প্রতিনিধি, নারায়ণগঞ্জ : নারায়ণগঞ্জে দ্রুত নিচে নেমে যাচ্ছে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্য বলছে, সদর উপজেলার গোগনগর, কুতুবপুর, ফতুল্লা, রূপগঞ্জ ও সোনারগাঁওয়ে যে হারে পানি নিচে নামছে তা উদ্বেগজনক। ২০১০ সালে গোগনগরে ৫১ ফুট গভীরে মিললেও ২০২৫ সালে সেটি নেমে গেছে ১৫১ ফুটের নিচে। মাত্র ১০ বছরে ভূগর্ভস্থ পানি কমেছে ১০০ ফুটেরও বেশি।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, শিল্পপ্রধান ইউনিয়নগুলোতে পানির স্তর সবচেয়ে দ্রুত নিচে নেমে যাচ্ছে। ফতুল্লা, এনায়েতনগর ও কাশিপুরে গত এক বছরে পানির স্তর গড়ে ৮ থেকে ১০ ফুট নেমেছে। গত বছর এনায়েতনগরে যেখানে ১৭৫ ফুট গভীরে সুপেয় পানি মিলত, এবছর তা মিলছে ১৮৮ ফুটে। ফতুল্লায় ১৯০ ফুট থেকে নেমে এখন পানির স্তর ১৯৮ ফুট। কাশিপুরে এক বছরে ৬ ফুট কমে পানি মিলছে ১৭১ ফুট গভীরে।
এদিকে, তুলনামূলকভাবে আবাসিক গোগনগর, আলীরটেক ও বক্তাবলীতেও পানি কমেছে ১ থেকে ২ ফুট। গোগনগরে এখন সুপেয় পানি মিলছে ১৪২ ফুট গভীরে, বক্তাবলী ও আলীরটেকে ১০৬ ফুটে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক এইচ এম রাশেদ বলেন, “২৩০ ফুট গভীরে গিয়ে এখন সুপেয় পানি মিলছে। চলতি বছরেই তা ২৪০ ফুটে নেমে যাবে।” তাঁর দাবি, নদ-নদীর পানি দূষিত হওয়ায় পরিশোধন করেও পানির চাহিদা মেটাতে পারছে না কর্তৃপক্ষ। ফলে মানুষ বাধ্য হয়ে একমাত্র বিকল্প ভূগর্ভস্থ পানির দিকেই ঝুঁকছে। এতে পানির স্তর প্রতি বছরই গভীরে চলে যাচ্ছে।
পানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডাইং ও বস্ত্রশিল্পের অতিরিক্ত পানির চাহিদাই এই সংকট বাড়িয়ে তুলেছে। বাংলাদেশ পরিবেশবাদী আন্দোলন–বাপার সভাপতি এবি সিদ্দিকের ভাষায়, “একটি ডাইং কারখানা একদিনে যত ভূগর্ভস্থ পানি তোলে, তা দিয়ে শহরের অর্ধেক মানুষের চাহিদা মিটে যায়। ৯৯ শতাংশ পানি তুলে নেয় ডাইং কারখানাগুলো। সরকার এ বিষয়ে কঠোর না হলে ভূগর্ভে পানি শূন্য হয়ে যাবে।”
শুধু পানি কমে যাওয়া নয়, এলাকাজুড়ে দেখা দিচ্ছে নানা বিপত্তি। শহরতলীর অনেক বাড়িঘরে স্থাপন করা সাবমার্সিবল পাম্প পানির নাগাল না পাওয়ায় নিয়মিত বিকল হয়ে যাচ্ছে। ফতুল্লার পাম্প–টেকনিশিয়ান ইশতিয়াক বলেন, “পানি না পেয়ে মটর জ্বলে যাচ্ছে। গত দুই বছরে কয়েকশ মটর মেরামত করতে হয়েছে।”
বর্তমানে শহরতলীতে ৫০০ ফুট গভীর পর্যন্ত নলকূপ স্থাপন করা হয়। তবে সেখানেও পানি মিলছে ২৫০ ফুট নিচে। অর্থাৎ নলকূপ যত গভীর হচ্ছে, পানি আরও গভীরে সরে যাচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভূগর্ভস্থ পানির ওপর চাপ কমাতে হলে এখনই উপরি ভাগের পানির ব্যবহার বাড়াতে হবে। কিন্তু খাল–বিল–পুকুরের পানি দূষণের কারণে তা ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ড. মুহম্মদ সোহরাব আলী সম্প্রতি এক সেমিনারে বলেন, “শিল্পকারখানার তরল বর্জ্য শোধন ছাড়া ভূগর্ভের পানিকে বাঁচানো সম্ভব নয়। আগামী দুই বছরের মধ্যে কারখানাগুলোর বর্জ্য শূন্যে নামাতে না পারলে প্রয়োজনে কারখানা বন্ধের সিদ্ধান্ত নেবে সরকার।”
গার্মেন্টস মালিকরা সরকারি পিপিপি উদ্যোগে সেন্ট্রাল ইটিপি স্থাপনের দাবি জানিয়ে বলেছেন, এককভাবে ইটিপি নির্মাণ অনেক প্রতিষ্ঠানের পক্ষে অসম্ভব।
পরিবেশ অধিদপ্তরের ঢাকা আঞ্চলিক অফিস আয়োজিত এই সেমিনারটি হয় গত ২৬ এপ্রিল নগরীর চুনকা মিলনায়তনে।
প্রিন্ট করুন











Discussion about this post