Print Date & Time : 20 July 2025 Sunday 9:02 pm

দ্রুত বিলুপ্ত হয়ে যাবে ব্রিকস: ট্রাম্প

 শেয়ার বিজ ডেস্ক : ব্রিকস সদস্য দেশগুলোর ওপর ১০ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের হুমকি পুনর্ব্যক্ত করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। একইসঙ্গে তিনি বলেছেন, এই জোট খুব দ্রুত বিলুপ্ত হয়ে যাবে। খবর-রয়টার্স।

প্রতিবেদনে বলা হয়, স্থানীয় সময় শুক্রবার হোয়াইট হাউজে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি যখন এই ব্রিকস নামের ছয় দেশের জোটের কথা শুনেছি, তখনই আমি তাদের খুব, খুব শক্তভাবে আঘাত করেছি। আর যদি তারা সত্যিকার অর্থেই অর্থপূর্ণ কোনো জোট গঠন করে, তাহলে সেটা খুব দ্রুত ভেঙে যাবে।’ এ সময় তিনি কোনো দেশের নাম উল্লেখ না করে বলেন, ‘আমরা কখনও কাউকে আমাদের সঙ্গে খেলা করতে দেব না।’

ট্রাম্প জানান, বৈশ্বিক রিজার্ভ মুদ্রা হিসেবে ডলারের অবস্থান রক্ষা করতে তিনি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সেইসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডিজিটাল মুদ্রা (সেন্ট্রাল ব্যাংক ডিজিটাল কারেন্সি) চালু করতে কখনোই দেবেন না। গত ৬ জুলাই ট্রাম্প হুঁশিয়ারি দেন, ব্রিকস জোটের তথাকথিত ‘অ্যান্টি-আমেরিকান নীতির’ সঙ্গে যারা একমত, এমন দেশগুলোর ওপর নতুন অতিরিক্ত ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে।

জি-৭ ও জি-২০ এর মতো আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক জোটগুলো যখন অভ্যন্তরীণ বিভাজন আর ট্রাম্পের ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির কারণে কার্যকারিতা হারাচ্ছে, তখন ব্রিকস নিজেকে বহুপক্ষীয় কূটনীতির একটি বিকল্প মঞ্চ হিসেবে তুলে ধরছে।

ব্রিকস দেশগুলো বর্তমানে বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি জনসংখ্যা এবং বিশ্বের অর্থনৈতিক উৎপাদনের ৪০ শতাংশ প্রতিনিধিত্ব করে। ২০০৯ সালে ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত ও চীন ব্রিকস প্রতিষ্ঠা করে। জোটটি পরে দক্ষিণ আফ্রিকাকে যুক্ত করে এবং গত বছর মিসর, ইথিওপিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতকে সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করেছে। বর্তমানে ৩০টিরও বেশি দেশ পূর্ণ সদস্য বা অংশীদার হিসেবে ব্রিকসে অংশগ্রহণের আগ্রহ প্রকাশ করেছে।

জোটের সদস্য সংখ্যা বাড়ানোর ফলে উন্নয়নশীল দেশগুলোর পক্ষে কথা বলতে ব্রিকসের কূটনৈতিক ওজন বেড়েছে। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের মতো বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কারের দাবি জোরদার করেছে ব্রিকস। পাশাপাশি ক্রমবর্ধমান বাণিজ্য দ্বন্দ্ব ও ভূরাজনৈতিক উত্তেজনার মধ্যে জোটটিকে কূটনৈতিক প্ল্যাটফর্ম হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার কথা বলেছে।

ট্রাম্প আগে থেকেই ব্রিকসকে নিয়ে সমালোচনামুখর। দীর্ঘদিন ধরেই তিনি বলে আসছেন, এই জোট তৈরি হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র এবং ডলারের বৈশ্বিক ভূমিকার ক্ষতি করার জন্য। তবে তিনি তার দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ দেখাননি। ব্রিকস নেতারা ট্রাম্পের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন এবং বলেছেন, এই জোট কোনোভাবেই আমেরিকাবিরোধী নয়।

চলতি বছরের শুরুতে ব্রাজিল জানিয়েছে, তারা এ বছর ব্রিকসের একটি অভিন্ন মুদ্রার প্রস্তাব আর সামনে আনবে না। তবে জোটটি বর্তমানে ‘ব্রিকস পে’ নামে একটি আন্তঃসীমান্ত লেনদেনব্যবস্থা চালুর কাজ এগিয়ে নিচ্ছে, যার মাধ্যমে সদস্য দেশগুলো নিজেদের স্থানীয় মুদ্রায় বাণিজ্য ও আর্থিক লেনদেন করতে পারবে।

ব্রাজিলে অনুষ্ঠিত সর্বশেষ ব্রিকস সম্মেলনে নেতারা যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ও বাণিজ্য নীতির প্রতি পরোক্ষ সমালোচনা করেছেন।

ট্রাম্প বিশেষ করে ব্রাজিলকে লক্ষ্য করে সরাসরি পদক্ষেপ নিয়েছেন। তিনি ঘোষণা দিয়েছেন, আগামী আগস্ট থেকে ব্রাজিলের আমদানি পণ্যে ৫০ শতাংশ হারে শুল্ক বসানো হবে। একই সঙ্গে তিনি ব্রাজিলের ‘অন্যায্য বাণিজ্য অনুশীলন’ তদন্তেও নির্দেশ দিয়েছেন।