নিজস্ব প্রতিবেদক : দেরিতে হাসপাতালে আসা অর্ধেক ডেঙ্গু রোগীই মারা যাচ্ছেন ২৪ ঘণ্টার মধ্যে। চলতি বছর ডেঙ্গুতে মারা যাওয়া রোগীদের মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই মারা গেছেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, দেরিতে হাসপাতালে আসার কারণেই চিকিৎসার সুযোগ কমে যাচ্ছে এবং বেড়ে যাচ্ছে মৃত্যুর ঝুঁকি।
সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সভাকক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য তুলে ধরেন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবু জাফর। তিনি বলেন, চলতি বছর ডেঙ্গুতে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ১৭৯ জন। এদের মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি রোগী মারা গেছেন ভর্তি হবার ২৪ ঘণ্টা পার না হতেই ।
স্বাস্থ্য মহাপরিচালক বলেন, মৃত্যুর পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ডেঙ্গুতে যারা মারা গেছেন, তাদের অনেকেই খারাপ অবস্থায় হাসপাতালে এসেছেন। অনেক সময় দেরিতে ভর্তি হচ্ছেন, ফলে চিকিৎসা দেওয়ার সুযোগ খুব সীমিত হয়ে যাচ্ছে।
ডা. জাফর সতর্ক করে বলেন, ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হবার পরপরই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। প্রয়োজনে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি হলে মৃত্যুর ঝুঁকি অনেকাংশে কমে যায়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, চলতি বছরের গত কয়েকদিনে ডেঙ্গুর প্রকোপ কিছুটা বেড়েছে। বর্ষা মৌসুমে প্রতি বছরই এমন পরিস্থিতি দেখা যায়। গত বছরের পরিসংখ্যান উল্লেখ করে মহাপরিচালক বলেন, ২০২৪ সালের জুনে মারা যান ৮ জন, জুলাইয়ে ১৪ জন, আগস্টে ৩০ জন এবং সেপ্টেম্বরে ৮৭ জন। সে বছর জুনে রোগী ভর্তি হয়েছিল ৭৯৮ জন, জুলাইয়ে ২ হাজার ৬৬৯, আগস্টে ৬ হাজার ৫২১ এবং সেপ্টেম্বরে ১ হাজার ৮৯৭ জন। তিনি বলেন, পরিসংখ্যান স্পষ্ট করছে, সেপ্টেম্বরে ডেঙ্গুর প্রকোপ সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায় এবং মৃত্যুও ঘটে সবচেয়ে বেশি।
তিনি আরো বলেন, আমাদের উদ্দেশ্য শুধু ব্যবস্থাপনা জানানো নয়, জনগণকে সচেতন করাও। কারণ, যত উদ্যোগই নেওয়া হোক, মানুষ সচেতন না হলে ডেঙ্গুর মতো সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ কঠিন হয়ে যায়।
সাংবাদিকদের উদ্দেশে ডা. জাফর বলেন, ডেঙ্গু যদি শুরুতেই শনাক্ত করা না যায় এবং সময়মতো চিকিৎসা শুরু না হয়, তাহলে মৃত্যুর ঝুঁকি বহুগুণ বেড়ে যায়। আপনাদের সহযোগিতা আমাদের দরকার, যাতে সচেতনতা আরো বৃদ্ধি করা যায়।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ডেঙ্গু শনাক্তের জন্য এনএস১ কিট সব জায়গায় মজুত আছে এবং পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত করা হয়েছে। সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ ও হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা বিভাগের কর্মকর্তারাও এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপন করেন।
মৃত্যুর সংখ্যা প্রকাশ নিয়ে বিভ্রান্তির প্রসঙ্গ টেনে অধ্যাপক ডা. জাফর বলেন, প্রকাশিত খবরে এসেছে, ২৪ ঘণ্টায় ১২ জন মারা গেছেন। প্রকৃতপক্ষে এর ৯ জন মারা যান বৃহস্পতিবার। কিন্তু শুক্রবার সরকারি ছুটি থাকায় সঠিক সংখ্যা প্রকাশ পায়নি। এতে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। এটিকে আমাদের ব্যর্থতা হিসেবেই মনে করি।
এস এস