নিজস্ব প্রতিবেদক : পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত তাকাফুল ইসলামী ইন্স্যুরেন্স পিএলসির ২৫তম বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) পরিচালক নির্বাচনে ভোট কারচুপির অভিযোগ উঠেছে। প্রতিষ্ঠানটির একজন উদ্যোক্তা মো. মফিজউদ্দিন এই অভিযোগ তুলে ভোট পুনর্গণনার দাবি জানিয়েছেন।
সম্প্রতি পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান বরাবর তিনি এ বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ করে ভোট পুনর্গণনার দাবি জানিয়েছেন।
লিখিত চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেছেন, গত ১৬ আগস্ট তাকাফুল ইসলামী ইন্স্যুরেন্সের ২৫তম বার্ষিক সাধারণ সভায় পরিচালক নির্বাচনে উদ্যোক্তা পরিচালক হিসেবে একজন প্রার্থী ছিলেন। এ নির্বাচনে ভোটকার্য সম্পূর্ণ করার সময় বিভিন্ন অনিয়ম করে নির্বাচনের ফলাফলে পরাজিত প্রার্থীদের বিজয়ী ঘোষণা করা হয়।
মফিজ উদ্দিনের তুলে ধরা অনিয়মগুলো হলো– ভোট অনুষ্ঠানের সময়সূচি নিয়ে তালবাহানা করে, প্রথমে বার্ষিক সাধারণ সভার এজেন্ডায় ২৪ ঘণ্টা আগে থেকে ভোটগ্রহণের সময় উল্লেখ থাকলেও আমাদের জানানো হয় দুপুর ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত। পরবর্তী সময়ে আমাদের আপত্তির পরে লিখিতভাবে আবার সংশোধনপত্র দিয়ে জানানো হয় বার্ষিক সাধারণ সভা শুরু হওয়ার ২৪ ঘণ্টা আগে থেকেই ভোটগ্রহণ শুরু হবে। ভোটগ্রহণের সময় তিনবার পরিবর্তন করা হয়, যা একটি প্রহসনের নির্বাচন করার অপচেষ্টা ছাড়া আর কিছুই না।
এজেন্ডা অনুযায়ী ভোট হওয়ার কথা বেলা ১১টায়, কিন্তু উদ্যোক্তা শেয়ার হোল্ডারদের ভোটগ্রহণ চালু হয় বিকাল সাড়ে ৩টার পর এবং সাধারণ শেয়ারহোল্ডারের ভোট শুরু হয় সাড়ে ৬ ঘণ্টা পর। এছাড়া ইচ্ছাকৃতভাবে সার্ভার সেøা করার কারণে অনেকের ভোট দেয়ার ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও দিতে পারেননি।
ভোট প্রদানের সময় লিংক বারবার ডাউন করা হয় ফলে লিংকে সঠিক সময়ে লগইন করা সম্ভব হয়নি। ই–মেইলে ভোটের লিংক স্বাভাবিকভাবে না পাঠানো।
এজিএম এবং অন্যান্য সভাগুলো অফিসে না করে চেয়ারম্যান সাহেবের নিজ বাস ভবনে আয়োজন করে, যা একটি পাবলিক লিমিটেড কোম্পানির ক্ষেত্রে কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
যে কোম্পানিকে অনলাইনে ভোটগ্রহণের কারিগরি সহযোগিতা করার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে ওই কোম্পানির সিইও কানাডা থেকে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম পরিচালনা করেন।
নির্বাচন কমিশনের সহায়তায় কিছুসংখ্যক শেয়ারহোল্ডারের পক্ষে জাল ভোট দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
ভোট ক্যালকুলেশনে কোম্পানি আইন, বিএসইসি, আইডিআরএ, ডিএসই এবং সিএসই’র সব নিয়ম ভঙ্গ করে নির্বাচনে বিজয়ী প্রার্থীদের পরাজিত করে পরাজিত প্রার্থীদের বিজয়ী ঘোষণা করা হয়।
অবৈধভাবে ভোট কম ঘোষণা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন মফিজউদ্দিন। তিনি চিঠিতে উল্লেখ করেছেন, একটি পাবলিক লিমিটেড ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির ভোট প্রদান এবং গণনার বিষয়ে ‘বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন এর ১০ মার্চ–২০১১ তারিখের ডিরেক্টিভ নম্বর ইঝঊঈ/ঈগজজঈউ/২০০৯–১৯৩/০৮’ এবং ‘বাংলাদেশ গেজেটের আর ও নম্বর ২১৮–আইন/২০২৪ জুন, ২০২৪ ধারা ৮ উপধারা–২ এবং একই গেজেটে ধারা ১১ উপধারা ২’-এ সুস্পষ্টভাবে নির্বাচনের ভোটগণনার বিষয়টি উল্লেখ করা আছে। কিন্তু তাকাফুল ইসলামী ইন্স্যুরেন্সের পরিচালক নির্বাচনে এ আইন লঙ্ঘন করা হয়েছে।
তিনি উল্লেখ করেছেন, উদ্যোক্তা শেয়ারহোল্ডার পরিচালক নির্বাচনে মো. মফিজউদ্দিন (বিও আইডি ১২০২৬০০০০১২১৩১৫০) ৩৭ লাখ ৪ হাজার ২৪৭টি ভোট, আবুল হাসেম (বিও আইডি ১২০৩৭৩০০১৫৮৩১৯০৮) ২১ লাখ ২৯ হাজার ৩৩৮টি ভোট, মো. হুমায়ুন কবির পাটোয়ারী (বিও আইডি ১২০৬৪৮০০০৪১৯৬৯৩০) ১৪ লাখ ৭৭ হাজার ৫৯৪টি ভোট, মিসেস শাহানাজ পারভিন (বিও আইডি ১২০২২০০০৬০০৯২৭৮১) ১৫ লাখ ৩২ হাজার ৫৮৭ ভোট এবং রেদওয়ান কবির (বিও আইডি ১২০২২০০০৬৮৯২৫৬১) ৮ লাখ ৫২ হাজার ভোট দিয়েছেন।
এই ৫টি বিও থেকে মোট ৯৬ লাখ ৯৫ হাজার ৭৬৬টি ভোট দেয়া হয়। এ ভোটগুলো দেয়া হয় আবুল হাসেম, মো. মফিজউদ্দিন, ফারজানা রাহমান এবং আনোয়ার হোসেন চৌধুরীকে। এই চারজনের মধ্যে আবুল হাসেম মোট এক কোটি ৯ লাখ ৭৩ হাজার ৩৬০টি, মো. মফিজউদ্দিন ৯৬ লাখ ৯৫ হাজার ৭৬৬টি, ফারজানা রাহমান ৯৬ লাখ ৯৫ হাজার ৭৬৬টি এবং আনোয়ার হোসেন চৌধুরী ৯৬ লাখ ৯৫ হাজার ৭৬৬টি ভোট পান।
কিন্তু ঘোষণা করা ভোটে এ চারজনের ভোট কম দেখানো হয়েছে। এর মধ্যে আবুল হাসেমের নামে ৮৮ লাখ ১২ হাজার ৮০৫টি, মো. মফিজ উদ্দিনের নামে ৭৫ লাখ ৩৫ হাজার ২১১টি, ফারজানা রাহমানের নামে ৭৫ লাখ ৩৫ হাজার ২১১টি এবং আনোয়ার হোসেন চৌধুরীর নামে ৭৫ লাখ ৩৫ হাজার ২১১টি ভোট দেখানো হয়েছে। অর্থাৎ আবুল হাসেমের নামে ২৬ লাখ ৬০ হাজার ৫৫৫টি, মো. মফিজ উদ্দিনের নামে ২১ লাখ ৬০ হাজার ৫৫৫টি, ফারজানা রাহমানের নামে ২১ লাখ ৬০ হাজার ৫৫৫টি এবং আনোয়ার হোসেন চৌধুরীর নামে ২১ লাখ ৬০ হাজার ৫৫৫টি ভোট কম দেখানো হয়েছে।
একইভাবে পাবলিক শেয়ারহোল্ডার পরিচালক নির্বাচনে আনোয়ার হোসেন (বিও আইডি ১২০১৫৭০০০০৩০৬৪৪৮) ৮ লাখ ৯৬ হাজার, হাজেরা খাতুন (বিও আইডি ১২০২৬০০০৫৩৮৭৭১৯৫) ১৪ লাখ ২৩ হাজার ৭০টি, মো. মহিউদ্দিন (বিও আইডি ১২০২৬০০০০১২১৬১২১) ৩০ লাখ ৪ হাজার ৩৯৮টি, মো. হাফিজ উদ্দিন (বিও আইডি ১২০২৬০০০০৪৭২৯৮০১) ৩৯ লাখ ২০ হাজার ৪৭২টি, ন্যাশনাল লাইফ ইন্সু্যুরেন্স (বিও আইডি ১২০৫৭২০০০০২৬৯৮৯৩৪) ২ লাখ ১৪ হাজার ৪৩০টি, রায়হান কবির (বিও আইডি ১২০২২৭৬৭৯০৯৫১) ১ লাখ ৬৫ হাজার এবং শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক সিকিউরিটিস (বিও আইডি ১২০৪০৯০০৪৪৬৩৪৭৪১) ১৫ লাখ ৩২ হাজার ১০৯ ভোট দেয়।
এ সাত বিও হিসাব থেকে মোট ১ কোটি ১১ লাখ ৫৯ হাজার ৪৭৯টি ভোট দেয়া হয় নাফিসা সালমা (বিও আইডি ১২০৫২০০০০১২১৬১১১) এবং মোহাম্মদ ওসমান গণি (বিও আইডি ১২০১৮৩০০৪৮৮৭৬০৫৭)-কে। সেই হিসাবে এ দুজন ১ কোটি ১১ লাখ ৫৯ হাজার ৪৭৯টি করে ভোট পান। কিন্তু নাফিস সালমার নামে ৮৮ লাখ ১২ হাজার ৮০৫টি এবং মোহাম্মদ ওসমান গনির নামে ৮৮ লাখ ৬০ হাজার ৫৪৫টি ভোট দেখানো হয়েছে। অর্থাৎ নাফিসা সালমার নামে ২৩ লাখ ৪৬ হাজার ৬৭৪টি এবং মোহাম্মদ ওসমান গণির নামে ২২ লাখ ৯৮ হাজার ৯৩৪টি করে ভোট কম দেখানো হয়েছে।
মফিজউদ্দিন অভিযোগ করেছেন, পরিচালক নির্বাচনে বিজয়ী প্রার্থীকে বিজয়ী ঘোষণা না করে সংশ্লিষ্ট সব আইন লঙ্ঘন করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশন এবং হাইসফট করপোরেশনের যোগসাজশে প্রক্সি গ্রহণ এবং প্রক্সি প্রদানকারীর সংগৃহীত মোট ভোটকে একত্র করে ১০ শতাংশের আওতাভুক্ত করে ভোটগণনা করা হয়, যা বেআইনি।
কোম্পানির বিনিয়োগকারীরা তাদের পছন্দের প্রার্থীদের ভোট দেয়া সত্ত্বেও, বেআইনিভাবে তাদের মনগড়া এবং আইনের অপব্যাখ্যা করে হাইসফট করপোরেশনের সহায়তায় নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করে পরাজিত প্রার্থীদের বিজয়ী ঘোষণা করা হয়, যা বেআইনি এবং আইনের ভুল ব্যাখ্যা করে কোম্পানি দখলের অপচেষ্টা ছাড়া আর কিছুই নাÑ বলে অভিযোগ করেছেন মফিজউদ্দিন।
যোগাযোগ করা হলে মো. মফিজউদ্দিন বলেন, কোম্পানির পরিচালক নির্বাচনে বিনিয়োগকারীরা তাদের পছন্দের প্রার্থীদের ভোট দিয়েছেন। কিন্তু নির্বাচনে যারা বেশি ভোট পেয়েছেন, বেআইনিভাবে তাদের ভোট কম দেখানো হয়েছে। এর মাধ্যমে পরাজিত প্রার্থীদের বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে। এ জন্য ভোট পুনর্গণনার দাবি জানিয়েছি। আমরা ভোট বাতিল চাচ্ছি না, নিরপেক্ষভাবে ভোটগণনার দাবি জানাচ্ছি।

Discussion about this post