Print Date & Time : 11 September 2025 Thursday 10:17 am

দারিদ্র্য ও বেকারত্ব বিমোচনে প্রযুক্তির ভূমিকা

জাহিদুল ইসলাম : বর্তমান শতাব্দীর বিশ্বায়নের ফলে একটি দেশের উন্নয়ন এবং দারিদ্র্য বিমোচনের ক্ষেত্রে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অন্যতম নিয়ামকের ভূমিকা পালন করছে। পৃথিবীতে ক্ষমতা ও টিকে থাকার স্বার্থে তথ্যের প্রয়োজন। যার কাছে যত বেশি তথ্য রয়েছে, সে তত বেশি শক্তিশালী। পরিবেশ, খাদ্য, জীবনব্যবস্থা, প্রতিবেশী, আবহাওয়া, কর্ম, সুযোগ, শিক্ষা, গবেষণা, প্রতিযোগী প্রভৃতি সম্পর্কে তথ্য জানা আমাদের জন্য একান্ত প্রয়োজনীয়। যদি আমাদের কাছে এসব তথ্য আসা বন্ধ হয়ে যায়, তবে হয়তো আমাদের বেঁচে থাকা সম্ভব হবে না। বেঁচে থাকার তাগিদে প্রযুক্তি যে তথ্য সংগ্রহে সাহায্য করে, তা নিঃসন্দেহে অত্যন্ত মূল্যবান। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির হাতিয়ার হচ্ছে কম্পিউটার ও ইন্টারনেট। কম্পিউটার ও ইন্টারনেটের বদৌলতে পৃথিবী এখন গ্লোবাল ভিলেজে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে এর ফলে পৃথিবী হাতের মুঠোয় নয়, আঙুলের ডগায় চলে এসেছে। কম্পিউটার ও ইন্টারনেট প্রযুক্তির ব্যাপক ব্যবহার এবং এগুলোর সফল প্রয়োগ যে কোনো অনুন্নত দেশকে উন্নত করতে অগ্রণী ভূমিকা পালনে সচেষ্ট। বর্তমান বিশ্বে দারিদ্র্য ও বেকারত্বকে সমাজের একটি চরম অভিশাপ হিসেবেই গণ্য করা হয়ে থাকে। কারণ এগুলো মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে ব্যর্থ করে, সামাজিক অস্থিরতা সৃষ্টি করে এবং অপরাধপ্রবণতা বাড়ায়। এই দুটি সমস্যা ব্যক্তি ও পরিবারকে বঞ্চনার চক্রে আটকে ফেলে এবং দেশ ও সমাজের সামগ্রিক উন্নয়নে বাধার সৃষ্টি করে থাকে। কর্মসংস্থান যে কোনো দেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। শিল্প, বাণিজ্য ও অর্থনীতিতে সমৃদ্ধ দেশগুলো নিজের দেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেই শিল্পে সমৃদ্ধ হয়েছে। কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি দেশের শিল্পায়ন, ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগের ওপর নির্ভর করে। কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি না হলে দেশে বেকারত্ব বেড়ে যায়। বলা হয় বেকারত্ব সমাজের অভিশাপ। প্রচুর বেকার থাকা মানে সমাজে এক ধরনের অস্থিরতা। আর শিক্ষিত শ্রেণির মানুষের বেকারত্ব মানেই এক ধরনের দুর্বিষহ মানসিক যন্ত্রণা। বর্তমানে পুরো বিশ্বের অন্যতম প্রধান অভিশাপ হচ্ছে বেকারত্ব। দিন দিন বেড়েই চলেছে বেকারত্বের হার। বেকারত্বের কারণে দারিদ্র্য বৃদ্ধি পায়। যখন দেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ কমে যায় বা বৃদ্ধি পায় না, তখন মানুষ কাজ পায় না। এর ফলে তাদের আয়ের উৎস বন্ধ হয়ে যায়। এতে করে মানুষের জীবনযাত্রার মান কমে এবং দারিদ্র্য বেড়ে যায়। বেকারত্ব বাড়ার পেছনে বিনিয়োগের অভাব, অর্থনৈতিক মন্দা, দুর্নীতি, কর্মসংস্থানের জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ তৈরি না হওয়া ইত্যাদি অন্যতম প্রধান কারণ। এক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তির প্রসার এবং সঠিক ব্যবহার হতে পারে বেকারত্ব ও দারিদ্র্য নির্মূল করার একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের উল্লেখযোগ্য ব্যাপক প্রসার মানেই দারিদ্র্য এবং বেকারত্বের হার কমে যাওয়া। বর্তমানে বিশ্বের কাছে তথ্যশক্তিই মূল শক্তি হিসেবে পরিচিত। তথ্যপ্রযুক্তির কল্যাণে মানুষের জীবন হয়েছে এখন অনেক সহজ, সরল ও স্বাচ্ছন্দ্যময়। মানুষের এমন কোনো কাজ নেই, যেখানে প্রযুক্তির ছোঁয়া লাগেনি। মানবসম্পদকে দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তর করতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষার ওপর যথেষ্ট গুরুত্বারোপ করা প্রয়োজন। দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়ন এবং বেকারত্ব দূর করতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। দেশের তরুণ প্রজš§কে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষায় দক্ষ করে গড়ে তুলতে পারলে দেশ ও জাতির উন্নয়নে কোনো রকম বাধার সম্মুখীন হতে হবে না। প্রযুক্তির উন্নয়ন একটি দেশ ও জাতির সামগ্রিক উন্নয়নের নামান্তর। এটি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার প্রসার এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির মাধ্যমে একটি জাতিকে আধুনিক ও উন্নত করে গড়ে তুলতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ একটি দেশের সম্ভাবনার দ্বার উšে§াচন করে এবং দেশীয় অর্থনীতিকে শক্তিশালী করে দেশের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি নিশ্চিত করে থাকে। একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি পৃথিবীর দরিদ্র এবং বেকার জনগোষ্ঠীর জন্য খুলে দিয়েছে অপার সম্ভাবনার দুয়ার। ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় কৃষিবিপ্লব, শিল্পবিপ্লবের পর বর্তমান পৃথিবী নতুনতর এক বিপ্লবের মুখোমুখি হয়েছে, যার নাম তথ্যবিপ্লব। বর্তমানে প্রযুক্তি মানুষকে পরিবর্তিত বিশ্বের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তথ্য, জ্ঞান, দক্ষতা, কৌশল, প্রবণতা ও যন্ত্রপাতিতে সমৃদ্ধ করে তুলেছে। প্রযুক্তি হচ্ছে মানুষের প্রতিদিনের অন্যতম প্রধান সঙ্গী। মানুষ এই প্রযুক্তির সঙ্গে প্রতিদিনের বিভিন্ন কাজকর্মের মাধ্যমে ওতপ্রোতভাবে জড়িত রয়েছে। এককথায় বলা যায়, প্রযুক্তি মানুষকে জোগায় জীবন-সহায়ক ব্যবস্থা বা লাইফ সাপোর্ট সিস্টেম। আর এ কারণে মানুষ পৃথিবীতে নিজেকে খাপ খাইয়ে নেওয়ার শক্তি অর্জন করে। সুতরাং আত্মনির্ভরশীল হওয়ার জন্য তথ্য প্রযুক্তিগত কাজের দক্ষতা অর্জন করা অত্যন্ত জরুরি। এটি বর্তমান ডিজিটাল যুগে নতুন সুযোগ তৈরি করার পাশাপাশি কর্মজীবনে উন্নতি ঘটায়। এর ফলে দেশ ও বিদেশের বিভিন্ন কাজে নিজেকে যোগ্য করে তোলা সম্ভব। এই দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে একদিকে যেমন নিজের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা আসে, ঠিক তেমনি প্রযুক্তিভিত্তিক বিভিন্ন সমস্যা সমাধান এবং উদ্ভাবনী কাজে অংশ নেয়ার সুযোগ তৈরি হয়। তাই দারিদ্র্য ও বেকারত্ব বিমোচনে তথ্যপ্রযুক্তির ওপর গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন। প্রযুক্তি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়াতে, কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করতে, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা উন্নত করতে এবং সরকারি সেবা সহজলভ্য করতে ব্যাপকভাবে সাহায্য করে থাকে। প্রযুক্তি বেকারত্ব ও দারিদ্র্য বিমোচনে একটি শক্তিশালী হাতিয়ার। তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে নতুন কাজের সুযোগ তৈরি হয়, দক্ষতা বৃদ্ধি পায় এবং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের প্রসার ঘটে থাকে, যা বেকারত্ব হ্রাস ও দারিদ্র্য বিমোচনে সরাসরি ভূমিকা রাখে। এছাড়া ব্যক্তিগত ও বৈশ্বিক উন্নয়নে তথ্যপ্রযুক্তির গুরুত্ব অপরিসীম। কারণ এটি দ্রুত তথ্য আদান-প্রদান, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার উন্নতি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, সামাজিক যোগাযোগ বৃদ্ধি এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের আধুনিকীকরণের মাধ্যমে মানবসভ্যতার অগ্রগতিতে সরাসরি ভূমিকা পালন করে থাকে। তথ্যপ্রযুক্তি ছাড়া আধুনিক বিশ্ব অকল্পনীয় এবং টেকসই উন্নয়নেও এর অবদান অনস্বীকার্য।

 

নেটওয়ার্ক টেকনিশিয়ান (আইসিটি সেল)

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়