ইমতিয়াজ আহমেদ, নারায়ণগঞ্জ : চলতি অর্থবছরে (২০২৫-২৬) নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের (নাসিক) তিন অঞ্চলে হোল্ডিং ট্যাক্স (কর) বকেয়া পড়েছে ৯৩ কোটি ৮০ লাখ টাকা। অক্টোবর পর্যন্ত কর আদায় হয়েছে ২৩ কোটি ৫৬ লাখ ৭৪ হাজার টাকা। আদায়ের হার বেড়েছে ৩২.৫ শতাংশ। গত অর্থবছরে কর আদায়ের হার ছিল ২৪ শতাংশ। সিদ্ধিরগঞ্জ অঞ্চলে আদায় কম হওয়ায় নাসিকের কর আদায়ের হার কম ছিল। এবার ওই অঞ্চল ভালো করছে।
অক্টোবরে নাসিকের কর আদায়ের গ্রাফটা ঊর্ধমুখী ছিল। আর সেপ্টেম্বর মাসে চিত্রটা ছিল স্বস্তিদায়ক। প্রতিষ্ঠিানটির কর্মকর্তা-কর্মচারী রদবদলের ধাক্কা কাটিয়ে উঠেছে ট্যাক্স শাখা। এবার নাসিকের তিন অঞ্চলের মধ্যে শুধু সিদ্ধিরগঞ্জ অঞ্চলের কর আদায়ের হার ভালো। গত বছর ওই অঞ্চলে এর উল্টো চিত্র ছিল। সংশ্লিষ্টরা বলছেন অন্যান্য বিভাগের মতো ট্যাক্স বিভাগে রদবদলের কারণেই এমনটা হয়েছিল। যারা নতুন নিয়োগ পেয়েছিলেন তাদের অনেকেই এলাকা চিনতেন না। সময়মতো বিল ও নোটিশ পৌঁছাতে পারতেন না। এতে আগের কর্মস্থলের অত্যন্ত দক্ষ কর্মীটিও সিদ্ধিরগঞ্জে বদলি হওয়ার পর হোল্ডিং চিনতেই দিন পার হয়ে যেত। নতুন এলাকায় ট্যাক্স হোল্ডারদের সঙ্গে পরিচিত হতেও সময় লেগেছে। সব মিলিয়ে এবার ট্যাক্স আদায়ের চিত্রটা ঊর্ধ্বমুখী। সিদ্ধিরগঞ্জের কর বিভাগের লোকজনের সঙ্গে আলাপকালে তারা এভাবেই বিষয়টির ব্যাখ্যা দেন।
জানা গেছে, একসঙ্গে অধিক পরিমাণে বকেয়া কর পরিশোধ করলে ১০ পারসেন্ট কর মওকুফ সুবিধা চালু করেছে নাসিক কর্তৃপক্ষ। গত বছর গ্রাহকরা এ বছরের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত কর পরিশোধ করতে পেরেছেন। এবারও সুবিধা ছিল। ১০ শতাংশ রিবেট সুবিধার ঘোষণা ছিল নাসিক কর্তৃপক্ষের। একজন গ্রাহককে কর পরিশোধে উৎসাহিত করতে নাসিকের রিবেট সুবিধা ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
চলতি বছরের অক্টোবর মাসে নাসিকের তিন অঞ্চলে বকেয়া করের পরিমাণ ছিল ৯৩ কোটি ৮০ লাখ টাকা। নাসিকের তিন অঞ্চলে (সিদ্ধিরগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ সদর ও কদমরসুল) আদায় হয়েছে মোট ২৩ কোটি ৫৬ লাখ ৭৪ হাজার টাকা। সিদ্ধিরগঞ্জ অঞ্চলে বকেয়া কর আদায় হয়েছে ১৫ কোটি ৫০ লাখ টাকা। নারায়ণগঞ্জ সদর অঞ্চলে আদায় হয়েছে ৭ কোটি ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা ও কদমরসুল অঞ্চলে আদায় হয়েছে ৭ কোটি ১ লাখ টাকা।
কর বিভাগের কর্মকর্তারা আশা করছেন, চলতি অর্থবছরে বকেয়া কর আদায়ের টার্গেট পূরণ হবে। সে মোতাবেক সব ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। যথাসময়ে বিল তৈরি করে গ্রাহকদের মধ্যে বিলি করা হয়েছে। কর পরিশোধে গড়িমসি করলে সতর্ক নোটিশ করা হতে পারে। শেষ স্তরে আসতে পারে ক্রোক নোটিশ।
জানা গেছে, গত অর্থবছরে (২০২৪-২৫) নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের তিন অঞ্চলে কর আদায়ের টার্গেট ছিল ৯৫ কোটি টাকা। আগস্টে ৫ কোটি টাকা কর আদায় সম্পন্ন হয়েছে। সেপ্টেম্বর মাসে বকেয়া কর আদায় হয়েছে ১৩ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। কর আদায় শাখায় জনবল সমস্যা আছে। অধিকাংশ ট্যাক্স কালেক্টর বা কর আদায়কারী মাস্টার রোলের কর্মচারী। স্থায়ী পদের কালেক্টররা কাজ করে অন্য শাখায়। কর আদায়ে দক্ষ ও স্থায়ী কর্মচারীদের মধ্যে অনেকে ভিন্ন শাখায় কাজ করে। সিদ্ধিরগঞ্জে এসেসর হিসেবে কাজ করে ট্যাক্স কালেক্টর জাকির হোসেন আর সদরে অ্যাকাউন্ট্যান্ট
হিসেবে কাজ করে দোলন। দুজনেই তুখোর ট্যাক্স কালেক্টর। কিন্তু কর্তৃপক্ষের খামখেয়ালিতে তারা ভিন্ন শাখায় কাজ করছেন। সিদ্ধিরগঞ্জে কর আদায়কারী হিসেবে কাজ করেন মাস্টাররোলের মহিলা কর্মচারীরা। ফলে বর্তমানে কিছুটা স্থিতিশীলতা ফিরে এসেছে। কিন্তু চলতি অর্থবছরে সিদ্ধিরগঞ্জে বকেয়া কর আদায়ের গতি কম।
সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকাবাসী জানান, কর আদায়ের কাজে মহিলাদের নিয়োগ করা সঠিক নয়। মহিলারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিল বণ্টন করতে অনেক হয়রানির শিকার হন। যদিও তারা চাকরি রক্ষার্থে মুখ ফুটে কিছুই বলেন না। স্থায়ী কর আদায়কারীদের অন্য শাখায় কাজ না করিয়ে কর শাখায় ফিরিয়ে আনলে কর আদায় কার্যক্রমের গতি আরও বাড়বে বলে মত দেন তারা।
প্রিন্ট করুন









Discussion about this post