তাপস কুমার, নাটোর : মনোমুগ্ধকর রং আর রসে টইটুম্বুর ‘রং বিলাস’ আখ চাষ করে নাটোরের কৃষকরা এখন অনেক লাভবান হচ্ছেন। চিবিয়ে খাওয়ার উপযোগী এই আখটি দ্রুতই চলনবিল এলাকার অন্যতম অর্থকরী ফসল হিসেবে পরিচিতি পাচ্ছে। চলতি বছর জেলায় ১০৯ হেক্টর জমিতে ‘রং বিলাস’ আখ চাষ হয়েছে, যা থেকে এক হাজার ৫০ টন রস পাওয়ার আশা করা হচ্ছে।
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, আবাদকৃত ১০৯ হেক্টর জমির মধ্যে সর্বোচ্চ ৬১ হেক্টর জমি চাষ হয়েছে বড়াইগ্রাম উপজেলায়। এছাড়া গুরুদাসপুর উপজেলায় ৪৫ হেক্টর এবং সিংড়া উপজেলায় তিন হেক্টর জমিতে এই আখ আবাদ হয়েছে। অর্থাৎ, চলনবিল অধ্যুষিত তিনটি উপজেলাতেই এর চাষ হচ্ছে, যা ইঙ্গিত দেয় যে এই অঞ্চলের মাটি ও আবহাওয়া এই আখ চাষের জন্য দারুণ উপযোগী।
বড়াইগ্রাম উপজেলার মহিষভাঙা গ্রামের কৃষক গোলাম রসুল ৩০ বছর ধরে ‘রং বিলাস’ আখ আবাদ করছেন। তিনি এই চাষের লাভজনক দিক তুলে ধরে বলেন, এ বছর তিন বিঘা জমিতে আখ চাষ করে তিনি দুই বিঘার আখ বিক্রি করেছেন চার লাখ টাকায়। নাটোরের বাইরের ব্যাপারীরা সরাসরি জমি থেকেই আখ কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। জমিতে ১০০ আখ বিক্রি হচ্ছে আড়াই হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকায়, আর খুচরা বাজারে এর দাম ৩০ থেকে ৭০ টাকা পর্যন্ত। কৃষক রবিউল করিম আখ চাষের খরচ কমানোর একটি দারুণ পদ্ধতি জানান। তিনি বলেন, জমিতে চারা রোপণের পর সাথি ফসল হিসেবে আমরা রসুন অথবা পেঁয়াজ আবাদ করি। এক বিঘা জমিতে ২৫ থেকে ৩০ মণ রসুন পাওয়া যায়। সাথি ফসল চাষ করলে আখের আবাদের খরচ উঠে আসে। ফলে আখের বিক্রয় মূল্যের সবটাই মুনাফা। সাথি ফসলের সঙ্গে আখ চাষ করলে বিঘাপ্রতি দুই লাখ টাকা মুনাফা পাওয়া সম্ভব। তিনি জানান, অনেক কৃষক আবার রসুন বা পেঁয়াজের পাশাপাশি মুগ ডালও সাথি ফসল হিসেবে চাষ করছেন।
বড়াইগ্রাম উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সজীব আল মারুফ নিশ্চিত করেন, ‘রং বিলাস’ আখ চাষের মাধ্যমে এই কৃষি বিভাগ এই আখ চাষের সম্প্রসারণে কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে।
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক মো. হাবিবুল ইসলাম খান মনে করেন, এই আখ চাষ করে চলনবিল এলাকার কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন এবং অদূর ভবিষ্যতে চিবিয়ে খাওয়ার এই আখ এলাকার অন্যতম অর্থকরী ফসলে পরিণত হতে যাচ্ছে। লাভবান হওয়ার কারণে আদর্শ কৃষক গোলাম রসুল এ বছর দুই বিঘার আখ আগাম বিক্রি করে সেই জমিতে সুগন্ধি জাতের রোপা আমন আবাদ করেছেন। যদিও জমিতে আখ প্রায় ১০ মাস ধরে থাকে, তিনি পরীক্ষামূলকভাবে বিরতির দুই মাসে জমিতে ধান রোপণ করেছেন। এই পদ্ধতি সফল হলে কৃষকরা এক জমিতে বছরে একাধিক ফসল ফলানোর সুযোগ পাবেন।
প্রিন্ট করুন






Discussion about this post