নিজস্ব প্রতিবেদক : বিএনপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, ‘আগামী নির্বাচনে ধানের শীষকে জেতাতে হবে; এর কোনো বিকল্প নেই। ধানের শীষকে জেতানোর মাধ্যমে জনগণের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হবে। ধানের শীষকে জেতানোর মাধ্যমে দেশকে রক্ষা করতে হবে। প্রথম বাংলাদেশ, আমার শেষ বাংলাদেশ এবং সবার আগে বাংলাদেশ। নো কম্প্রোমাইজ।’
রাজধানীর ফার্মগেটে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বিএনপি আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে গতকাল বুধবার লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এসব কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘সামনের নির্বাচনে আমরা জনগণের রায় চাই, সমর্থন চাই। এজন্য জনগণের কাছে যেতে হবে। তাদের ভালোবাসা অর্জন করতে হবে। যেকোনো মূল্যে ধানের শীষকে বিজয়ী করতে হবে। এর মাধ্যমেই দেশ ও জাতিকে রক্ষা করতে হবে। এটি করতে যদি ব্যর্থ হই, তাহলে দেশ ধ্বংস হয়ে যাবে। অতীতে দেশ যতবার বিপদে পড়েছে, ততবারই বিএনপি দেশকে রক্ষা করেছে। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও বেগম খালেদা জিয়া ক্ষমতায় আসার আগে প্রতিবারই দেশ ধ্বংসের মুখে পতিত হয়েছিল। এবারও দেশকে বিএনপিই রক্ষা করবে।’
বিজয়ের মাস উপলক্ষে ‘দেশ গড়ার পরিকল্পনা’ শীর্ষক আয়োজনে যুবদল ও কৃষক দলের সারা দেশের জেলা পর্যায়ের বিভিন্ন ইউনিটের হাজারের বেশি নেতা অংশ নেন।
বিএনপি ক্ষমতায় গেলে আইনশৃঙ্খলা কঠোর করা, ফ্রি ইন্টারনেট ব্যবস্থা চালু, প্রান্তিক মানুষ থেকে শুরু করে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য পর্যায়ক্রমে ফ্যামিলি কার্ড প্রদান, কৃষকদের জন্য ফার্ম কার্ড, সাধারণ মানুষের জন্য স্বাস্থ্য কার্ড, পরিবেশ রক্ষা ও ভোকেশনাল প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলাসহ বিভিন্ন কর্ম-পরিকল্পনার কথাও তুলে ধরেন তারেক রহমান।
তারেক রহমান আরও বলেন, ‘পত্রিকার পাতা খুললেই বহু ডিবেট (তর্ক) চলতে থাকে। এর থেকে সবাইকে বেরিয়ে আসতে হবে। রাজনীতিবিদরা যাদের সাধারণ মানুষ হিসেবে গণ্য করে, তারাই এই ডিবেট শুনতে শুনতে বিরক্ত। রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে এখন মানুষ ক্লিয়ার ম্যাসেজ চায়। বিএনপি প্রকাশিত দেশ গড়ার পরিকল্পনার মতো করে অন্য রাজনৈতিক দল প্ল্যানিং দিতে পারেনি। একমাত্র বিএনপিই দিয়েছে।’
ফ্যামিলি কার্ডের মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে সারা দেশের নারীদের স্বাবলম্বী করে তোলা হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘দেশের অর্ধেক পপুলেশন নারী। তারা কেন ঘরের মধ্যে থাকবে? বিএনপি ক্ষমতায় গেলে প্রায় চার কোটি পরিবারের নারী প্রধানদের জন্য ‘ফ্যামিলি কার্ড’ দেওয়ার উদ্যোগ নেবে। এই কার্ডের মাধ্যমে একজন নারী যে ভাতা পাবে, সেটি দিয়ে শিশুদের সুষমখাদ্য ও লেখাপড়ার খরচ মিটিয়েও কিছু টাকা ক্ষুদ্র ব্যবসায় বিনিয়োগ করতে পারবেন বলে তিনি আশা রাখেন। এভাবে ধীরে ধীরে পুরো পরিবার স্বাবলম্বী হয়ে উঠবে।’
কৃষি কার্ডের মাধ্যমে একজন কৃষক সার, বীজ, কীটনাশক ও কৃষিঋণের সুবিধা পাবেন বলেও জানান তিনি। বিএনপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, এতে করে ধীরে ধীরে ওই কৃষক আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হয়ে উঠবেন। পর্যায়ক্রমে দেশের সব কৃষককে কৃষি কার্ডের আওতায় আনা হবে। কৃষকের মেরুদণ্ড শক্তিশালী হলে কৃষি রপ্তানিতে আরও মনোযোগী হওয়া যাবে। ১৯৮০ সালে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের শাসনামলে বাংলাদেশ থেকে বিপুল পরিমাণ খাদ্যশস্য রপ্তানি হতো। আমাদের সেই ধারাবাহিকতায় ফিরে যেতে হবে।
বিএনপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আরও বলেন, ‘মেগা প্রকল্প মানেই মেগা দুর্নীতি। তাই বিএনপি নতুন করে মেগা প্রকল্পে যাবে না। কারণ দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরতে হবে। রাষ্ট্রের অর্থ জনগণের শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের উন্নতির পেছনে খরচ করতে হবে। সে জন্যই নতুন আইটি পার্ক বানানোর পরিকল্পনা নেই আমাদের। যেগুলো আছে, সেগুলোর সংস্কার করা হবে। তারপর তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ে যারা কাজ করতে চান, তাদের কাজের সুযোগ করে দেওয়া হবে।’
উপস্থিত নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘এই কথাগুলো বিশ্বাস করে হƒদয় দিয়ে ধারণ করতে হবে। দেশ গড়ার পরিকল্পনা সবার কাছে পৌঁছানো হয়েছে। সেগুলো নিয়ে রেখে দিলে লাভ নেই। আপনার জেলা, ইউনিয়ন, পৌরসভা, গ্রাম ও সংগঠনসহ বিএনপির অন্য নেতাকর্মীদের নিয়ে বসুন। আপনার এলাকা ও নির্বাচনী এলাকার প্রত্যেকটি ঘরে ঘরে গিয়ে মানুষের সামনে দলের পরিকল্পনা তুলে ধরুন। তবেই এগুলো সফলতার মুখ দেখবে।’
এর আগে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন। সেখানে আরও বক্তব্য দেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মাহদী আমিন, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুল হক, বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি মীর শাহে আলম, যুবদল সভাপতি আবদুল মোনায়েম মুন্না, সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন, কৃষক দলের সভাপতি হাসান জাফির তুহিন, সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুল প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। সঞ্চালনা করেন দলের আরেক যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন নবী খান।
