নিজস্ব প্রতিবেদক : কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের যুগ্ম মহাপরিদর্শক মো. মাহফুজুর রহমান ভূঁইয়া বলেছেন, বাংলাদেশের দুর্ঘটনাগুলো শুরু হয়েছিল তৈরি পোশাক খাত দিয়ে। অ্যাকর্ড-অ্যালায়েন্সের কাজের ফলে আমরা বলতে পারি যে তৈরি পোশাক খাতে দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রিত হয়েছে, তবে অন্যান্য শিল্পে নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি।
অনলাইন নিউজপোর্টাল বাংলা ট্রিবিউন এবং বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিলস) আয়োজনে ‘শিল্প খাতে অগ্নি ও রাসায়নিক দুর্ঘটনা রোধে কার্যকর নীতি বাস্তবায়ন ও টেকসই কর্মপরিবেশ’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় তিনি এসব কথা বলেন। গতকাল শনিবার সকালে রাজধানীর ডেইলি স্টার সেন্টারে এই আয়োজন শুরু হয়।
মাহফুজুর রহমান ভূঁইয়া বলেন, আমরা অ্যাকর্ড-অ্যালায়েন্স এবং ন্যাশনাল ইনস্টিটিউটের তিনটি উদ্যোগের কাজের পরিপ্রেক্ষিতে পরিকল্পনা করেছিল, অন্য গার্মেন্টসগুলো যারা অ্যাকর্ড অ্যালায়েন্স এবং ন্যাশনাল ইনস্টিটিউটের আওতায় আসেনি, ২০১৬-১৮ আমি সেফটি উইংয়ে ছিলাম, তখন আমরা সরকারের কাছে একটি প্রকল্প জমা দিই। সেখানে তাদের ৩ হাজার ৭০০ কারখানা চিহ্নিত করা হয়। এর মধ্যে আমরা ১৬২টি কারখানা লাল তালিকাভুক্ত করি। এগুলো এই মুহূর্তে খালি করে বন্ধ করে দিতে হবে। আমরা অনেক চাপাচাপির পড়ে গার্মেন্টসগুলোকে সরাতে পেরেছি, কিন্তু কিছুদিন পরে সেখানে অন্য প্রতিষ্ঠান ঢুকে গেছে। মহাখালীর রসুলবাগে আমার দেখা, হাসপাতাল নার্সিং ইনস্টিটিউট হয়ে গেছে। এটা আমাদের কাম্য ছিল না।
তিনি বলেন, সামগ্রিকভাবে যদি চিন্তা করি, এই দুর্ঘটনার রোধ আমাদের করতে হবে। চুড়িহাট্টার তদন্তের মধ্যে আমি নিজেও ছিলাম, সেখানে রাজউক ছিল ফায়ার সার্ভিস ছিল, তখন সিদ্ধান্ত হয়েছিল, আমাদের আগে মূল জায়গায় হাত দিতে হবে প্রথম বিজনেস করার জন্য যিনি পারমিশন দিয়ে থাকেন, সেই প্রতিষ্ঠানটাকে আমাদের আইডেন্টিফাই করতে, তাকে ধরতে হবে আগে। উনি কোথায় দিচ্ছেন তার ট্রেড লাইসেন্স, এই ট্রেড লাইসেন্সের সঙ্গে আবার বিজনেসের সঙ্গে সম্পর্ক আমরা ২০১৮ সালের আমাদের সাবেক সচিবের সঙ্গে একটা মিটিং করেছিলাম। বাংলাদেশ ব্যাংককে আমরা দাওয়াত দিয়েছিলাম। উনারা যেন যাকে তাকে মানে বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে নির্দেশনা যায়। যাকে তাকে লোন না দেন। অর্থাৎ প্রথম হতে হবে যে আমরা জানি, ঢাকা শহরে রাজউকের একটা ড্যাপ আছে। যেটা আপনি বলছেন, আমার ইন্ডাস্ট্রি, আবাসিক হবে কোথায়? মিরপুরে যেখানে আগুন লেগেছে আমি নিজে গিয়েছিলাম, ওই অংশটুকু শিল্প এলাকা। তার রাস্তার অপজিটে কিন্তু আবাসিক এলাকা। আবার শিল্প এলাকার ভেতরে আমরা আবাসিক বাড়ি করে ফেলি। এটা রোধ করার জন্য আমাদের এরকম একটা সমন্বিত পরিকল্পনা করতে হবে, যার সঙ্গে রাজউক জড়িত থাকবে। ড্যাপের প্ল্যানিং যারা ছিল তারা জড়িত থাকবে। ড্যাপের সব মেম্বার জড়িত থাকবে। আর দুর্ভাগ্য হলো, ড্যাপের কোথাও শিল্প এলাকা থাকার পরও মিনিস্ট্রি অব লেবারকে ড্যাপের কোনো জায়গাতে জায়গা দেয়া হয়নি। আমাকে যদি জায়গা না দেন ড্যাপের মধ্যে কাজ করার জন্য যদি আমাদের কোনো পার্ট না করেন আমি তো জানব না ড্যাপ কী বলতে চাচ্ছে, কোন এলাকাটা আমার শিল্প জোন, কোন এলাকা শিল্প জোন না কোনটা শিল্প রেড বা গ্রিন। যদি সেই জায়গায় আমি ঢুকতে পারতাম, তাহলে আমরা মতামত দিতে পারতাম যে এটাকে এভাবে করতে হবে।
তিনি বলেন, এখন যদি আমরা মনে করি, আমরা আর দুর্ঘটনা চাই না, না কেমিক্যাল দুর্ঘটনা না শিল্প দুর্ঘটনা, তাহলে আমাদের ধরে ধরে হাঁটতে হবে। আমাদের টু দ্য পয়েন্টে কাজ করতে হলে অবশ্যই বলতে হবে, এই এই জায়গাতে এই জাতীয় দোকান হবে। এই এই জায়গাতে এই জাতীয় দোকান হবে না। অর্থাৎ যার তাপ উৎপাদন করে তার সঙ্গে দাহ্য বস্তুর কোনো সম্পর্ক থাকা যাবে না। এটাকে আগে চিন্তা করতে হবে। আমরা মনে করি, আমাদের কাছে প্রচুর তালিকা আছে, ফায়ার সার্ভিসের তালিকা আছে, সিটি করপোরেশন চাইলে আমরা সমন্বিতভাবে অন্ততপক্ষে ঢাকা শহরের জন্য মনে করি, এই তিনটা দপ্তরকে একসঙ্গে করে যদি চাই আমরা অনেক কমিয়ে আনতে পারব।
বাংলা ট্রিবিউনের বিশেষ প্রতিনিধি শফিকুল ইসলামের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আলোচক ছিলেন বিলসের নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা আইএলওর কান্ট্রি ডিরেক্টর ম্যাক্স টুনন, সাবেক মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আলী আহমেদ খান, বাংলা ট্রিবিউনের নির্বাহী সম্পাদক উদিসা ইসলাম, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের পরিচালক (অপারেশনস অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স) লে. কর্নেল মুহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী, কর্মজীবী নারীর প্রকল্প সমন্বয়ক রিনা আমেনা, নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ আবুল বাশার মিয়া, জাতীয় শ্রমিক জোটের সাধারণ সম্পাদক নাইমুল আহসান জুয়েল, নগর পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক আখতার মাহমুদ, বাংলাদেশ সেন্টার ফর ওয়ার্কার্স সলিডারিটির (বিসিডাব্লিউএস) প্রতিষ্ঠাতা এবং নির্বাহী পরিচালক কল্পনা আখতার, বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মেহেদী আহমেদ আনসারী, গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতির সভাপ্রধান তাসলিমা আখতার, বিজিএমইএর সিনিয়র ডেপুটি সেক্রেটারি শফিকুল ইসলাম, অ্যাকশনএইড বাংলাদেশের উইমেন রাইটস অ্যান্ড জেন্ডার ইকুইটি লিড মোরিয়াম নেসা এবং বুয়েটের কেমিক্যাল ইঞ্জিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. ইয়াসির আরাফাত খান প্রমুখ।
প্রিন্ট করুন










Discussion about this post