একীভূত হওয়ার প্রক্রিয়ায় থাকা পাঁচ ব্যাংককে যারা সমস্যায় ফেলেছেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে চায় সরকার। আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠি দিয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, পাঁচ ব্যাংককে সমস্যায় ফেলার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করতে হবে। সেই সঙ্গে এসব ব্যাংকের সার্বিক অব্যবস্থাপনার জন্য দায়ী মালিক, পরিচালনা পর্ষদের সদস্য, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও খেলাপি ঋণ গ্রাহকদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে। এই পাঁচ ব্যাংকের খেলাপি ঋণ, বিনিয়োগ ও সম্পদ পুনরুদ্ধার করার কথাও চিঠিতে বলা হয়েছে।
ব্যাংক খাতে নৈতিকতা ও নিরাপত্তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কোনোটিকে উপেক্ষা করার সুযোগ নেই। একটির কমতি থাকলে সাধারণ মানুষ বিশেষ করে গ্রাহকের আস্থা হারাবে ব্যাংক। এটি সর্বজনস্বীকৃত যে, শুধু অর্থই ব্যাংকের প্রধান পুঁজি নয়; সেই অর্থের নিরাপত্তা বিধানও জরুরি।
যে পাঁচ ব্যাংক নিয়ে আমাদের ব্যাংক খাতে নানা আলোচনা, উদ্বেগ; এটি কয়েক বছরের চর্চার ফল। এখন যদি সত্যি রাঘববোয়ালদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনা যায়; তা সত্যিতা আমাদের ব্যাংক খাতের বড় অর্জন হিসেবে উদাহরণ হয়ে থাকবে। একটি সহযোগী দৈনিকে গতকাল লুটপাট চলাকালে যারা ওই ব্যাংকগুলোর পরিচালনায় জড়িত ছিলেন সেই উদ্যোক্তা ও ব্যাংকারদের নাম প্রকাশ করেছে।
ব্যাংক খাতে কোনো নেতিবাচক খবর দ্রুতই ছড়িয়ে পড়ে। মানুষ ব্যাংকে টাকা জমা রাখে কেবল সঞ্চয় ও মুনাফার জন্যই নয়, নিরাপত্তার জন্যও। সেখানে ব্যাংকের আর্থিক কেলেঙ্কারি ও অর্থ লুটের ঘটনায় সাধারণ মানুষ আতঙ্কিত হয়। আমাদের মনে আছে, সুদ বৃদ্ধির ফলে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ধসে পড়ে স্টার্টআপের জন্য ঋণ দেয়া যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিবি)। ব্যালান্স শিট বা স্থিতিপত্র শক্তিশালী করতে তারা ২২৫ কোটি ডলার সমমূল্যের শেয়ার বিক্রি করবে। কিন্তু এই এক ঘোষণায়ই গ্রাহক ও বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। পরদিন ব্যাংকটির শেয়ারদর ৬০ শতাংশ কমে যায়। ফলে আমানতকারীরা তুলে নেন চার হাজার ২০০ কোটি ডলার। ওই সময় দ্রুতই সিদ্ধান্ত নেয় যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা। সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক বন্ধ করে ব্যাংকের সব আমানতের দায় নেয় তারা। এই ব্যাংক বন্ধের দুই দিনের মাথায় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বন্ধ করে দেশটির তৃতীয় বৃহত্তম ব্যাংক সিগনেচার। সাময়িক বিপাকে পড়লেও আমানতকারীদের দেশটির অর্থ বিভাগ এবং অন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো যৌথ বিবৃতি দিয়ে ব্যাংক দুটির সব আমানতকারীর সমুদয় অর্থ ফেরত দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে বলে আশ্বস্ত করেছে। বাস্তবিকই কার্যকর ব্যবস্থা নিয়েছে। বর্তমানে আলোচিত পাঁচ ব্যাংকের অচলাবস্থায় আমাদের কেন্দ্রীয় ব্যাংকও ওই ধরনের ব্যবস্থা নেতে পারে। পাশাপাশি অবশ্যই দুষ্কর্মের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের অবশ্যই বিচার ও শাস্তি হওয়া উচিত। এতে পরবর্তী সময়ে আর কেউ ব্যাংক লুটপাটের সাহস করবে না।
