‘১০-১২ বছরের মধ্যে নগদ অর্থবিহীন বাংলাদেশ সম্ভব।’ সংযুক্ত আরব আমিরাতভিত্তিক (ইউএই) ফিনটেক প্রতিষ্ঠান ফিলপস লিমিটেড আয়োজিত ব্যাংকার্স মিট ২০২৫-এ বিশ্বখ্যাত ফিনটেক বিশেষজ্ঞ ও ভবিষ্যৎবিদ ব্রেট কিংসহ আলোচক বক্তারা এমন আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। বৃহস্পতিবার ওই মিটে বক্তারা বলেছেন, শুধু নগদ অর্থের লেনদেনের মাধ্যমে কখনোই দেশের সব মানুষকে ব্যাংকিং সেবার আওতায় আনা যাবে না; বরং মোবাইলফোনভিত্তিক ডিজিটাল আর্থিক সেবা ও ডিজিটাল পরিচয়ভিত্তিক অবকাঠামো গড়ে তুলতে পারলেই বাংলাদেশ খুব দ্রুত নগদ অর্থনির্ভরতা কাটিয়ে আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতে বড় অগ্রগতি অর্জন করতে পারবে। মূল প্রবন্ধে ব্রেট কিং বলেন, বাংলাদেশে ব্যাংকিং খাতের উচ্চমাত্রায় খেলাপি ঋণ (এনপিএল) ও প্রশাসনিক নানা সংকট মোকাবিলায় প্রযুক্তিনির্ভর অবকাঠামো গড়ে তোলা জরুরি। অনুষ্ঠানের প্রশ্নোত্তর পর্বে তিনি বলেন, চীন ২০১২ সালে বাংলাদেশের মতোই ছিল নগদ অর্থনির্ভর অর্থনীতির দেশ। অথচ সে দেশে এখন খুচরা লেনদেনে নগদ অর্থের ব্যবহার ১ শতাংশের কম। বাংলাদেশও চাইলে ১০-১২ বছরের মধ্যে একই পরিবর্তন সম্ভব। তবে এ জন্য ইন্টারনেট ও মোবাইল নেটওয়ার্কের মানোন্নয়ন, কম দামে স্মার্টফোনের প্রাপ্যতা জোরদার ও ডিজিটাল অবকাঠামোয় বিনিয়োগকে প্রধান শর্ত হিসেবে উল্লেখ করেন তিনি। তিনি বলেছেন, কেবল নগদ লেনদেন করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক (এআই) অর্থনীতি গড়ে তোলা সম্ভব নয়। নগদ অর্থ দিয়ে কেউ ডেটা সেন্টারের সার্ভারের সময় কিনতে পারবে না, ড্রোন ওড়াতে পারবে না কিংবা স্বয়ংক্রিয় বৈদ্যুতিক যানও চালাতে পারবে না।
গত কয়েক বছরে ডিজিটাল পেমেন্টে বাংলাদেশের অগ্রগতিতে মূল অনুঘটক ছিল মোবাইল ফোনে আর্থিক সেবা (এমএফএস)। এর মাধ্যমে ব্যাংক ব্যবস্থার বাইরে থাকা বা সীমিত ব্যাংকিং সুবিধা পাওয়া বৃহৎ জনগোষ্ঠীকে আর্থিক অন্তর্ভুক্তির আওতায় নিয়ে আসা সম্ভব হয়েছে। এখন যদি ফিনটেক প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিকশিত করার মাধ্যমে উদ্ভাবনী প্রযুক্তি, দেশজুড়ে বিস্তৃত এজেন্ট ও মার্চেন্ট নেটওয়ার্কের মাধ্যমে এ সেবাপ্রাপ্তি সুলভ করা যায়, তাহলে তা নিঃসন্দেহে বৈপ্লবিক অগ্রগতি সাধনে সক্ষম হবে। অল্প সময়ের মধ্যেই প্রযুক্তিভিত্তিক উদ্ভাবনের ধারাবাহিকতা, গ্রাহক কেন্দ্রিকতা, সর্বোচ্চ কমপ্লায়েন্স নিশ্চিত করার মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করার পাশাপাশি বিকাশ দেশের ডিজিটাল আর্থিক ইকোসিস্টেমকে সুদৃঢ় করবে।
ভবিষ্যৎ স্মার্ট বাংলাদেশের অন্যতম মূল ভিত্তি হবে ক্যাশলেস বা নগদ অর্থবিহীন লেনদেনের ব্যবস্থা। এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বিকাশ গ্রাহকদের ডিজিটাল লিটারেসি বা সাক্ষরতা বৃদ্ধিতে ভূমিকা পালন করছে। এ ছাড়া ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন নাগরিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমন্বয় ও সহযোগিতা বাড়ানোর কারণে দেশে ডিজিটাল পেমেন্ট প্রসার লাভ করছে। ভবিষ্যতের সব সেবার মূলে থাকবে তথ্যভিত্তিক সিদ্ধান্ত নেয়ার এখনই সময়। ইন্টারনেট সংযোগ বাড়ানো। বড় শহরগুলোর বাইরে প্রান্তিক জনপদেও দ্রুতগতির ইন্টারনেট সুবিধা পৌঁছে গেলে ডিজিটাল পেমেন্টের আরও প্রবৃদ্ধি হবে। সরকার এ লক্ষ্যে কার্যকর পদক্ষেপ নেবে বলেই প্রত্যাশা।

Discussion about this post