শেয়ার বিজ ডেস্ক : রাশিয়ার সঙ্গে চলমান যুদ্ধের অবসানে যুক্তরাষ্ট্র একটি নতুন প্রস্তাব প্রস্তুত করেছে, যেখানে ইউক্রেনকে কিছু ভূখণ্ড ছাড় দিতে হবে এবং সামরিক শক্তি কমাতে হবে। বুধবার প্রকাশিত একাধিক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে এমন তথ্য ওঠে এসেছে। খসড়া প্রস্তাব সম্পর্কে অবগত একাধিক অজ্ঞাতনামা সূত্রকে উদ্ধৃত করে জানানো হয়, পরিকল্পনাটি রুশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেই প্রস্তুত করা হয়েছে। মস্কো অবশ্য নতুন কোনো শান্তি প্রস্তাবের অস্তিত্ব অস্বীকার করেছে। এ খবর দিয়েছে আল জাজিরা।
এতে বলা হয়, বৃহস্পতিবার ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ও মার্কিন সামরিক কর্মকর্তাদের বৈঠকের আগে এ ধরনের তথ্য ফাঁস ইউক্রেনের জন্য নেতিবাচক হিসেবে দেখা হচ্ছে। দেশটির পূর্বাঞ্চলে একের পর এক এলাকা হারাতে থাকা এবং বাড়তি সামরিক সহায়তার জন্য জরুরি আহ্বান জানানো ইউক্রেনের জন্য এটি বড় ধাক্কা বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
ফিনান্সিয়াল টাইমসকে এক অজ্ঞাতনামা কর্মকর্তা জানান, প্রস্তাবটি রাশিয়ার পক্ষেই বেশি সুবিধাজনক এবং রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের জন্য অত্যন্ত আরামদায়ক। ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা বলেন, প্রস্তাবের শর্তগুলো রাশিয়ার দাবির সঙ্গে প্রায় সমান। ফলে উল্লেখযোগ্য সংশোধন ছাড়া এটি কিয়েভের জন্য কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
জেলেনস্কি বলেন, যুদ্ধের অবসানে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্ব কার্যকর ও শক্তিশালী থাকতে হবে। টেলিগ্রামে তিনি লেখেন, রক্তপাত বন্ধ করতে এবং স্থায়ী শান্তি নিশ্চিত করতে আমাদের অংশীদারদের সঙ্গে সমন্বিতভাবে কাজ করা জরুরি, এক্ষেত্রে মার্কিন নেতৃত্বের কার্যকারিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ফিনান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, মার্কিন দূত স্টিভ উইটকফ এই ২৮ দফা প্রস্তাব মায়ামিতে ইউক্রেনের জাতীয় নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা পরিষদের সচিব রুস্তেম উমেরভকে হস্তান্তর করেন। প্রস্তাব অনুযায়ী ইউক্রেনকে পূর্বাঞ্চলীয় দনবাসের অবশিষ্ট অংশ ত্যাগ করতে হবে এবং সামরিক বাহিনীর আকার অর্ধেকে নামাতে হবে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সও একই কথা জানিয়েছে। প্রস্তাবে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী ছোট করার শর্ত রাখা হয়েছে। এছাড়া কিছু অস্ত্র ব্যবহারে ইউক্রেনকে বিরত থাকতে হবে এবং যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সহায়তাও উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে আনা হবে। ইউক্রেনে রুশ ভাষাকে সরকারি ভাষার মর্যাদা দেয়া এবং রুশ অর্থডক্স চার্চের ইউক্রেনীয় শাখাকে সরকারি স্বীকৃতি দেয়ার শর্তও প্রস্তাবে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে বলে ফিনান্সিয়াল টাইমস জানিয়েছে।
রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অবশ্য বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ অব্যাহত থাকলেও কোনো নতুন শান্তি পরিকল্পনা বিষয়ে আনুষ্ঠানিক তথ্য তারা পায়নি।
গত জুলাইয়ে তুরস্কের ইস্তাম্বুলে অনুষ্ঠিত সর্বশেষ বৈঠকের পর কিয়েভ ও মস্কোর মধ্যে সরাসরি আলোচনা হয়নি। তবে সে বৈঠকের ফলে কিছু বন্দি বিনিময় হয়েছিল। রোববার জেলেনস্কি জানান, তিনি বন্দি বিনিময় পুনরায় শুরু হওয়ায় আশাবাদী। উমেরভ জানান, তুরস্ক ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের মধ্যস্থতায় এ বিষয়ে আলোচনা এগোচ্ছে।
গত বুধবার জেলেনস্কি তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগানের সঙ্গে বৈঠক করেন। এরদোগান জানান, উভয় পক্ষকে আবার ইস্তাম্বুলে আলোচনার টেবিলে ফিরে আসতে হবে। তিনি বলেন, আজকের বৈঠকে আমরা জোর দিয়ে বলেছি- প্রক্রিয়া বাস্তববাদী ও ফলপ্রসূ দৃষ্টিভঙ্গিতে এগিয়ে নেয়া জরুরি।
এসব আলোচনার মধ্যেও ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা অব্যাহত রয়েছে। বুধবারের ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় কমপক্ষে ২৫ জন নিহত এবং বহু মানুষ আহত হয়েছেন বলে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
প্রিন্ট করুন






Discussion about this post