শাহারুল ইসলাম, বেনাপোল (যশোর) : দীর্ঘ তিন মাসের অচলাবস্থার পর অবশেষে বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি শুরু হওয়ায় দেশের বাজারে স্বস্তি ফিরছে। আমদানি বন্ধ থাকায় পেঁয়াজের দাম সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে গিয়েছিল, সেই সংকট কাটতে শুরু করেছে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ী ও ভোক্তারা। সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) ভারতের পেট্রাপোল বন্দর হয়ে প্রথম ধাপে পেঁয়াজবোঝাই ট্রাক বাংলাদেশে প্রবেশ করায় বাজারে তাৎক্ষণিক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে।
সোমবার দুপুরের দিকে সাতক্ষীরার মেসার্স এইচ কে এ এন্টারপ্রাইজ এবং যশোরের মেসার্স সাবাহ এন্টারপ্রাইজের আমদানিকৃত পেঁয়াজের তিনটি ট্রাক বেনাপোল বন্দরে ঢোকে। এসব ট্রাকে মোট ৯০ মেট্রিক টন পেঁয়াজ রয়েছে। পেঁয়াজ ছাড়করণকারী প্রতিষ্ঠান রয়েল এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী রফিকুল ইসলাম রয়েল বলেন, দীর্ঘদিন পর পেঁয়াজের গাড়ি ঢুকেছে। এবারের চালানে সিঅ্যান্ডএফ মূল্য কেজিপ্রতি প্রায় ৪৮ থেকে ৫২ টাকা পড়েছে। নিয়মিত আমদানি হলে বাজারে দাম ৯০ টাকার নিচেও নামতে পারে।
বেনাপোল বন্দর ও আমদানি সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন ধাপে বেনাপোল বন্দর দিয়ে আনুমানিক ৩৫ থেকে ৪০ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছিল। সে সময় আমদানিকৃত পেঁয়াজের গড় মূল্য ছিল কেজিপ্রতি ৩৫ থেকে ৪৫ টাকা। তবে সর্বশেষ চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময়ে মাত্র ৬০ মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানি হওয়ার পর হঠাৎ করেই ভারতীয় রপ্তানি নীতি ও আইপি জটিলতায় তিন মাস ধরে আমদানি বন্ধ ছিল।
এই তিন মাসে বাংলাদেশে পেঁয়াজের দাম বেড়ে ১৩০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত ওঠে, যা সাধারণ মানুষের জন্য বড় চাপ তৈরি করে। একই সময়ে ভারতে উৎপাদিত বিপুল পরিমাণ পেঁয়াজ বাংলাদেশে রপ্তানি করতে না পারায় পশ্চিমবঙ্গ, মহারাষ্ট্র ও মধ্যপ্রদেশের বিভিন্ন এলাকায় হাজার হাজার টন পেঁয়াজ নষ্ট হয়। ভারতীয় ব্যবসায়ীদের ভাষ্য অনুযায়ী, সংরক্ষণের অভাবে অনেক কৃষক ক্ষেতেই পেঁয়াজ ফেলে দিতে বাধ্য হন কিংবা লোকসানে বিক্রি করেন।
আমদানির খবরে সোমবার সকাল থেকেই বেনাপোল কাঁচাবাজারে পেঁয়াজের দামে পতন লক্ষ্য করা গেছে। বাজারে দেখা যায়, দেশি মুড়িকাটা পেঁয়াজ কেজিতে ৫ টাকা কমে ১০৫ টাকা এবং দেশি শুকনো পেঁয়াজ কেজিতে ১০ টাকা কমে ১২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
বেনাপোল বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী মো. আব্দুল্লাহ বলেন, গত দুই-তিন মাস আমরা খুব চাপের মধ্যে ছিলাম। পেঁয়াজ কম, দাম বেশিÑক্রেতারাও কিনতে চাইত না। এখন ভারত থেকে আমদানি শুরু হওয়ায় মোকামে দাম নামছে। যদি প্রতিদিন গাড়ি ঢোকে, তাহলে দাম আরও কমবে।
একই বাজারের খুচরা ব্যবসায়ী রোহান হোসেন বলেন, আগে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা কেজিতে পেঁয়াজ বিক্রি করতে গিয়ে মানুষের গালমন্দ শুনতে হয়েছে। আজ ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির কথা শুনেই দাম কমেছে, ক্রেতাও একটু স্বস্তি পাচ্ছে।
সাধারণ ক্রেতারাও আমদানিকে স্বাগত জানিয়েছেন। বেনাপোল পৌর এলাকার বাসিন্দা গৃহিণী রাজিয়া সুলতানা বলেন, পেঁয়াজ ছাড়া রান্নাই চলে না। এতদিন দাম বেশি থাকায় খুব কষ্টে ছিলাম। শুনেছি ভারত থেকে পেঁয়াজ আসছে, তাই বাজারে এসে দেখলাম দাম একটু কম। নিয়মিত এলে আমাদের অনেক উপকার হবে।
বেনাপোল উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের উপ-সহকারী কর্মকর্তা শ্যামল কুমার নাথ জানান, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনে সীমিত আকারে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে। প্রতিদিন ২০০ জন আমদানিকারক আইপি পাবেন এবং একজন আমদানিকারক ৩০ থেকে ৬০ মেট্রিক টন পর্যন্ত পেঁয়াজ আমদানি করতে পারবেন। তিনি বলেন, আইপি উš§ুক্ত করে দিলে বাজারে সরবরাহ বাড়বে এবং দাম দ্রুত সহনীয় পর্যায়ে নেমে আসবে।
বেনাপোল বন্দরের পরিচালক শামীম হোসেন জানান, সোমবার তিনটি ট্রাকে ৯০ মেট্রিক টন পেঁয়াজ বন্দরে প্রবেশ করেছে। পেট্রাপোল বন্দরে আরও কয়েকটি পেঁয়াজবোঝাই ট্রাক রয়েছে, সেগুলো পর্যায়ক্রমে বাংলাদেশে ঢুকবে। দ্রুত খালাসের জন্য বন্দরের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
প্রিন্ট করুন











Discussion about this post