প্রত্যন্ত গ্রামবাংলায় হস্তশিল্পকে কুটির শিল্প নামে চেনে সব শ্রেণির মানুষ। ঘরে ঘরে এই শিল্প গড়ে ওঠে বলে একে কুটির শিল্প নামে অভিহিত করা হয়। সাধারণত নকশিকাঁথা, মাটির তৈরি পণ্য, বাঁশ-বেত, জামদানি, পাটজাত পণ্য, মাটির তৈরি টেরাকোটা এ সবই কুটির শিল্প। গ্রাম্য মানুষের হাতে নিখুঁত শৈল্পিক এসব হস্তকর্ম এতটাই আকর্ষণীয় যে, পণ্যগুলো দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশের মাটিতে আসন করে নিয়েছে। দেশে আনছে বৈদেশিক মুদ্রা।
এ গুরুত্বপূর্ণ শিল্পটি নিয়ে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে ‘বাংলাদেশের হস্তশিল্পের বিকাশে করণীয়’ শীর্ষক একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়ে গেল। ওই আলোচনায় বক্তারা, শতকোটি টাকার দেশীয় বাজার ও বিলিয়ন ডলারের বৈশ্বিক বাজার থাকার সম্ভাবনার কথা তুলে ধরে সরকারি-বেসরকারি পরিকল্পনা, গবেষণা, ডিজাইন উন্নয়ন এবং নীতিগত সহায়তা দিয়ে হস্তশিল্প খাতের সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর আহ্বান জানান।
দেশীয় হস্তশিল্প পণ্যের প্রধান ক্রেতা যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো। হস্তশিল্প থেকে অর্জিত অর্থ অনেক পরিবারের রোজগারের উৎস হয়ে আছে। এভাবে এ শিল্প গ্রামীণ অর্থনীতিকে সচল করে জাতীয় অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখছে। এ খাতে সহজ শর্তে অর্থায়ন, কারিগরি প্রশিক্ষণ এবং রপ্তানি সহজীকরণসহ প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করলে ভবিষ্যতে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন যেমন বাড়বে, তেমনি কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।
কুটির শিল্পের উন্নয়ন করে বাজার সম্প্রসারণ, ডিজিটাল মার্কেটপ্লেস, নকশা কেন্দ্র স্থাপন, প্রশিক্ষণ ও রপ্তানি প্রচারণা জোরদারের সুপারিশ করেন কর্মশালার অংশগ্রহণকারীরা।
হস্তশিল্প বাংলাদেশের একটি ঐতিহ্যবাহী ও দ্রুত সম্ভাবনাময় খাত। এক তথ্য মতে, দেশে বর্তমানে প্রায় এক লাখ ৪৮ হাজার কারিগর রয়েছে, এদের মধ্যে ৫৬ শতাংশ নারী, যারা প্রত্যক্ষভাবে এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত। উৎপাদনের ৯৫ দশমিক ৮ শতাংশই সম্পূর্ণ গৃহভিত্তিক, যা গ্রামীণ অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে।
এক তথ্য মতে, বাংলাদেশে হস্তশিল্পের স্থানীয় বাজারের বার্ষিক আকার প্রায় ১০ থেকে ১৫ হাজার কোটি টাকা। অন্য এক তথ্য মতে, ২০২৪ সালে বৈশ্বিক হস্তশিল্পের বাজার ছিল ১ লাখ ১০ হাজার ৭৬৭ কোটি ইউএস ডলার। তবে বিশাল এ বাজারে বাংলাদেশের অংশীদারিত্ব ১ শতাংশেরও কম। শুধু তাই নয়, ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশ ২ কোটি ৯৭ লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার মূল্যের হস্তশিল্প রপ্তানি করেছে। বৈশ্বিক বাজার প্রতি বছর প্রায় ২০ শতাংশ হারে সম্প্রসারিত হচ্ছে এবং ২০৩২ সালের মধ্যে বাজারের আকার ২ লাখ ৪০ হাজার কোটি ডলারে পৌঁছাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
হস্তশিল্প শিল্পের বর্তমান অবস্থা, বাজার সম্ভাবনা, চ্যালেঞ্জ ও উন্নয়ন কৌশল বিষয়ে আমাদের ভাববার সময় এসেছে। আলোচ্য তথ্যগুলোয় এ ইঙ্গিত রয়েছে, কুঠির শিল্পের রয়েছে বিশাল সম্ভাবনা। এ সম্ভাবনাকে যদি আমরা কাজে লাগাতে পারি তাহলে দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
এজন্য আমাদের হস্তশিল্প খাতে সহজ শর্তে অর্থায়ন, কারিগরি প্রশিক্ষণ এবং রপ্তানি সহজীকরণসহ প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। ভবিষ্যতে এ খাত বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টিতে আরও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।’
আমরা মনে করি, গ্রামীণ অর্থনীতির স্বার্থে হস্তশিল্পকে গুরুত দিয়ে আরও এগিয়ে নেয়া দরকার। এ বিষয়ে সরকারসহ সব মহলকে ভাবতে হবে।
প্রিন্ট করুন








Discussion about this post