Print Date & Time : 11 August 2025 Monday 2:23 pm

তৈরি পোশাক রপ্তানিতে সর্বোচ্চ মান বজায় রাখুন

 প্রতিটি দুর্যোগ নাকি সম্ভাবনা নিয়ে আসে। এ নিয়ে কোনো সংশয় থাকলেই আমাদের তা নেই। কেননা বৈশ্বিক মহামারি কভিডকালেই কমবেশি অভিজ্ঞতা সঞ্চয় হয়েছে আমাদের ঝুলিতে। কভিডকালে একশ্রেণির মানুষের পৈশাাচিক মনোবৃত্তি দেখেছি আমরা। কীভাবে স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী এমনকি মাস্ক ও সুঁই নিয়ে চুটিয়ে ব্যবসা করেছে একশ্রেণির মুনাফাখোররা! করোনা পরীক্ষা নিয়েও তেলেসমাতি জোচ্চুরি করেছে সাবরিনা-শাহেদরা। সেটি আমরা হয়তো ভুলতে চাইব। একই ধরনের ব্যবসা না করলে আমরা বর্তমান সুযোগটি আমাদের জন্য শাপেবর হতে পারে! যেমন চীনের হারানো ব্যবসা পাচ্ছে বাংলাদেশ। সরকারি তথ্য মতে, চলতি ২০২৫ পঞ্জিকাবর্ষের প্রথমার্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানি শীর্ষ ১০ দেশের মধ্যে বেশি রপ্তানি বেড়েছে বাংলাদেশের।

বিভিন্ন দেশের পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যকর হয়নি। তবে সে দেশের বাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে পাল্টা শুল্কের ছাপ ভালোভাবেই পড়েছে। গত বছরের প্রথমার্ধের তুলনায় চলতি বছরের প্রথম ছয় মাস জানুয়ারি-জুনে যুক্তরাষ্ট্রে চীনের রপ্তানি ১১১ কোটি ডলার কমেছে। তার বিপরীতে অবশ্য ভিয়েতনামের ১১৯ ও বাংলাদেশের ৮৫ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি বেড়েছে। গত জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ছয় মাসে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ২৫ শতাংশ, যা শীর্ষ ১০ দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ। একাধিক তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকের ভাষ্য: চীনের হারানো ক্রয়াদেশ বাংলাদেশে আসছে। ৬-৮ মাস ধরে তারই প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে। পাল্টা শুল্কের কারণে সামনের মৌসুম থেকে আরও বাড়তি ক্রয়াদেশ আসতে পারে। কারণ, প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় সুবিধাজনক অবস্থায় রয়েছে বাংলাদেশ। এখন বল আমাদের পোশাক রপ্তানিকারকদের কোটে। তারা কি মানসম্পন্ন পোশাক রপ্তানি করবেন নাকি নিম্নমানের পণ্য গছিয়ে দিয়ে সম্ভাবনা নিদের হাতে নষ্ট করবেন!

গতকালই বৃহস্পতিবার থেকে নতুন শুল্কহার কার্যকর হওয়ার কথা। সংশোধিত হার অনুযায়ী বাংলাদেশ ও ভিয়েতনামের পণ্যে ২০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক বসবে। ভারতীয় পণ্যের ক্ষেত্রে হারটি হবে ২৫ শতাংশ। যদিও রাশিরার জ্বালানি তেল কেনার কারণে গত বুধবার অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন ট্রাম্প। তার মানে ভারতের পণ্যে শুল্ক বেড়ে দাঁড়াল ৫০ শতাংশ। এখানেও প্রতিযোগী দেশের তুলনায় আমাদের সম্ভাবনা বাড়ছে বৈকি!

ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব কমার্সের আওতাধীন অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেলের (অটেক্সা) হালনাগাদ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে (জানুয়ারি-জুন) বাংলাদেশ ৪২৫ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এই রপ্তানি গত বছরের একই সময়ের ৩৪০ কোটি ডলারের রপ্তানির চেয়ে ২৫ দশমিক ১৩ শতাংশ বেশি। রপ্তানি বৃদ্ধির পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশের হিস্যাও বেড়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রথম মেয়াদে চীনের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধে জড়িয়েছিলেন। তখন থেকেই চীন থেকে অল্প অল্প করে ক্রয়াদেশ সরছিল। গত বছর নির্বাচনী প্রচারণায় চীনের ওপর বাড়তি শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন তিনি। তখন থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের অনেক ক্রেতা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে বাড়তি ক্রয়াদেশ দেয়া শুরু করে। সে জন্য বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি বাড়তে থাকে। এদিকে মার্কিন ক্রেতাদের পাশাপাশি ইউরোপীয় ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্রয়াদেশও বাড়বে। তার কারণ, ইউরোপীয় অনেক ক্রেতার ১০-১৫ শতাংশ ব্যবসা রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। তাই আমাদের সততা ও দায়িত্বের সঙ্গে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের চাহিদামতো নিখুঁত ও উন্নতমানের পণ্য তৈরিতে মনোযোগ বাড়াতে হবে।