নিজস্ব প্রতিবেদক : দুর্গাপূজা উপলক্ষে ইলিশ মাছ চেয়ে বাংলাদেশের কাছে চিঠি দিয়েছে ভারত। গত মঙ্গলবার সেই চিঠি দেয়া হয়েছে কলকাতার ফিস ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের কাছে।
আগামী সেপ্টেম্বরের শেষে পশ্চিমবঙ্গে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর ভারতজুড়ে শুরু হবে কালীপূজা, দীপাবলি প্রভৃতি। এ উপলক্ষে কয়েক বছর ধরে পূজা মৌসুমে ভারতে ইলিশ মাছ রপ্তানি করে থাকে বাংলাদেশ সরকার। যদিও তা করা হয় ভারতের অনুরোধে। আর এবারও সেই অনুরোধের ব্যতিক্রম হলো না।
গত বছর পূজা মৌসুমে পররাষ্ট্র উপদেষ্টার হস্তক্ষেপের কারণে ইলিশ এসেছিল ভারতে। এ বিষয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টাকে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে ওই চিঠিতে লেখা হয়েছে, ‘অত্যন্ত বিনীত ও শ্রদ্ধার সঙ্গে আপনাকে জানানো যাচ্ছে যে, গত বছর আপনার হস্তক্ষেপের ফলে ভারতে ২ হাজার ৪২০ মেট্রিক টন ইলিশ মাছ রপ্তানির অনুমতি পেয়েছিল। পদ্মার ইলিশ পশ্চিমবঙ্গ, আসাম ও ত্রিপুরার মৎস্যপ্রেমীদের কাছে সুস্বাদু ও জনপ্রিয়।’
এরপরই লেখা হয়েছে, ‘দুর্গাপূজা ২০২৫-এর কাউন্টডাউন শুরু হওয়ায় আমরা আপনাকে আসন্ন দুর্গাপূজার জন্য ইলিশ মাছ রপ্তানির অনুমতি দেয়ার জন্য অনুরোধ করছি। উল্লেখ্য, এ বছর দুর্গাপূজা ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে পড়েছে।’
তবে প্রতিবছর অনুমোদিত ইলিশের সম্পূর্ণ কোটা রপ্তানি না হওয়ায় আক্ষেপ প্রকাশ করেছে সংগঠনটি। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ‘গত বছর আপনার অফিস কর্তৃক প্রদত্ত ২ হাজার ৪২০ মেট্রিক টন ইলিশ মাছের মধ্যে মাত্র ৫৭৭ মেট্রিক টন ইলিশ মাছ রপ্তানি করা সম্ভব হয়েছিল। তার আগের বছর (২০২৩) ৩ হাজার ৯৫০ মেট্রিক টনের মধ্যে মাত্র ৫৮৭ মেট্রিক টন, ২০২২ সালে ২ হাজার ৯০০ মেট্রিক টনের মধ্যে ১ হাজার ৩০০ মেট্রিক টন এবং ২০২১ সালে ৪ হাজার ৬০০ মেট্রিক টনের মধ্যে ১ হাজার ২০০ মেট্রিক টন ইলিশ রপ্তানি করেছি।’
এই সমস্যার কারণ হিসেবে রপ্তানির জন্য বেঁধে দেওয়া সময়সীমাকে দায়ী করা হয়েছে। ফিশ ইমপোর্টারস অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক সৈয়দ আনোয়ার মাকসুদ স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘প্রায় প্রতি বছরই আমরা অনুমোদিত ইলিশ মাছের সম্পূর্ণ পরিমাণ গ্রহণ করতে ব্যর্থ হই। কারণ রপ্তানি পারমিটগুলো একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকে। যেমন ৩০ থেকে ৪৫ দিনের মধ্যে সম্পূর্ণ পরিমাণ রপ্তানি করতে হয়। এত বিশাল পরিমাণ রপ্তানির জন্য এই সময়সীমা আসলে যথেষ্ট নয়। তাই আপনার কাছে আমাদের অনুরোধ, যে দয়া করে কোনো সময়সীমা ছাড়াই ইলিশ মাছ রপ্তানির অনুমতি দেয়ার কথা বিবেচনা করা হোক।’
চিঠিতে অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছর সফলভাবে সম্পন্ন করার জন্য অভিনন্দন জানিয়েছে পশ্চিমবঙ্গের ফিশ ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন। বর্তমান সরকারের আমলে ভারতের সঙ্গে আরো শক্তিশালী দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক স্থাপনের প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছে ব্যবসায়ীদের এ সংগঠন।
এদিকে মৌসুম শুরু হলেও ভারতমুখী রপ্তানির বিষয়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এখনও কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা মেলেনি। এতে করে চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ নিশ্চিত করতে পারছে না কলকাতার পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা। এই পরিস্থিতিতে পশ্চিমবঙ্গের ক্রেতারা তাকিয়ে আছেন মিয়ানমার ও গুজরাটের ইলিশের দিকে। যদিও এসব ইলিশের মান বাংলাদেশের পদ্মার তুলনায় নিম্নমানের হলেও চাহিদা মেটাতে আপাতত সেখানকার মাছই বিকল্প হয়ে উঠেছে। সম্প্রতি টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য বলা হয়েছিল।
এরই মধ্যে গুজরাটের নর্মদা নদীর মোহনা ও আরব সাগর থেকে ধরা ইলিশ কলকাতায় প্রবেশ করতে শুরু করেছে। পাঁচ দিন ধরে গড়ে প্রতিদিন পাঁচটি ট্রাকে প্রায় ৬০ টন মাছ আসছে। এর মধ্যে ডিমওয়ালা ইলিশ কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৯০০ থেকে ১০০০ রুপিতে এবং ডিমছাড়া ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ রুপিতে।
এছাড়া মিয়ানমার থেকেও হিমায়িত ইলিশ পশ্চিমবঙ্গের বাজারে আসছে। স্থানীয় আড়তদাররা এসব মাছ কোল্ডস্টোরেজে সংরক্ষণ করছেন। মিয়ানমারের ইলিশ কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ রুপিতে। হাওড়া পাইকারি মাছ বাজারের সভাপতি সৈয়দ আনোয়ার মাকসুদ জানিয়েছেন, ইতোমধ্যে ৬২৫ টন মিয়ানমারের ইলিশ সংরক্ষণ করা হয়েছে।
এর পাশাপাশি ডায়মন্ড হারবার ও দিঘা থেকে স্থানীয়ভাবে ধরা ইলিশও বাজারে উঠছে। ৪৫০-৫০০ গ্রাম ওজনের এসব মাছ বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ৮০০ রুপিতে। এক কেজি ওজনের ইলিশের দাম কেজিপ্রতি ১ হাজার ৮০০ রুপি পর্যন্ত পৌঁছেছে। পরিস্থিতির কারণে কলকাতার ইলিশ ব্যবসায়ীরা এবার বাধ্য হয়ে মিয়ানমারের ইরাবতী ও গুজরাটের নর্মদা নদী থেকে ইলিশ সংগ্রহ করছেন। আগে পদ্মা বা কোলাঘাটের রূপনারায়ণ নদীর ইলিশকেই বেশি পছন্দ করা হতো। সেগুলোর স্বাদ ও গুণগত মান এখনও শ্রেষ্ঠ বলে বিবেচিত হয়।

Discussion about this post