‘ইইউর বাজারে চীনের সঙ্গে পেরে উঠছে না বাংলাদেশ’ শীর্ষক যে প্রতিবেদন গতকাল প্রকাশিত হয়েছে একটি সহযোগী দৈনিকে, তা পোশাকশিল্প মালিকদের মনোযোগ বাড়াবে বলেই ধারণা। প্রতিবেদনের ভাষ্য: ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) বাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে চলতি বছর কাছাকাছি অবস্থানে ছিল চীন ও বাংলাদেশ। প্রথম চার মাসে বাংলাদেশের চেয়ে চীন ৩৮ কোটি ইউরোর তৈরি পোশাক বেশি রপ্তানি করে। জুন শেষে সেই ব্যবধান বেড়ে হয়েছে ৯৭ কোটি ইউরো। শুধু তা-ই নয়, প্রবৃদ্ধিতেও বাংলাদেশকে পেছনে ফেলেছে চীন। একাধিক রপ্তানিকারক জানান, যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানিতে পাল্টা শুল্ক আরোপের পর থেকেই দেশটিতে চীনের তৈরি পোশাক রপ্তানিতে ধস নামে। তখন ব্যবসা টেকাতে চীনারা ইইউর বাজারের ক্রয়াদেশ নিতে আগ্রাসী হয়। তারা ক্রেতা প্রতিষ্ঠানকে আগের চেয়ে কম দাম অফার করতে শুরু করে। এতে বাজারটিতে প্রতিযোগিতার মুখে পড়েছেন বাংলাদেশি উদ্যোক্তারা।
চীনের ওপর বেশি শুল্ক আরোপে একপ্রকার ফুরফুরে মেজাজে ছিলেন আমাদের দেশের তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকরা। কারণ বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের সবচেয়ে বড় বাজার ইইউ। বাংলাদেশের মোট পোশাক রপ্তানির অর্ধেকের গন্তব্য হচ্ছে ইইউভুক্ত দেশগুলো। কিন্তু চীনের আগ্রাসী ভূমিকায় এখন তাদের কপালে ভাঁজ পড়েছে।
তৈরি পোশাক কয়েক বছর ধরে আমাদের প্রধান রপ্তানি পণ্য। পোশাকশিল্পের মাধ্যমেই দেশের অর্থনীতিতে এসেছে বড় সাফল্য। এ খাত শুধু দেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের ভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করেনি, একইসঙ্গে নিশ্চিত করেছে লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান। দেশের অর্থনীতিতে পোশাকশিল্পের অবদান অনস্বীকার্য। দারিদ্র্য বিমোচন, কর্মসংস্থান ও তৃণমূল পর্যায়ের মানুষের ক্ষমতা বাড়িয়েছে এ খাত।
বর্তমানে বিশ্বে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশের অবস্থান প্রথম দিকে। পোশাকশিল্পের বিকাশে নারীর ক্ষমতায়নসহ বাংলাদেশের সমাজব্যবস্থায় উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এসেছে। জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা ছাড়াও তৈরি পোশাকশিল্পে ২৫ লাখের বেশি নারী শ্রমিক কাজ করছেন। এতে শ্রমজীবী নারীদের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন পরিবারে তাদের অবস্থানের পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়েছে। আর্থিক সক্ষমতা অর্জনের কারণে এসব নারীর সামাজিক মর্যাদাও বেড়েছে।
পোশাক রপ্তানি বাড়াতে শিল্পমালিকদের ভূমিকাই বেশি। তারা বাজার সম্প্রসারণে প্রতিনিয়ত চেষ্টা করছেন। সরকার উৎসে করসহ পোশাকশিল্প মালিকদের শুল্ক ও বিভিন্ন ছাড় দিচ্ছে। এটি প্রসংশনীয়। কিন্তু এর চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো দ্বিপক্ষীয় চুক্তির মাধ্যমে বাণিজ্য বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া।
ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) দেশগুলো সারাবছর যে পরিমাণ টি-শার্ট কেনে, তার ৪০ শতাংশই বাংলাদেশি পোশাক কারখানা সরবরাহ করে। আমাদের পোশাকশিল্পের উদ্যোক্তাদের সেগুলোয় মনোযোগ বাড়াতে হবে এবং রপ্তানির নতুন গন্তব্য ও বাজার অনুসন্ধান করতে হবে।