Print Date & Time : 12 September 2025 Friday 9:06 am

দু-এক দিনের মধ্যেই লোডশেডিং স্বাভাবিক হবে

নিজস্ব প্রতিবেদক : যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে হঠাৎ বেশ কয়েকটি বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সারাদেশে লোডশেডিং শুরু হয়েছে। এ পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে আরও দুই থেকে তিন দিন সময় লাগবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। গত মঙ্গলবার এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে পিডিবি জানায়, অঘটনজনিত কারণে কয়েকটি কেন্দ্রে উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিদ্যুৎ সরবরাহে ঘাটতি তৈরি হয়েছে। এর ফলে সারাদেশেই লোডশেডিং করতে হচ্ছে।

এদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার এক ব্রিফিংয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান সাম্প্রতিক লোডশেডিং পরিস্থিতি নিয়েও বলেন, দেশের দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ থাকায় দুদিন ধরে সারাদেশে লোডশেডিং করতে হয়েছে। তবে শুক্রবারের মধ্যেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে বলে আশ্বাস দেন তিনি।

উপদেষ্টা আরও বলেন, বিদ্যুৎ সরবরাহে স্থিতিশীলতা আনতে আমরা বিকল্প ব্যবস্থা নিয়েছি। আগামীকাল থেকেই লোডশেডিং অনেকটা কমে যাবে।

এ সময় তিনি গ্যাস সংকট প্রসঙ্গে বলেন, প্রতিনিয়তই দেশে গ্যাসের ঘাটতি হচ্ছে। গত বছর ৮৪টি এলএনজি জাহাজ আমদানি করা হয়েছিল, আর চলতি বছরে ১০৮টি জাহাজ আনা হচ্ছে। ডিসেম্বর পর্যন্ত এসব জাহাজ দেশে পৌঁছাবে। তবে উপদেষ্টা মনে করেন, বছরে ১১৫টি জাহাজ আমদানি করা গেলে গ্যাসের পূর্ণ চাহিদা মেটানো সম্ভব হবে।

তিনি আরও জানান, নতুন করে গৃহস্থালি পর্যায়ে গ্যাস সংযোগ দেয়া হবে না। বরং পুরোনো লাইন সংস্কার ও অবৈধ সংযোগ অপসারণে জোর দেয়া হচ্ছে।

সম্প্রতি গরমের তীব্রতার সঙ্গে বেড়েছে বিদ্যুতের চাহিদা। বিপরীতে কমেছে উৎপাদন। গত মঙ্গলবার রাত ১১টায় দেশে বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ১৬ হাজার ৩০০ মেগাওয়াট। কিন্তু সরবরাহ ছিল ১৪ হাজার ৫৬৯ মেগাওয়াট। সে সময় লোডশেডিং হয় ১ হাজার ৬৫৩ মেগাওয়াট।

মাতারবাড়ী কয়লাবিদ্যুৎ কেন্দ্রের একটি ইউনিট যান্ত্রিক ত্রুটিতে বন্ধ। আরেকটিতে মিলছে ২৫০-৬০ মেগাওয়াট। পটুয়াখালি, রামপাল কেন্দ্র থেকেও কয়লার অভাবে মিলছে না চাহিদামতো বিদ্যুৎ। ভারতের আদানির সরবরাহ অর্ধেকে নেমেছে।

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিউবো–উৎপাদন) সদস্য মো. জহুরুল ইসলাম বলেন, দু-তিন দিনের মধ্যে হয়তো রিকভার করবে। রামপালেরটা পথে আছে, মাতারবাড়িরটা দেরি হবে। ভারত থেকে লোড কমেছে। আদানিরটা কমেছে। তারা সক্রিয় হলে সমাধান মিটে যাবে।

বিদ্যুৎ বিভাগের তথ্যমতে, ঢাকা বিভাগে চাহিদার তুলনায় পাঁচ শতাংশ বিদ্যুৎ কম পাচ্ছে। ময়মনসিংহে লোডশেডিং ১৪ ভাগ। সিলেটে ১৮, রংপুরে ১২ এবং কুমিল্লায় ১৪ ভাগ লোডশেডিং হচ্ছে। পল্লী বিদ্যুতের গ্রাহকরাই রয়েছেন বেশি ভোগান্তিতে। লোডশেডিং বিড়ম্বনার জন্য নবায়নযোগ্য উৎসের বিদ্যুতের অভাব জ্বালানি সরবরাহে ঘাটতি বড় কারণ বলছেন বিশেষজ্ঞরা।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ শফিকুল আলম বলেন, বিদ্যুৎ খাতের আমদানিনির্ভরতা ৬৫ শতাংশের মতো। এই অবস্থা থেকে আমাদের নিজস্ব নির্ভরতা বাড়াতে হবে। জ্বালানি দক্ষতা বাড়াতে হবে। অপচয় কমাতে হবে। এ ছাড়া তেলের ব্যবহারটাও কমাতে হবে।

দেশে মোট ১৩৩ বিদ্যুৎকেন্দ্রের গ্রিডভিত্তিক উৎপাদন সক্ষমতা ২৮ হাজার মেগাওয়াট। কিন্তু জলবিদ্যুৎ, সৌর-বায়ুবিদ্যুতের মতো নবায়নযোগ্য উৎসের সক্ষমতা এক হাজার মেগাওয়াটের কম।