Print Date & Time : 9 September 2025 Tuesday 3:52 pm

তেল উৎপাদন নিয়ে অনিশ্চয়তায় ওপেক প্লাস

শেয়ার বিজ ডেস্ক : সৌদি আরব, রাশিয়া ও ওপেক প্লাস জোটের আরও ছয়টি গুরুত্বপূর্ণ সদস্য অপরিশোধিত তেল উৎপাদন নিয়ে কী সিদ্ধান্ত নেবে, গতকাল রোববারের বৈঠকে তা ঘিরে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, উৎপাদন বাড়ানোর বিষয়টিও আলোচনায় আসতে পারে।

লন্ডন থেকে এএফপি এ খবর জানায়। ভলান্টারি এইট’ (ভি৮) নামে পরিচিত আটটি তেল উৎপাদনকারী দেশের এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে এমন সময়ে, যখন আগামী মাসগুলোতে অতিরিক্ত সরবরাহের আশঙ্কায় তেলের দাম আরো কমে যাচ্ছে।

দাম বাড়ানোর লক্ষ্যে ১২ জাতির পেট্রোলিয়াম রপ্তানিকারক দেশগুলোর সংস্থা (ওপেক) ও তার মিত্র দেশগুলো  গত কয়েক বছরে একাধিক ধাপে প্রতিদিন প্রায় ৬০ লাখ ব্যারেল উৎপাদন হ্রাসে সম্মত হয়।

তবে চলতি বছরের এপ্রিলে সৌদি আরব, রাশিয়া, ইরাক, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত, কাজাখস্তান, আলজেরিয়া ও ওমান সমন্বয়ে গঠিত ভি৮ দেশগুলো নীতির পরিবর্তন ঘটায়। তারা বাজারের অংশীদারত্ব পুনরুদ্ধারে মনোযোগী হয়ে একের পর এক উৎপাদন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়।

এক সপ্তাহ আগেও বিশ্লেষকরা বলেছিলেন, অক্টোবর মাসে ভি৮ দেশগুলো তাদের বর্তমান উৎপাদন মাত্রা বজায় রাখবে।

তেলের দাম বর্তমানে ব্যারেলপ্রতি ৬৫ থেকে ৭০ ডলারের মধ্যে অবস্থান করছে, যা এ বছর এখন পর্যন্ত ১২ শতাংশ কমেছে। ওপেক প্লাসের বাইরে উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি শুল্ক আরোপের কারণে বৈশ্বিক চাহিদা হ্রাস পেয়েছে।

রিস্ট্যাড এনার্জির বিশ্লেষক হোর্হে লেওন জানান, বছরের শেষ প্রান্তিকে তেলের চাহিদা সাধারণত উত্তর গোলার্ধের গ্রীষ্মকালের তুলনায় কম থাকে। তার মতে, উৎপাদন না বাড়ালেও অতিরিক্ত সরবরাহের কারণে ধীরে ধীরে দামের ওপর চাপ বাড়বে।

তবে স্যাক্সো ব্যাংকের বিশ্লেষক ওলে হ্যানসেন বলেন, গত বুধবার থেকে বাজারে গুঞ্জন ছড়িয়েছে যে, গ্রুপটি অক্টোবরের জন্য কোটা সমন্বয়ের সিদ্ধান্ত নিতে পারে।

হোর্হে লেওন আরো বলেন, এই ধরনের সিদ্ধান্তের অর্থ ‘এই গ্রুপটি বাজারের অংশীদারত্ব পুনরুদ্ধারের ব্যাপারে সত্যিই তারা দৃঢ় অবস্থান নেবে, যদি সিদ্ধান্তের ফলে প্রতি ব্যারেল দাম ৬০ ডলারের নিচে নেমে আসে তাহলেও।

গ্লোবাল রিস্ক ম্যানেজমেন্টের আরনে লোহমান রাসমুসেনের মতে, ওপেকের নিজস্ব বিশ্লেষণও বলছে, আগামী প্রান্তিকগুলোয় বাজারে আরো তেলের জায়গা রয়েছে।

এ তথ্য হয়তো তাদের ২০২৩ সালের বসন্তে সম্মত অতিরিক্ত ১ দশমিক ৬৬ মিলিয়ন ব্যারেল প্রতিদিনের উৎপাদন হ্রাস পুনর্বহালের কথা ভাবতে উৎসাহিত করেছে। তবে ভূরাজনৈতিক ঝুঁকির কারণে এতদিন দামের পতন অনেক বিশ্লেষকের আশঙ্কার তুলনায় ধীর ছিল।

এদিকে বিশেষজ্ঞরা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া সম্পর্কের দিকেও নজর রাখছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি রাশিয়া ও তার তেল ক্রেতাদের টার্গেট করেছেন, যদিও রাশিয়া-ইউক্রেনের মধ্যে তার মধ্যস্থতার প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। গত আগস্টে তিনি ভারতের ওপর শুল্ক বাড়িয়েছেন রাশিয়ার তেল কেনার শাস্তি হিসেবে।

গত বৃহস্পতিবার প্যারিসে ইউক্রেনের মিত্রদের এক বৈঠকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে ট্রাম্প জানান, ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোর রাশিয়ার তেল কেনা তাকে হতাশ করছে, বিশেষ করে হাঙ্গেরি ও স্লোভাকিয়ার ক্ষেত্রে।

হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে এএফপিকে বলেন, ট্রাম্প স্পষ্ট করে বলেছেন, ইউরোপকে অবশ্যই রাশিয়া থেকে তেল কেনা বন্ধ করতে হবে, যা যুদ্ধকে অর্থায়ন করছে।

তিনি রাশিয়ার যুদ্ধ প্রচেষ্টাকে সমর্থন করার জন্য চীনের ওপর অর্থনৈতিক চাপ প্রয়োগের জন্য ইউরোপীয় দেশগুলোকেও আহ্বান জানিয়েছেন, কারণ বেইজিং রাশিয়ান তেলের বৃহত্তম আমদানিকারক।

রাশিয়ার রপ্তানি সীমিত করা গেলে ওপেক প্লাস দেশগুলোর জন্য বাজারে আরও জায়গা তৈরি হতে পারে।

তবে গ্লোবাল রিস্ক ম্যানেজমেন্টের আরনে লোহমান রাসমুসেন মন্তব্য করেন যে, সৌদি আরবের পর বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম উৎপাদক রাশিয়ার পক্ষে বাড়তি কোটার সুযোগ কাজে লাগানো কঠিন হবে। কারণ ইউক্রেন যুদ্ধ চালাতে তাদের উচ্চ তেলের দামের প্রয়োজন রয়েছে।