মজনুর রহমান আকাশ, গাংনী (মেহেরপুর) : ইউটিউবে সিংহ ও বাঘের সংকর প্রজাতির ভিডিও দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে ভেড়ার নতুন জাত উদ্ভাবন করেছেন মেহেরপুরের গাংনীর এক খামারি আসাদুজ্জামান আসাদ। গাড়ল ও দুম্বার সংকরায়ণের মাধ্যমে তৈরি এই প্রজাতির ওজন, আকৃতি এবং রোগ প্রতিরোধে দেশের প্রচলিত গাড়লের চেয়ে অনেক বেশি সক্ষম বলে দাবি তার। অন্যদিকে জেলার পশুপালনকারীরা বলেন, এ ধরনের সংকরায়ণ টেকসই হলে তা হতে পারে বাংলাদেশের মাংস উৎপাদন খাতে একটি নতুন দিগন্ত। তবে এর জন্য প্রয়োজন দ্রুত গবেষণা, প্রশিক্ষণ ও সরকারি সহায়তা।
দেশি ভেড়ার সঙ্গে কাশ্মীরি প্রজাতির ভেড়ার সংকরায়ণে যে জাতের উদ্ভব হয়েছিল সেটি গাড়ল নামে বাংলাদেশ ও ভারতবর্ষে স্বীকৃতি পায়।
মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার ভোমরদা গ্রামের তরুণ আসাদুজ্জামান আসাদ মালয়েশিয়া ফেরত প্রবাসী। ২০২০ সালে দেশে ফিরে গরুর খামার দিয়ে শুরু করেন কৃষি উদ্যোগ। তবে গো-খাদ্যের অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধিতে ওই খামার বেশি দিন চালাতে পারেননি। পরে তিনি ছাগল ও গাড়ল পালন শুরু করেন। এরপর তুলনামূলক লাভ বেশি হওয়ায় ধীরে ধীরে গাড়লের দিকেই ঝুঁকেন।
আসাদ জানান, ২০২৪ সালের কোরবানির ঈদের আগে তিনি নাটোর থেকে সংগ্রহ করেন দুটি দুম্বা। পাঁঠা সংগ্রহ করে স্ত্রী গাড়লের সঙ্গে একই পালে পালন শুরু করেন। কিছুদিনের মধ্যেই গর্ভধারণের পর জš§ নেয় একটি নতুন ধরনের সংকর বাচ্চা। মাত্র তিন মাসে ৩০ থেকে ৪০ কেজি ওজন হয় একেকটি বাচ্চার। ক্রস এই জাতের বাচ্চা দ্রুত বেড়ে উঠা এবং আকার আকৃতি অনেকটাই দুম্বার মতো দেখতেও আকর্ষণীয়।
প্রথম পরীক্ষায় সফল হয়ে বাড়িয়ে দেন প্রজনন কার্যক্রম। বর্তমানে তার খামারে রয়েছে ৮০টি মা গাড়ল এবং বেশ কয়েকটি দুম্বা। মা দুম্বা থেকে পাওয়া পুরুষ দুম্বা দিয়ে অব্যাহত রয়েছে সংকরায়ণ কার্যক্রম। গেল এক বছরে পাওয়া ৮০টি ক্রস বাচ্চা বিক্রি করেছেন। একটি সাধারণ গাড়লের ছয় মাস বয়সী বাচ্চা গড়ে ১২ থেকে ১৫ কেজি ওজনের হয়। সেখানে এই সংকর প্রজাতির ওজন ছয় মাসে পৌঁছে যাচ্ছে ৩৫ থেকে ৪০ কেজিতে। শুধু তাই নয়, এই প্রাণীগুলো বৃষ্টিতে ভিজেও সহজে অসুস্থ হচ্ছে না। জলাবদ্ধ এলাকায়ও স্বাভাবিকভাবে টিকে থাকতে পারছে। দেশের মাংসের চাহিদা মেটাতে প্রতিটি ঘরে পৌঁছে দিতে চান উন্নত এই ক্রস জাতের দুম্বা-গাড়ল। এ পর্যন্ত ৪০টির মতো সংকর বাচ্চা বিক্রি করেছন।
গাংনী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মোত্তালিব আলী জানান, মাঠ পর্যায়ে দেখা যাচ্ছে এই সংকর ভেড়াগুলোর মাংস উৎপাদন ক্ষমতা অনেক বেশি। তবে এ নিয়ে এখনও কোনো জাতীয় নীতিমালা নেই, সরকারিভাবেও কোনো গবেষণা শুরু হয়নি। এজন্য আমরা কোনো খামারিকে গাড়ল ও দুম্বার সংকরায়ণ করতে নিরুৎসাহিত করছি না।

Discussion about this post