নিজস্ব প্রতিবেদক : সরকার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নন-ডিসক্লোজার অ্যাগ্রিমেন্ট করতে যাচ্ছে। এ চুক্তি এতই গোপন হবে যে, বাংলাদেশ কোনো লবিস্ট নিয়োগ করলে তার কাছেও এ তথ্য প্রকাশ করা যাবে না বলে মন্তব্য করেছেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।
রাজধানীর এক হোটেলে আয়োজিত ‘ইউএস রেসিপ্রোকাল ট্যারিফ: কোন পথে বাংলাদেশ’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় অংশ নিয়ে গতকাল রোববার তিনি এ কথা বলেন।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্ক ইস্যুতে সরকারের চুক্তির উদ্দেশে বেপ্রিয় বলেন, র্কমাক্ত জায়গায় নিষ্পাপ সরকার নিয়ে এগোচ্ছি। এমন নির্দোষ আর নিষ্পাপ সরকার আমি আগে দেখিনি।
তিনি বলেন, কোনো দুর্বল এবং অসমন্বিত সরকারের যি রাজনৈতিক বৈধতা না থাকে, তাহলে তাদের সফলভাবে দর-কষাকষি করার নজির বিরল।
দেবপ্রিয় মনে করেন, ট্রাম্প প্রশাসনের এ নতুন শুল্কনীতি দীঘমেয়াদে কার্যকর হবে না। তা সত্ত্বেও এ উদ্যোগকে তিনি বাংলাদেশের জন্য একটি ‘ওয়েক আপ কল’ হিসেবে দেখছেন।
তিনি আরও বলেন, বাংলাশে আগামী দিনে কোথায় যাবে, তা নির্ধারণে মার্কিন নতুন শুল্ক ব্যবস্থা আমাদের জন্য একটি সতর্কবার্তা। বিশেষ করে পণ্য বহুমুখীকরণ, উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি এবং প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা তৈরির ক্ষেত্রে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত।
আগের সরকারের সঙ্গে বর্তমান সরকারের একটি পার্থক্য তুলে ধরেন দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, আমি একাধিক সরকারের সঙ্গে কাজ করেছি। আগের সরকারের সমস্যা ছিল তারা হয়তো কোনো বিষয়ে জানত না। এরপর আমরা কিছু নিয়ে গেলে ওনারা বলতেন, ও তাই নাকি? আচ্ছা আমাদের পরামর্শগুলো দেন, বাস্তবায়ন করি। আর এখনকার সরকারের কাছে গেলে তারা বলে, এগুলো তো সব জানি। এসব নিয়ে আপনারা কোনো চিন্তা করবেন না।
যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক আরোপের বিষয়ে সরকারের নেয়া পদক্ষেপে হতাশার কথা জানিয়েছেন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি ও হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে আজাদ। তিনি বলেছেন, আমার ৪০ বছরের ব্যবসা জীবনে এমন সংকট আর আসেনি।
মার্কিন শুল্কের বিষয়ে সরকারের নেয়া উদ্যোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা যাদের কাছে রপ্তানি করি, এমন বড় বড় ব্র্যান্ড যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সঙ্গে চলমান ট্যারিফ নেগোসিয়েশনের বিষয়ে খোঁজখবর রাখছে এবং লবিং করছে। তারা আমাদের জানিয়েছে, তোমরা (বাংলাদেশ) ভালো রেজাল্ট পাবে বলে মনে হচ্ছে না। যুক্তরাষ্ট্র থেকে হতাশার কথা আসছে।
এ কে আজাদ আরও বলেন, আমরা যখন সরকারের সঙ্গে কথা বললাম, লবিস্ট নিয়োগ করার জন্য বললাম, প্রধান উপদেষ্টার অফিসে মেসেজ পাঠালাম, আমাদের এক পর্যায়ে বলা হলো ৯৫ শতাংশ সমাধান হয়ে গেছে। গতকাল রোববার আমাকে একটা ব্র্যান্ডের পক্ষ থেকে মেইল পাঠানো হয়েছে। আমাকে বলা হয়েছে, আগামী ১ তারিখ থেকে যে প্রোডাক্ট তৈরি করা হবে, সেখানে নতুন ট্যারিফ থাকলে আমি (সরবরাহকারী) কত শতাংশ শেয়ার করব, সেটি তাকে জানানোর জন্য। ওই ক্রেতার কাছে আমার রপ্তানি ৮০ মিলিয়ন ডলার। সেখানে আমি ইনকাম করি ১ শমিক ৩৭ মিলিয়ন ডলার। ৮০ মিলিয়ন ডলার থেকে যি ৩৫ শতাংশ শেয়ার করি, তাহলে আমার কী থাকবে?
সরকারের উদ্দেশে এ কে আজাদ বলেন, সাত-আট মাস পরে আপনারা চলে যাবেন, আমরা কোথায় যাব? আমারে কার কাছে ফেলে যাবেন? সবার ধারণা, মাথার ওপর একজন আছেন- তিনি ফুঁ দেবেন, আর সমাধান হয়ে যাবে।
সভায় বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান বলেন, বাংলাদেশের রকষাকষির অভিজ্ঞতা নেই। পাল্টা শুল্ক বিষয়ে অন্য দেশের তুলনায় আমাদের দর কষাকষি হতাশ করেছে। নন-ডিসক্লোজার অ্যাগ্রিমেন্ট (এনডিএ) থাকা সত্ত্বেও মালয়েশিয়া জটিল ইস্যুগুলো নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশীজনের সঙ্গে বৈঠক করছে।