটার চালু হতে, ফাইল ওপেন হতে বা সফটওয়্যার লোড হয় খুব দ্রুত।
সবচেয়ে ভালো হয় যদি অপারেটিং সিস্টেম এবং প্রয়োজনীয় সফটওয়্যার রাখার জন্য একটি এসএসডি (কমপক্ষে ২৪০ জিবি) এবং মুভি, গান বা অন্যান্য ফাইল রাখার জন্য একটি হার্ড ডিস্ক (১ টেরাবাইট বা তার বেশি) একসঙ্গে ব্যবহার করেন।
গ্রাফিক্স কার্ড
আপনি যদি শুধু সাধারণ কাজ বা মুভি দেখার জন্য পিসি বিল্ড করেন, তবে প্রসেসরের সঙ্গে থাকা ইন্টিগ্রেটেড গ্রাফিক্সই যথেষ্ট। কিন্তু আপনি যদি গেম খেলতে চান বা হাই-রেজোলিউশন ভিডিও এডিটিং করতে চান, তবে একটি ডেডিকেটেড গ্রাফিক্স কার্ড বা জিপিইউ অবশ্যই লাগবে।
গ্রাফিক্স কার্ড প্রয়োজন হলে NVIDIA অথবা AMD এর যেকোনো একটি থেকে নিতে পারেন।
পাওয়ার সাপ্লাই ইউনিট
পাওয়ার সাপ্লাই ইউনিট বা PSU কম্পিউটারের প্রতিটি কম্পোনেন্টে বিদ্যুৎ সাপ্লাই দেয়। PSU একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা অনেকেই অবহেলা করেন। পিসির সব কম্পোনেন্টের মোট ওয়াট হিসাব করে তার চেয়ে কিছুটা বেশি ওয়াটের পাওয়ার সাপ্লাই কেনা উচিত। একটি ভালো মানের PSU ব্যবহার করলে পিসির কম্পোনেন্টগুলো ভোল্টেজ ওঠানামার ঝুঁকি থেকে সুরক্ষিত থাকে।
কেসিং
সব কম্পোনেন্টকে একটি সুন্দর ও সুরক্ষিত অবস্থায় রাখার জন্য কেসিং প্রয়োজন। কেসিং কেনার সময় দেখতে হবে এর মধ্যে যেন বাতাস চলাচলের ভালো ব্যবস্থা থাকে। ভালো এয়ারফ্লো সিস্টেম আপনার পিসির ভেতরের কম্পোনেন্টগুলোকে ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করবে, যা পিসির পারফরম্যান্স বৃদ্ধি করবে এবং দীর্ঘস্থায়ী হবে।
এই টিপসগুলো মাথায় রেখে পরিকল্পনা করলে আপনিও নিজের পছন্দের ডেস্কটপ পিসি বিল্ড করতে পারবেন। প্রয়োজনে ইউটিউবে পিসি বিল্ডিং টিউটোরিয়াল দেখতে পারেন বা কোনো অভিজ্ঞ ব্যক্তির সাহায্য নিতে পারেন।

Discussion about this post