শেয়ার বিজ ডেস্ক : কানাডায় উৎপাদিত ক্যানোলার (একজাতীয় তেলবীজ) ওপর চীন অস্থায়ী কর আরোপ করেছে। এ সিদ্ধান্তে কানাডা হতাশা প্রকাশ করেছে। বেইজিং প্রাথমিকভাবে জানিয়েছে অটোয়া তাদের বাজারে এই শস্যটি ডাম্পিং করছে। খবর: এএফপি।
সাম্প্রতিক বছরগুলোয় বেইজিং ও অটোয়ার অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সম্পর্কের অবনতি হয়েছে, যেখানে কৃষিজ পণ্য প্রায়ই ক্ষতির শিকার হচ্ছে।
একটি তদন্তে প্রাথমিকভাবে ডাম্পিং করার ঘটনা জানার পর চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত মঙ্গলবারের আগে বলেছিল, তারা বৃহস্পতিবার (আজ) থেকে কানাডিয়ান ক্যানোলা আমদানির ওপর ৭৫ দশমিক ৮ শতাংশ অস্থায়ী শুল্ক আরোপ শুরু করবে।
মন্ত্রণালয় আরও জানিয়েছে, পদক্ষেপগুলো চূড়ান্ত না হওয়া পর্যন্ত এই শুল্ক ‘আমানত’ আকারে প্রদান করতে হবে। চীনের এ ঘোষণার প্রতিক্রিয়াস্বরূপ কানাডা জানিয়েছে, তারা ‘চীনের সিদ্ধান্তে গভীরভাবে হতাশ।’
কানাডার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমন্ত্রী মানিন্দর সিধু এবং কৃষিমন্ত্রী হিথ ম্যাকডোনাল্ড এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন, ‘আমরা ক্যানোলা ডাম্পিং করি না। আমাদের পরিশ্রমী কৃষকরা কানাডিয়ান ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য অংশীদারদের বিশ্বমানের খাদ্য সরবরাহ করেন।’ তারা আরও বলেন, ‘আমরা আমাদের নিজ নিজ বাণিজ্য উদ্বেগ সমাধানে চীনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে গঠনমূলক আলোচনায় অংশ নিতে প্রস্তুত।’
কানাডিয়ান ক্যানোলা গ্রোয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি রিক হোয়াইট শিল্প প্রতিনিধিদের সতর্ক করে এক বিবৃতিতে বলেন, ‘এই শুল্ক কানাডিয়ান কৃষকদের ওপর চাপ বাড়াবে। যদি দ্রুত সমাধান না পাওয়া যায়, তবে তার প্রভাব আমাদের খামার এবং গ্রামীণ এলাকায় দ্রুত অনুভূত হবে।’
কানাডা বিশ্বের শীর্ষ ক্যানোলা উৎপাদক দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম; যা থেকে রান্নার তেল, পশুখাদ্যের মিশ্রণ এবং বায়োডিজেল জ্বালানি তৈরি হয়। দেশটির ক্যানোলা রপ্তানির বেশির ভাগই যায় যুক্তরাষ্ট্র ও চীনে। সম্প্রতি এ দুটি দেশের সঙ্গে শুল্ক নিয়ে অটোয়ার বিরোধ হয়েছে।
গত বছরের সেপ্টেম্বর চীনা কর্তৃপক্ষ কানাডিয়ান ক্যানোলা চালানের তদন্ত শুরু করে এবং মঙ্গলবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানায়, তারা প্রাথমিকভাবে পেয়েছে যে অটোয়ার আমদানি চীনের দেশীয় শিল্পের ‘গুরুতর ক্ষতি’ করেছে।
গত মার্চে বেইজিং কানাডিয়ান রেপসিড তেল, মটরশুঁটি এবং অয়েল কেকসে (এক ধরনের পশুখাদ্য) ১০০ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করে; যা ছিল গত বছর চীনা বৈদ্যুতিক যানবাহনে ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপের অটোয়ার সিদ্ধান্তের জবাব।
ক্যানোলা কাউন্সিল অব কানাডার সভাপতি ও সিইও ক্রিস ডেভিসন বলেছেন, গত মঙ্গলবারের সিদ্ধান্ত ও বিদ্যমান বৈষম্যবিরোধী শুল্কের ফলে ‘চীনের বাজার কার্যত কানাডিয়ান ক্যানোলা শিল্পের জন্য বন্ধ হয়ে গেছে।’ এর আগে চলতি আগস্ট মাসে কানাডার ওপর শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে ৩৫ শতাংশ করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
এই সিদ্ধানের পরও হতাশা প্রকাশ করে কানাডার সরকার। তখন দেশটির প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি বলেছিলেন, ‘কানাডিয়ান সরকার এই পদক্ষেপে হতাশ।’
আগামী সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে কার্নি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেয়ার পরিকল্পনা ঘোষণা করার পর মার্কিন নেতা অটোয়ার ওপর বড় শুল্কের হুমকি দিয়েছিলেন।
সেই সঙ্গে কানাডার বিরুদ্ধে ‘ফেন্টানাইল এবং অন্যান্য অবৈধ ওষুধের চলমান প্রবাহ নিয়ন্ত্রণে সহযোগিতা’ করতে ব্যর্থতার অভিযোগ এনেছিল ট্রাম্প প্রশাসন।
কার্নি ফেন্টানাইলের বিরুদ্ধে ‘কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ এবং সীমান্ত নিরাপত্তা বৃদ্ধির জন্য’ অটোয়ার প্রচেষ্টার রূপরেখা তুলে ধরেছেন। তিনি বলেছিলেন, ‘কানাডা মার্কিন ফেন্টানাইল আমদানির মাত্র এক শতাংশে অবদান রাখছে এবং এই পরিমাণ আরও কমাতে নিবিড়ভাবে কাজ করছে।’

Discussion about this post