‘ধার-দেনায় শুরু, এখন তিনি কোটিপতি পোনাচাষি’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে গতকালের শেয়ার বিজে। এটি হাজার তরুণকে আত্মকর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে প্রেরণা জোগাবে বলেই ধারণা। খবরে জানা যায়, পাবনার বেড়া উপজেলার হাটুরিয়া-নাকালিয়া ইউনিয়নের জগন্নাথপুর পূর্বপাড়ার আবদুর রশিদ এখন মাছের পোনা বিক্রি করেই বছরে ২৫ লাখ টাকার বেশি লাভ করেন। ২৫টি পুকুরে করছেন পোনা চাষ। অথচ তার জীবন ছিল অভাবের। কখনও অন্যের জমিতে কাজ করে, কখনও ফেরি করে মাছ বিক্রি করে দিন চলত তার। সেই অবস্থা থেকে এখন কয়েক কোটি টাকার সম্পদের মালিক তিনি। এখন তিনি এক অনুপ্রেরণা নাম।
আবদুর রশীদ অকপটে জানান, বিয়ের এক বছরের মাথায় সন্তান জন্ম নেয়। কিন্তু সেই সময় সন্তানের দুধ কেনার আর্থিক সামর্থ্যও ছিল না তার। একমাত্র সম্বল ছিল একটি ছাপড়া টিনের ঘর। তখন বিটিভিতে রেণু পোনা চাষের বিজ্ঞাপন তাকে নতুন স্বপ্ন দেখায়। তিনি তখন এলাকার একজনের কাছ থেকে ৮ শতাংশ জমির একটি পুকুর ইজারা নেন দেড় হাজার টাকায়। এরপর বাবার কাছ থেকে গরু বিক্রি ও ধার-দেনা করে কয়েক হাজার টাকা নিয়ে ওই পুকুরে ডিমপোনা ছাড়েন। তাতে মাত্র পাঁচ মাসেই প্রায় ২০ হাজার টাকার মতো লাভ হয় তার। এর পরের ঘটনা কেবলই এগিয়ে চলার।
মৎস্য খাত জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। দেশের মোট জিডিপিতে মৎস্য খাতের অবদান কমবেশি ২ দশমিক ৭৫ শতাংশ এবং কৃষিজ জিডিপিতে প্রায় ২৫ শতাংশ। বর্তমানে দেশে বার্ষিক ৫৫ লাখ মেট্রিক টন মাছ উৎপাদিত হয়। দেশের মোট জনগোষ্ঠীর প্রায় ১৩ শতাংশ, অর্থাৎ প্রায় আড়াই কোটি মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এই খাতের সঙ্গে সম্পৃক্ত, যার মধ্যে প্রায় ১১ লাখ নারী রয়েছেন। অভ্যন্তরীণ মুক্ত জলাশয়, বদ্ধ জলাশয় ও সামুদ্রিক জলাশয়ের উৎপাদন এবং ব্যবস্থাপনায় আধুনিক ও সময়োপযোগী পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হওয়ায় বাংলাদেশ মাছ উৎপাদনে উদ্বৃত্ত দেশের কাতারে উন্নীত হয়েছে। মাথাপিছু দৈনিক মাছের প্রাপ্যতা ৬৭ দশমিক ৮০ গ্রাম, যা দৈনিক চাহিদা ৬০ গ্রাম থেকে বেশি। বিশ্বের ৫০টিরও বেশি দেশে বাংলাদেশের মাছ ও মৎস্যজাত পণ্য রপ্তানি হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক পরিসরে বাংলাদেশের মৎস্য খাত উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে। বিশ্বে ইলিশ আহরণে বাংলাদেশ প্রথম, তেলাপিয়া উৎপানে চতুর্থ এবং এশিয়ায় তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে। এফএও-এর ২০২৪ সালের প্রতিবেদনে বাংলাদেশের অবস্থান মিঠা পানির মাছ আহরণে তৃতীয়, বদ্ধ জলাশয়ে চাষে পঞ্চম, ক্রাস্টাশিয়ান (চিংড়ি, কাঁকড়া প্রভৃতি) আহরণে অষ্টম এবং উপকূলীয় ও সামুদ্রিক মাছ আহরণে ১৪তম। মৎস্য ও মৎস্যপণ্যের ভ্যালুচেইন উন্নয়ন এবং রপ্তানি বাজার সম্প্র্রসারণে সময়োপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে দেশের মৎস্যপণ্য আন্তর্জাতিক বাজারে ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
আমাদের কর্মহীন জনগোষ্ঠী আবদুর রশিদদের অনুপ্রেণোয় এগিয়ে এলে নিজেরা যেমন স্বাবলম্বী হবে এবং দেশে ও সমৃদ্ধ হবে।