নিজস্ব প্রতিবেদক : এবার সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) বিশেষ অনুসন্ধান-২-এর পরিচালক খান মীজানুল ইসলামকে। কমিশনের সিদ্ধান্তে গতকাল সোমবার বিকালে তাকে এ বরখাস্ত আদেশ দেয়া হয়।
গত ২ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের ফেসবুকে পোস্টে লেখেন, দুদকের পরিচালক খান মো. মীজানুল ইসলাম বর্তমানে কমিশনের প্রধান কার্যালয়ের বিশেষ অনুসন্ধান ও তদন্ত-২-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ বিভাগের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তার বিভাগের অধীনেই রয়েছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ এবং বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড-সংক্রান্ত স্পর্শকাতর দুর্নীতির অনুসন্ধান।
জানা যায়, গত ১৭ আগস্ট চিকিৎসার উদ্দেশ্যে খান মো. মীজানুল ইসলাম রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন এবং ২০ আগস্ট ছাড়পত্র নেন। হাসপাতালে তিন রাত চিকিৎসা গ্রহণে তার বিল দাঁড়ায় ৪ লাখ ৩৪ হাজার ১৩১ টাকা। অভিযোগ ওঠে, ওই বিলের একটি অংশ পরিশোধ করেছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক মাহবুবুল আনাম, যিনি আবার বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের একজন ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের মালিক। আর এই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে তদন্ত করছে খান মীজানুল ইসলামের অধীনস্থ দল; যা স্বার্থের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে অভিযোগ করা হয়।
জুলকারনাইন সায়ের পোস্টে উল্লেখ করা হয়, ২০ আগস্ট বিকাল ৫টা ২৭ মিনিটে এভারকেয়ার হাসপাতালের কর্মকর্তার নথিতে মাহবুবুল আনামের নাম আসে। এরপর মাত্র কয়েক মিনিটের ব্যবধানে খান মীজানুল ইসলামের ছাড়পত্র দেয়া হয়। বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন সাংবাদিক জুলকারনাইন-দুদকের পরিচালক যিনি দুর্নীতির বিরুদ্ধে তদন্ত করছেন, তিনি যদি সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে সুবিধা গ্রহণ করেন, তবে তা নৈতিকতার কোথায় দাঁড়ায়?
এ প্রসঙ্গে খান মীজানুল ইসলাম নিজেই ফেসবুকে মন্তব্য করে অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি দাবি করেন, পুরো বিল তার স্ত্রী ও পরিবারের পক্ষ থেকেই পরিশোধ করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘১৭-২০ আগস্ট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলাম। দুটি রিং পড়ানো হয়। আমার স্ত্রী ভর্তি সময়েই দুই দফায় ২ লাখ ৩০ হাজার টাকা পরিশোধ করেন। ডিসচার্জের সময় ৫ শতাংশ ডিসকাউন্ট বাদে ২ লাখ ৪ হাজার ১৩২ টাকা ২১ আগস্ট পরিশোধ করি। এরপর সাইফুল ভাই ডিসকাউন্ট অনুমোদন হওয়ার পর বাকি কাগজপত্র সম্পন্ন করেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘জুলকারনাইন সায়েরের তথ্য সম্পূর্ণ মিথ্যা। মাহবুবুল আনামের কাছ থেকে আমি কোনো সুবিধা গ্রহণ করিনি। এছাড়া বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড-সংক্রান্ত কোনো তদন্ত আমার অধীনে নেই।’
গতকাল সোমবার দুদকের উপপরিচালক মাহবুবুল আলম ওরফে ‘ভাগিনা মাহবুব’কেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মোমেন স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, মামলার ভয় দেখিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া, তদন্ত থেকে দায়মুক্তির বিনিময়ে ঘুষ গ্রহণ এবং বিপুল পরিমাণ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে এ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। অভিযোগ অনুযায়ী কেবল ঢাকাতেই তার প্রায় ১৫০ কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে।
এর আগে সময়মতো প্রতিবেদন দাখিল না করায় উপপরিচালক কমলেশ মণ্ডল এবং মো. আহসানুল কবীর পলাশকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের কর্মচারী বিধিমালা, ২০০৮ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হয়।
এদিকে একের পর এক কর্মকর্তা বরখাস্ত হওয়ায় দুদকের অভ্যন্তরে আতঙ্ক বিরাজ করছে। কর্মকর্তাদের একটি অংশ মনে করছেন, চিহ্নিত দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া ঠিক আছে, তবে সৎ ও দক্ষ কর্মকর্তারাও মিথ্যা অভিযোগের শিকার হতে পারেনÑএমন ভয়ে তারা কাজের গতি কমিয়ে দিয়েছেন।

Discussion about this post