Print Date & Time : 5 August 2025 Tuesday 12:06 am

তিস্তার পানি বিপৎসীমার ওপরে

তৈয়ব আলী সরকার, নীলফামারী : ভারী বৃষ্টিপাত ও উজানের পাহাড়ি ঢলে নীলফামারীর ডিমলা ডালিয়া পয়েন্ট তিস্তার পানি বিপৎসীমার পাঁচ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে বন্যার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের পানি পরিমাপক নুরুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, গতকাল রোববার সকাল ৬টায় বিপৎসীমার ৫২ দশমিক ১৩ সেন্টিমিটার দিয়ে বন্যার পানি প্রবাহিত হচ্ছিল। এরপর সকাল ৯টায় ৫২ দশমিক ১৫ সেন্টিমিটার অর্থাৎ বিপৎসীমা ছুঁইছুঁই। তবে তিন ঘণ্টার ব্যবধানে দুপুর ১২টায় বিপৎসীমার পাঁচ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। তিনি বলেন, উজানে পানি বাড়লে তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টেও পানি বাড়ে। ওই পয়েন্টে বিপৎসীমা ৫২ দশমিক ১৫ সেন্টিমিটার।

পাউবো সূত্র জানায়, বন্যার পানি নিয়ন্ত্রণে ব্যারাজের ৪৪টি স্লুইস গেট খুলে দেয়া হয়েছে। সতর্ক অবস্থায় রয়েছে পাউবোর পানি শাখা প্রকৌশল বিভাগ।

এদিকে তিস্তার বন্যায় জেলার ডিমলা উপজেলার পূর্ব ছাতনাই, খগাখাড়বাড়ী, টেপাখড়িবাড়ী, খালিশা চাপানী, ঝুনাগাছ চাঁপানী, গয়াবাড়ী ও জলঢাকার গোলমুন্ডা, ডাউয়াবাড়ী, শৌলমারী ও কৈমারী ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকায় চর গ্রামের আট-দশ হাজার পরিবারের বাড়িঘরে পানি প্রবেশের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে বলে জানান জনপ্রতিনিধিরা।

এছাড়া ব্যারাজের পূর্ব দিকে (ভাটি অঞ্চল) লালমনিরহাট জেলার হাতিবান্ধা, কালীগঞ্জ উপজেলার নদীবেষ্টিত চর ও চরের গ্রামগুলো প্লাবিত হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন ওই এলাকার মানুষ। তাদের বাড়িঘরে হাঁটুপানি। এ কারণে পরিবার-পরিজন নিয়ে উঁচু এলাকায় সরে যাচ্ছেন।

উপজেলার টেপাখড়িবাড়ী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম শাহিন জানান, ১০টি চর গ্রামের লোকজন আতঙ্কে রয়েছে। নিম্নাঞ্চল ও বিস্তীর্ণ এলাকাগুলো প্লাবিত হচ্ছে। সন্ধ্যা নাগাদ ব্যারাজ পয়েন্টে পানি আরও বৃদ্ধি পেতে পারে।

পূর্ব ছাতনাই ইউনিয়নের (ভারপ্রাপ্ত) চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান বলেন, এই ইউনিয়নের সবচেয়ে বড় চরগ্রাম ঝাড়সিংশ্বরসহ অন্যান্য চর গ্রামে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে ফসলি জমি ও ধানের বীজতলা তলিয়ে গেছে। ধীরে ধীরে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করছে।

এদিকে জেলার জলঢাকা উপজেলার ডাউয়াবাড়ী, গোপালঝাড় ও আলসিয়া পাড়ার প্রায় শতাধিক পরিবার বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। এ ছাড়া পার্শ্ববর্তী লালমনিরহাট জেলার হাতিবান্ধা ও কালীগঞ্জ উপজেলার নদ-নদীতে বন্যার পানি থইথই করছে।

ডালিয়া ডিভিশনের উপ-সহকারী প্রকৌশলী (পানি শাখা) তহিদুল ইসলাম বলেন, উজানের ভারী বর্ষণ, পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টির ফলে তিস্তায় পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে সন্ধ্যা নাগাদ বন্যার পানি আরও বৃদ্ধি পাবে। ইতোমধ্যে নিম্নাঞ্চলসহ চরগ্রামগুলো তলিয়ে গেছে।

ডালিয়া ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী অমিতাভ চৌধুরী জানান, উজানের ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীতে বন্যা দেখা দিয়েছে। দুপুর ১২টায় বিপৎসীমার (৫২ দশমিক ১৫) পাঁচ সেটিমিটার ওপর দিয়ে বন্যার পানি প্রবাহিত হচ্ছে। বন্যার পানি সামাল দিতে ব্যারাজের ৪৪টি স্লুইস গেট খুলে রাখা হয়েছে। আমরা সতর্কাবস্থায় আছি।